হুঙ্কার: ডে ব্রুইনকে ফেরানোর উচ্ছ্বাস ঋদ্ধিমানের। এএফপি
পুণের গাহুঞ্জে স্টেডিয়াম শূন্য হাতে ফেরায় না ঋদ্ধিমান সাহাকে। আড়াই বছর আগে এখানেই শূন্যে শরীর ভাসিয়ে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ও’কিফের ক্যাচ নিয়েছিলেন। মুগ্ধ রোহিত শর্মা তাঁর নাম রেখেছিলেন, ‘ফ্লাইং সাহা’।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তনের সিরিজে তাঁর দস্তানা যেন আরও বিশ্বস্ত। আজ ম্যাচের চতুর্থ দিনে দু’টি অবিশ্বাস্য ক্যাচে বিপক্ষের মেরুদণ্ড ভেঙে দিলেন বাংলার উইকেটকিপার। এর বাইরেও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর শিকার আরও এক ব্যাটসম্যান। প্রায় ২০ মাস চোটের জন্য মাঠের বাইরে থাকার পরে ঘুরে দাঁড়ানোর সিরিজে জ্বলে উঠলেন ময়দানের ‘পাপালি’।
আর সেই অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের মঞ্চে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে রীতিমতো সাড়া পড়ে গিয়েছে তাঁকে নিয়ে। ‘ঋদ্ধিমান সুপারম্যান’ বলে ভক্তেরা প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন বঙ্গজ উইকেটকিপারকে। প্রাক্তন ক্রিকেটার ভি ভি এস লক্ষ্মণের টুইট, ‘‘ঋদ্ধিমানের উইকেটকিপিং দেখে শিহরিত। অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিয়েছে।’’ বলিউডের অভিনেতা সুনীল শেট্টির টুইট, ‘‘তোমার শুধু সুপারম্যানের মতো একটা লাল ‘কেপ’ চাই। দুরন্ত কিপিং সুপারম্যান সাহা।’’
রবিবারের গাহুঞ্জে স্টেডিয়াম যেন ঋদ্ধিরই ঘরের মাঠ। তাঁকে অভ্যর্থনায় ভরিয়ে দিয়েছেন দর্শকেরা। তৃতীয় দিন উমেশ যাদবের বলে ডান প্রান্তে উড়ে থেউনিস দে ব্রুইনের ক্যাচ নিয়েছিলেন। রবিবার সেই দে ব্রুইন ফের ঋদ্ধির শিকার। লেগ স্টাম্পের বল নিশ্চিন্তে গ্লান্স করে চার রান কুড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন তরুণ ব্যাটসম্যান। ভাবতেই পারেননি, সেই শটে আউট হওয়া সম্ভব। কিন্তু ঋদ্ধি যে উইকেটের পিছনে অতিমানব। শূন্যে উড়ে বাঁ-প্রান্তে ঝাঁপিয়ে এক হাতে তালুবন্দি করেন দে ব্রুইনকে। বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে শিকার তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। প্রায় কাঁধে উঠে পড়েন অধিনায়ক বিরাট কোহালি। তাঁর সই করা টিম লিস্টেই যে ঋদ্ধির প্রত্যাবর্তনের ঠিকানা লেখা ছিল। সেই তৃপ্তির ভাষাই ফুটে উঠল অধিনায়কের মুখে। ঠিক সেই সময়ে ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে ঋদ্ধিকে দেখে সুনীল গাওস্করের মনে পড়ল নিজের প্রাক্তন সতীর্থ সৈয়দ কিরমানির কথা। গাওস্কর বললেন, ‘‘লেগ সাইডে কিরমানিও এমন দুর্ধর্ষ ক্যাচ নিত।’’
এখানেই কিন্তু শেষ নয়। রবিবারের ‘ঋদ্ধি শো’-এর প্রথম ঘটনাটি দিনের ষষ্ঠ ওভারের। দ্বিতীয় মুহূর্ত এল ম্যাচের ২৪তম ওভারে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বল ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লেগে নিচু হয়ে গিয়েছিল। বল মাটিতে পড়ার সময়ে ডান হাতের আঙুল দিয়ে ঋদ্ধি তা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেন। তাতে অবশ্য বল তাঁর দখলে এল না। তখন বল আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার সময়েই সামনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেললেন ‘ফ্লাইং সাহা’। দক্ষিণ আফ্রিকার লড়াই করার সমস্ত দরজা যেন সেখানেই বন্ধ হয়ে গেল।
ঋদ্ধির সামনে যে ফের এমন দিন আসবে, তা কখনও ভাবতে পেরেছিলেন? কাঁধে অস্ত্রোপচার হওয়ার পরে বহু দিন মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল। ৩৩ বছর বয়সি কিপারের পক্ষে সেই চোট সারিয়ে মাঠে দাপানো ছিল যেন কঠিনতম প্রচেষ্টা। তারই মধ্যে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় সেঞ্চুরি করে বাংলার উইকেটকিপারকে বেশ চাপেই ফেলে দিয়েছিলেন ঋষভ পন্থ। তবুও থামানো গেল না ঋদ্ধিকে। এমন রূপেই ফিরলেন যে, চোট ছাড়া এখন প্রথম একাদশ থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া আর সম্ভব নয়।
কিরমানিও সে বিষয়ে আশ্বস্ত। প্রাক্তন উইকেটকিপার বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘লাল বলের ক্রিকেটে ঋদ্ধি সব সময়ে প্রথম পছন্দ। ও যে বিশ্বের সেরা কিপার, তা এ দিনের পরে আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গেল। অসাধারণ রিফ্লেক্স।’’ আরও যোগ করলেন, ‘‘এক জন কিপার সেরা হয় তার অনুমান ক্ষমতার জন্য। ঋদ্ধির মতো অনুমান ক্ষমতা বর্তমান ক্রিকেটে কারও আছে বলে মনে হয় না।’’
ঋদ্ধির প্রশংসা শোনা গেল কিরণ মোরের গলাতেও। এক সময়ে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ঋদ্ধির ট্রেনার ছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় কিপার। তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এ ধরনের ক্যাচ যে তাঁর কাছে রকেট সায়েন্সের মতো কঠিন বিষয় নয়, তা জানতেন। তবে ঋদ্ধির এই কীর্তিতে ঋষভ পন্থও যে উপকৃত হবেন, তা জানিয়ে দিলেন মোরে।
গুজরাত থেকে ফোনে মোরে বললেন, ‘‘ঋদ্ধির মতো কিপার থাকলে বোলারদের আত্মবিশ্বাস এমনিতেই দ্বিগুণ হয়ে যায়। ওর হাত থেকে বল ফস্কাতে দেখি না। কী অসাধারণ গ্লাভ্স প্লেসিং।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ঋদ্ধির এই পারফরম্যান্সে ভারতীয় দল যে রকম উপকৃত হচ্ছে, ততটাই উপকার হবে ঋষভ পন্থের। তরুণ কিপার অনেক কিছু শিখতে পারবে। আর ঋদ্ধিও শেখাতে ভালবাসে। আমি নিশ্চিত, ঋষভ ওর থেকে অনেক পরামর্শ পায়।’’
ঋদ্ধির দু’টি ক্যাচকে কত নম্বর দেবেন? মোরের উত্তর, ‘‘বিশ্বের সেরা কিপারের থেকে এ ধরনের ক্যাচ সব সময়েই আশা করি। ওকে যখন প্র্যাক্টিস করিয়েছি, দেখেছি পরিশ্রম করতে কখনও পিছিয়ে যায় না। সারা দিন যদি ওকে বলা হয় ‘কিপিং করো’, সেটাই করে যাবে। ওকে প্রশিক্ষণ দিতে পেরে আমি গর্বিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy