সুনীল গাওস্কর।—ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশে এলে নেট প্র্যাক্টিসের জন্য দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার জোগাড় করা উচিত বলে মনে করেন সুনীল গাওস্কর। যাতে সেই সব বোলারকে খেলে এখানকার বাউন্সের সঙ্গে তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা।
শনিবার সুপারস্পোর্ট পার্কে কমেন্ট্রি করার ফাঁকে ঘরোয়া আলোচনায় গাওস্কর বলছিলেন, কাগিসো রাবাডা এবং মর্নি মর্কেল— দু’জনেই বেশ লম্বা। অনেক উপর থেকে তাঁরা বল ছাড়েন। একেই দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে বাউন্স বেশি থাকে। তার উপর রাবাডা বা মর্কেল বেশি লম্বা বলে তাঁরা বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিতে পারেন। তাই দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে তাঁদের মতো ফাস্ট বোলারদের খেলতে গেলে বিশেষ ভাবে তৈরি হওয়াও দরকার। সানির পরামর্শ, বিদেশে গেলে সে দেশের বোলিং আক্রমণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থানীয় ফাস্ট বোলার আয়োজন করো। বিদেশের কঠিন পরিবেশে সফল হওয়ার সেটাই সঠিক পথ। সে দেশের সমস্ত কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে নেওয়া দরকার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে অগ্নিযুগের ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে হেলমেট ছাড়া খেলে সফল হওয়া কিংবদন্তি বিলক্ষণ জানেন, বিদেশ সফরে প্রস্তুতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এখনও প্রস্তুতি নিয়ে কতটা গভীরে ভাবেন, বোঝা গেল যখন বললেন, ম্যাচে যে রকম বোলারকে খেলতে হবে সেই অনুযায়ী প্র্যাক্টিস বোলারও হতে হবে। ভারতের বোলার কখনও বিদেশি প্রতিপক্ষের অনুভূতিটাই দিতে পারবে না। তা ছাড়া লম্বা পেসারকে খেলতে গেলে প্র্যাক্টিসে বেঁটেখাটো জোরে বোলারকে খেলেও লাভ নেই। অনুশীলনেও লম্বা বোলারকে খেলে তৈরি হতে হবে বলে তিনি মনে করেন। মর্কেল বা রাবাডার হাত এত উপর থেকে আসে যে, সেটার সঙ্গে চোখ সইয়ে নেওয়া দরকার।
নিজের ক্রিকেটজীবনে বরাবর প্রস্তুতিকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন গাওস্কর। দেশের মাঠে ম্যালকম মার্শালের শর্ট পিচ্ড বলে আউট হচ্ছিলেন বলে একবার নেট প্র্যাক্টিসে এক ঘণ্টা ধরে শুধু শর্ট বল মুখের কাছ থেকে, বুকের কাছ থেকে নামানোর অনুশীলন করেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে তিনিও ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলারদের খেলেই তৈরি হতেন বলেও জানালেন। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে তাঁর মুখে চলে এল এক ভবঘুরের মতো ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার। ‘‘গ্যালারিতে ঘুরত খালি পায়ে, শর্টস পরে। ওই খালি পায়ে ছুটে এসেই যা জোরে বল করত, অনেকে খেলতে পারবে না,’’ বলছিলেন মার্শাল-হোল্ডিং, রবার্টস-গার্নারদের দেশে সব চেয়ে সফল ব্যাটসম্যান। লিট্ল মাস্টারের ব্যাটিং দেখে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপূঞ্জে তাঁকে নিয়ে গানও তৈরি করেছিলেন ভক্তরা। তাঁর খালি মাথায় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলাররদের সামলানোর কাহিনি আজও ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা বীরগাথা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে তিনি সব সময় প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। তখন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে প্রস্তুতি ম্যাচ হতো খারাপ পিচে। নিরপেক্ষ আম্পায়ার থাকত না। ফাস্ট বোলাররা ‘নো বল’ করলেও ডাকার কেউ নেই। ক্রিজের মধ্যে ঢুকে এসে দিব্যি আঠেরো গজ থেকে তোপ দাগতেন প্রস্তুতি ম্যাচের ক্যারিবিয়ান বোলাররা। কিন্তু সেই গোলাগুলি সামলানোর মাধ্যমেই টেস্ট সিরিজে হোল্ডিং-মার্শালদের খেলার প্রস্তুতি নিতেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে তখনকার দিনে শুধু পেস ব্যাটারিকে খেললেই হতো না, বাউন্ডারিতে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের উত্তেজক মন্তব্যেরও মোকাবিলা করতে হতো। এক বার যেমন সানি ব্যাট করার সময় মাইকেল হোল্ডিং চারটি বল পর-পর বাউন্সার দিলেন। পঞ্চম বলটা অফস্টাম্পের বাইরে ব্যাটের কাছাকাছি। গাওস্কর জানতেন, এটা লোভ দেখানো বল। বিষাক্ত আউটসুইং আছে এতে। খেলতে গেলেই উইকেটের পিছনে ক্যাচ যাবে। তিনি পা বাড়িয়ে ছেড়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে ক্যারিবিয়ান দর্শকেরা চেঁচিয়ে উঠল, ‘ও মাইকি, গিভ হিম আ বাউন্সার’। অবাক গাওস্কর আর থাকতে পারেননি সে দিন। ব্যাট করার সময় যাঁর মনঃসংযোগ যুগ যুগ ধরে উদাহরণ হিসেবে থেকে গিয়েছে, তিনি সে দিন ঘুরে দাঁড়িয়ে দর্শকদের পাল্টা জিজ্ঞেস না করে পারেননি, ‘‘মাইকির আগের চারটে বল তা হলে কী ছিল?’’
ভুবনেশ্বর কুমার প্রথম একাদশে নেই দেখে কমেন্ট্রিতে বেশ উত্তেজিত ভাবেই সমালোচনা করেছিলেন তিনি। পরে বলছিলেন, ‘‘আগের ম্যাচের সফলতম বোলার। তাকে কী করে বসিয়ে দেওয়া যায়?’’ ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট যে শুকনো পিচ দেখে ভুবনেশ্বরকে খেলাতে চায়নি, সেই যুক্তি তিনি মেনে নিতে নারাজ। ‘‘কেপ টাউনে প্রথম তিন ওভারে তিনটে উইকেট দিয়েছে ভুবনেশ্বর। এ দিন অন্যরা কী করল? কে বলতে পারে, ভুবি থাকলে হয়তো এ দিনও দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনারদের কাজ সহজ হতো না!’’ শিখর ধবন বাদ পড়াতেও তিনি প্রসন্ন নন। ‘‘শিখর নাকি বাউন্স খেলতে পারে না। তা একটা ওভারে বাউন্সার তো দেবে দু’টোই। বাকি চার ধরনের বলও তো খেলতে জানতে হবে,’’ বলে ফেললেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy