Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বৃষ্টি আর মিডল অর্ডারে কে কে হার

গৌতম গম্ভীর দোষটা ঠিক কাকে দেবেন? কেকেআর সমর্থকরা বলতে পারেন, ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়ম। যে দিন থেকে ক্রিকেটবিশ্বে আবির্ভাব ঘটেছে এমন আশ্চর্য ফাঁসের, বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে বরাবর। রান তাড়া করতে নেমে টিম অসহায় ভাবে আবিষ্কার করেছে, সহজ লক্ষ্যও উঠে বসেছে বিপদসঙ্কুল গিরিশৃঙ্গে। স্রেফ বৃষ্টির কোপে নিয়মের কাটাকুটিতে। বলা হয়েছে, টি টোয়েন্টি বা ওয়ান ডে ক্রিকেটের সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে বৃষ্টির ন্যূনতম সম্ভাবনাতেও আগে ব্যাট করে নাও। কারণ মাঝরাস্তায় যদি নামে অঝোরে, তুমি সোজা অদ্ভুত নিয়মের খপ্পরে। পোশাকি নাম ডাকওয়ার্থ-লুইস ঠিকই, কিন্তু আসলে দ্বিতীয় ব্যাটকারী টিমের মৃত্যুদূত। বিরানব্বই বিশ্বকাপে যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা দেখেছিল জেতা ম্যাচে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক বলে বাইশ!

রাসেল বিদায়ে বিশাখাপত্তনমে সুনিশ্চিত করল নাইটদের হার।

রাসেল বিদায়ে বিশাখাপত্তনমে সুনিশ্চিত করল নাইটদের হার।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
বিশাখাপত্তনম শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪২
Share: Save:

গৌতম গম্ভীর দোষটা ঠিক কাকে দেবেন?

কেকেআর সমর্থকরা বলতে পারেন, ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়ম। যে দিন থেকে ক্রিকেটবিশ্বে আবির্ভাব ঘটেছে এমন আশ্চর্য ফাঁসের, বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে বরাবর। রান তাড়া করতে নেমে টিম অসহায় ভাবে আবিষ্কার করেছে, সহজ লক্ষ্যও উঠে বসেছে বিপদসঙ্কুল গিরিশৃঙ্গে। স্রেফ বৃষ্টির কোপে নিয়মের কাটাকুটিতে। বলা হয়েছে, টি টোয়েন্টি বা ওয়ান ডে ক্রিকেটের সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে বৃষ্টির ন্যূনতম সম্ভাবনাতেও আগে ব্যাট করে নাও। কারণ মাঝরাস্তায় যদি নামে অঝোরে, তুমি সোজা অদ্ভুত নিয়মের খপ্পরে। পোশাকি নাম ডাকওয়ার্থ-লুইস ঠিকই, কিন্তু আসলে দ্বিতীয় ব্যাটকারী টিমের মৃত্যুদূত। বিরানব্বই বিশ্বকাপে যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা দেখেছিল জেতা ম্যাচে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক বলে বাইশ!

কিন্তু কেকেআর ক্যাপ্টেন ডাকওয়ার্থ আর লুইস সাহেবদের কতটা দুষতে পারবেন? কোনও সন্দেহ নেই যে, পুরো ওভার খেলা হলে কেকেআরের জিতে বেরোনোর সম্ভাবনা সত্তর শতাংশ থাকত। প্রয়োজনীয় রান রেট ছিল সাড়ে আটের কাছে। কিন্তু সানরাইজার্স ইনিংস শেষ হওয়ার পর বৃষ্টি ম্যাচে যে চল্লিশ মিনিট খেয়ে নিল, তার পরের টার্গেটকেও খুব দূরের নীহারিকা বলা যায় কি? ১৭৭-এর বদলে ১১৮। কুড়ির বদলে বারো ওভার। সাড়ে আটের বদলে দশের আশেপাশে। শুরুতেই দু’টো ক্যাচ পড়েছে। গম্ভীর এবং উথাপ্পার। চরম মারমার— সেটাও শুরু। ওভার পিছু দশের চাপের হিমশৈল ছিল ঠিক, কিন্তু এটাও ঠিক যে সেই হিমশৈলকে গুঁড়িয়ে দেওয়াও যাচ্ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ডেভিড ওয়ার্নার কিন্তু বলে গেলেন আতঙ্কে বরং তাঁরা ভুগছিলেন! আর একটু বৃষ্টি চললে, ম্যাচটা পাঁচ ওভারের দাঁড়ালে, তাঁর হিসেবমতো রানটা দরকার পড়ত তিরিশ! তাঁদেরই ডেথ সার্টিফিকেটে সই করে দিতে পারত ডাকওয়ার্থ-লুইস। মানে, ডাকওয়ার্থ-লুইসকে বড়জোর আংশিক দোষ দেওয়া যাবে। কিন্তু পুরোটা না।

গৌতম গম্ভীর তা হলে দোষটা কাকে দেবেন?

১৭৭ দেওয়া বোলিং— অসম্ভব। কেকেআর হেরে ফিরতে পারে, কিন্তু এটা প্রমাণিত যে টুর্নামেন্ট ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে তর্কাতীত ভাবে সেরা বোলিং নাইটদের। যে টুর্নামেন্টে মিচেল স্টার্ককেও এক ওভারে পনেরো দিতে হয়, সেখানে কেকেআর বোলিং ১৭৭ দিলে তাকে কাঠগড়ায় তোলা মূর্খামি। বরং বুধবারের বিশাখাপত্তনম পরিষ্কার করে দিয়ে গেল যে, সুনীল নারিন না চললেও কেকেআর বোলিংকে হারানো কঠিন। ‘নতুন’ নারিন তাঁর পুরনো ফর্মের ধারেকাছে এখনও নেই। পাঁচটা ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন দু’টো, শেষ দু’টো ম্যাচে চার ওভারে আটত্রিশ করে বেরিয়েছে। কিন্তু তার পরেও কেকেআর গাড্ডায় পড়েনি। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে নামিয়ে দিয়েছে দেড়শোর নীচে। বুধবার ওয়ার্নারের ‘দে ঘুমাকে’ ব্যাটিংয়ের পরেও রানটা দু’শোর আশেপাশে গেল না। মর্নি মর্কেল এ দিনও দু’টো, উমেশ ডেথ ওভারে কৃপণ, এমনকী আন্দ্রে রাসেল দিনের প্রথম ওভার উনিশ নম্বর ওভারে করতে এসেও ছ’রানের বেশি দিলেন না। বরং শিখরকে তুলে নিয়ে গেলেন! কেকেআর বোলিং কেমন, একটা পরিসংখ্যান বোঝাতে যথেষ্ট। ওয়ার্নার আউট হওয়ার সময় ১৪.২ ওভারে স্কোর ১৩০। পরের ৩৪ বলে ৪৬! আর হ্যাঁ, মনে রাখতে হবে বিশাখাপত্তনম বাউন্ডারি কিন্তু বেশ ছোট। এখানে ছক্কাগুলো কিন্তু ইডেনে অবধারিত লোপ্পা।

গৌতম গম্ভীর তা হলে দোষটা দেবেন কাকে?

৫৫ বলে ৯১ রানের ওয়ার্নার-হারিকেনকে? বলা যাবে না। উমেশ যাদবকে ছয় মেরে হাফসেঞ্চুরি করেছেন। জোহান বোথাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ সুইচ হিটে ফেলে দিয়েছেন বিলবোর্ডে। সুনীল নারিন—তাঁকেও ছাড়েননি অস্ট্রেলীয় পকেট ডায়নামো। তিনি থাকতে থাকতে ১১ ওভারে একশো ছুঁয়েছে হায়দরাবাদ। কিন্তু তিনি আউট হওয়ার পর রানটাও আটকে গিয়েছে। ম্যাচে প্রভাবের রিখটার স্কেলে তাই ওই ইনিংসটা ‘গেইল-কম্পন’-এর কাছে রাখা যাবে না।

গৌতম গম্ভীর দোষটা তা হলে কাকে দেবেন?

মিডল অর্ডার ব্যাটিংকে? দিতে পারেন, অবশ্যই দিতে পারেন। আইপিএল আট যত এগোচ্ছে, তত যেন অদৃশ্য একটা বার্তা প্রতিপক্ষদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে— কেকেআরের আসলে দু’টো ব্যাটসম্যান। উপরে অধিনায়ক গম্ভীর। মধ্যভাগে আন্দ্রে রাসেল। এই দুইকে তুলে নিলে চাপে পড়বে নাইট ব্যাটিং। পঞ্জাব ম্যাচে গম্ভীর পারেননি, কেকেআর ৬০-৫ হয়েছে, তার পর রাসেল ম্যাচ বার করে দিয়েছেন। মুম্বই, দিল্লি ম্যাচে গম্ভীর চলেছেন রুদ্রমূর্তিতে, কেকেআরের জয় এসেছে সহজে। অন্ধ্রের সমুদ্র পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দু’জনের এক জনও পারলেন না, কেকেআরের বিজয়রথও থেমে গেল। আসলে রবিন উথাপ্পাকে আইপিএল সেভেনের ‘মিস্টার কনসিসট্যান্সি’ মনে হচ্ছে না আর। এ দিন দেখলেন তাঁর ফ্লিকের অপেক্ষায় শর্ট ফাইন লেগ দাঁড়িয়ে। উথাপ্পা তবু ওখানেই তুলে দিলেন। মণীশ পাণ্ডেকে দেখলেও খারাপ লাগবে। যে ব্যাটসম্যান স্টেইনের শর্টকে সপাটে পুলে ফেলে দিতে পারেন, তিনি প্রবীণ কুমারের বলে ডান পা উঠিয়ে ও রকম বিসদৃশ ভাবে সরে যাবেন কেন? কে জানে, কোনও বিশ্বাস-অল্পতায় ভুগছেন কি না? ভুবনেশ্বর আর প্রবীণ মিলে ডেথে লো ফুলটস করে-করে মণীশ-ইউসুফকে বোতলবন্দি করে ফেললেন। পাঠানের দোষ নেই। তিনি সবে নেমেছিলেন। আর কে না জানে, তাঁর ব্যাটের ঘুম ভাঙে বড় মঞ্চে! আসলে কেকেআরের ম্যাচে যাবতীয় সম্ভাবনা এ দিন শেষ হয়ে যায় রাসেলের বিশাল হিটটা স্টেইন বাউন্ডারি লাইনে ধরে ফেলার পর। যে তাণ্ডব শুরু করেছিলেন আবার, পারলে তিনিই পারতেন। রাসেলকে দেখা গেল, ফিরছেন মাথা নাড়তে নাড়তে। চোখে একরাশ অবিশ্বাস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাঁকে এখন লোকে ডাকে ‘সুপারম্যান’। ঠিকই ডাকে। তবু তো আন্দ্রে রাসেল শেষ পর্যন্ত রক্তমাংসের এক মানুষেরই নাম!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

সানরাইজার্স ১৭৬-৪ (ওয়ার্নার ৯১, মর্কেল ২-৩১)

কেকেআর (ডাকওয়ার্থ-লুইসে লক্ষ্য ১২ ওভারে ১১৮) ১০১-৪ (উথাপ্পা ৩৪)।

ছবি বিসিসিআই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE