Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Stone skipping

‘ব্যাঙবাজি’তেও খেতাব জিতে ‘রংবাজি’ করা যায়! মিলতে পারে খ্যাতিও

ব্যাঙবাজির ইংরেজি নাম ‘স্টোন স্কিপিং’। নিতান্ত সরল একটি খেলা। চ্যাপ্টা আকৃতির পাথর বা খোলামকুচিকে হাতের বিশেষ কায়দায় জলে ছুড়তে হবে, যাতে সেটি ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে এগিয়ে যায়।

আদিকাল থেকে মানুষ এই খেলা খেলে আসছে।

আদিকাল থেকে মানুষ এই খেলা খেলে আসছে। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২২ ১৪:২৮
Share: Save:

খেলতে লাগে কিছু খোলামকুচি আর একটি জলাশয়। তবে জলাশয়টিকে শান্ত হতে হবে। উত্তাল সমুদ্রে বা খরস্রোতা নদীতে হবে না। বাংলায় এ খেলা ‘ব্যাঙবাজি’ নামে অতি-পরিচিত। পাড়ায় বা গ্রামে পুকুর আছে, অথচ অলস দুপুরে সেখানে একটু চ্যাপ্টা গোছের খোলামকুচি দিয়ে ব্যাঙবাজি খেলেননি, এমন বাঙালির সংখ্যা বিরল। কিন্তু এই ব্যাঙবাজিই যে অন্য নামে এক জবরদস্ত প্রতিযোগিতামূলক খেলা, সে খবর বাঙালি তথা ভারতীয় ‘ব্যাঙ-বাজ’রা রাখেন কি?

ব্যাঙবাজির ইংরেজি নাম ‘স্টোন স্কিপিং’। নিতান্ত সরল একটি খেলা। একটি চ্যাপ্টা আকৃতির পাথর বা খোলামকুচিকে হাতের বিশেষ কায়দায় জলে ছুড়তে হবে, যাতে সেটি ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে এগিয়ে যায়। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র জানায়, এখানে জলের ভূমিকা গৌণ, পাথরটি ‘ফ্রিসবি’ (উড়ন্ত চাকতি)-র মতো ভূমিকা পালন করে। ছোড়ার কায়দাটাই আসল।

খেলা যত সরলই হোক না কেন, তাকে ঘিরে উৎসাহ সারা পৃথিবী জুড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজিত হয় স্টোন স্কিপিং প্রতিযোগিতা। সেই সব প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা শুধু পুরস্কারই পান না, তাঁদের নিয়ে শুরু হয় মাতামাতি। তাঁরা স্বক্ষেত্রে রীতিমতো খ্যাতনামী হয়ে ওঠেন।

‘গিনেস বুক অফ রেকর্ডস’-এ স্টোন স্কিপার হিসেবে এই মুহূর্তে যাঁর নাম জ্বলজ্বল করছে, তিনি আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার ক্যামেরন কাউন্টির বাসিন্দা কার্ট স্টেইনার। ৫৭ বছর বয়সি কার্ট ‘দ্য মাউন্টেন ম্যান’ নামে পরিচিত। ছোটবেলা থেকেই তিনি এই খেলা খেলতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাঁর আসক্তি, সেই সঙ্গে বাড়ে দক্ষতাও। গত ২২ বছরে তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার ১৭টি স্টোন স্কিপিং টুর্নামেন্টে জিতেছেন। তাঁর উপরে তথ্যচিত্র পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে।

'ব্যাঙবাজি'-তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কার্ট 'মাউন্টেন ম্যান' স্টেইনার।

'ব্যাঙবাজি'-তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কার্ট 'মাউন্টেন ম্যান' স্টেইনার। ফাইল চিত্র।

সংবাদমাধ্যমে কার্ট জানিয়েছেন, তিনি এই খেলাকে নিছক ছেলেমানুষি বা সময় কাটানোর উপায় হিসাবে দেখেন না। মানসিক স্থৈর্য, একাগ্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্টোন স্কিপিং অনুশীলনকারীকে এক রকমের প্রশান্তিও দেয়। প্রকৃতির মাঝখানে স্থির জলাশয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আধুনিক জীবনে বিপর্যস্ত মানুষ হাতে মসৃণ পাথরখণ্ড নিয়ে একাগ্র হতে হতে বেরিয়ে আসতে পারেন প্রাত্যহিকের গ্লানি থেকে, কার্ট মনেপ্রাণে এ কথা বিশ্বাস করেন।

ইতিহাস জানাচ্ছে, এই খেলা অতি প্রাচীন। অতলান্তিকের দুই পারেই এ খেলার চল রয়েছে। তবে দু’জায়গায় এর মাহাত্ম্য দু’রকম। ইউরোপে এই খেলায় দেখা হয় লাফাতে লাফাতে পাথরখণ্ড কতদূর গেল। ব্রিটেনে এই খেলাকে ‘স্কিমিং’ বলা হয়। কিন্তু আমেরিকায় স্টোন স্কিপিং-এ গোনা হয় লাফের সংখ্যা। কার্ট বাইশ বার ‘স্কিপ’ করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। আর ইউরোপে স্কটল্যান্ডের ডওগি আইজ্যাকস ৩৯৯ ফুট দীর্ঘ স্কিমিং-এর রেকর্ড গড়ে রেখেছেন।

ইতিহাস বলছে, প্রাচীন গ্রিসেও নাকি খেলা হত ব্যাঙবাজি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু কাল ধরেই এই খেলা হয়ে আসছে। আজও স্কটল্যান্ড থেকে জাপান পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে বিভিন্ন নামে এই খেলা চালু। তবে স্টোন স্কিপিং বা স্কিমিং নিয়ে প্রতিযোগিতা সম্ভবত ইউরোপ আর আমেরিকাতেই জনপ্রিয়। ১৯৯৭ থেকে ওয়ার্ল্ড স্টোন স্কিমিং চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্কটল্যান্ডে। এখানে ৩ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের একটি পাথরের চাকতিকে অন্তত দু’বার লাফ খাইয়ে যতদূর সম্ভব নিয়ে যেতে হয়। ২০২০ থেকে ২০২২ এই প্রতিযোগিতা অতিমারির কারণে বন্ধ ছিল। ২০২৩-এর সেপ্টেম্বরে আবার শুরু হবে। ইউরোপে আবার মেয়েদের জন্য আলাদা স্কিমিং প্রতিযোগিতাও আয়োজিত হয়।

ব্যাঙবাজিকে ভারতীয়রা তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখলেনই না।

ব্যাঙবাজিকে ভারতীয়রা তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখলেনই না। ফাইল চিত্র।

অনলাইন বিপণিতে একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে, রীতিমতো ভাল দামে বিক্রি হচ্ছে স্কিপিং-এর উপযোগী পাথরখণ্ড। রংবেরঙের সেই সব পাথরের ছবি দেখে সেগুলিকে জলে ফেলতে অবশ্য মন না-ও চাইতে পারে অনেকের।

অনলাইনেই হোক বা অফলাইনে, স্কিপিং স্টোনের বেসাতি পশ্চিমেই জমজমাট। ভারতে ব্যাঙবাজি নিয়ে তেমন ‘সিরিয়াস’ মাথাব্যথা কারও রয়েছে বলে জানা যায় না। আর সব থেকে বড় কথা, ভারতে স্কিপিং-এর উপযোগী চ্যাপ্টা পাথর খুঁজে তা নিয়ে খেলাধুলো করার বিশেষ প্রয়োজনই নেই। কারণ মাটির ভাঁড় বা খুড়ির তলার অংশ দিয়েই পাড়ার পুকুরে নিরালা দুপুরে দেদার ব্যাঙবাজি এ দেশের মানুষ আজও খেলে চলেছেন, ভবিষ্যতেও খেলে যাবেন। কিন্তু এ দেশে তা নিয়ে বড় একটা মাথা ঘামানোর অবকাশ নেই। সম্ভবত খোলামকুচির মতো ‘তুচ্ছ’ এক ব্যাপার এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বলেই। এই সব ‘তুচ্ছতা’-র ঊর্ধ্বে উঠে যদি এ দেশের ‘ব্যাঙ-বাজ’রা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কদম রাখেন, তো দু’চারটে সোনা-রুপো এ দেশের কপালে জুটলেও জুটে যেতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Stone skipping Game Guiness Book of World Records
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy