Sourav: দিদির রাজ্যে দাদাকে নিয়ে বার বার জল্পনা! লাল-সবুজ-গেরুয়া রাজনীতি এবং সৌরভ
সৌরভের রাজনৈতিক অবস্থান ফের আলোচনায়। তাঁর বাড়িতে নৈশভোজে অমিত শাহ। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সৌরভ বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমার কাছের মানুষ।’’
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২২ ১৯:৪৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
কবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতিতে যোগ দেবেন? যোগ দিলে কোন দলকে বাছবেন? দীর্ঘ দিন ধরে বাংলা তথা দেশে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
০২২৩
বাংলার প্রায় সব প্রধান দলই নানা সময়ে সৌরভকে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করেছে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক প্রত্যেক বারই সযত্নে এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা এড়িয়ে গিয়েছেন।
০৩২৩
সবাইকে এড়িয়ে গেলেও পাশাপাশি এ-ও সত্যি, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এখনকার সভাপতির সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলেরই সুসম্পর্ক। শুক্রবার সৌরভের বাড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহর নৈশভোজে যাওয়া এবং শনিবার একটি অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পাশে বসে সেই সৌরভেরই ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমার কাছের মানুষ’’ বলার মধ্য দিয়ে তা আবার প্রমাণিত।
০৪২৩
বাম আমলে সৌরভ তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। উত্তরবঙ্গের এই নেতার আমন্ত্রণে তখন শিলিগুড়িতে স্টেডিয়াম উদ্বোধনেও গিয়েছিলেন সৌরভ।
০৫২৩
২০২১ সালের শুরুতে সৌরভ যখন হৃদরোগে আক্রান্ত হন, তখন অশোক তাঁকে বাড়িতে গিয়ে দেখে আসেন। পর দিনই তিনি জানান, সৌরভকে রাজনীতিতে আসার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। যে ‘চাপ’ সৌরভের অসুস্থতার কারণ। তিনি সৌরভকে রাজনীতিতে না আসারই পরামর্শ দিয়েছেন।
০৬২৩
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল না বিরোধী দল বিজেপি ওই ‘চাপ’ দিচ্ছে, তা অবশ্য খোলসা করেননি অশোক।
০৭২৩
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টচার্যেরও ঘনিষ্ঠ সৌরভ। দু’জনের সম্পর্ক এতটাই ভাল ছিল যে, একটা সময়ে জগমোহন ডালমিয়ার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন সৌরভ। অথচ, মনে করা হয় এক অর্থে ডালমিয়াকেই ‘মেন্টর’ হিসেবে মানতেন সৌরভ।
০৮২৩
সেটা ২০০৬ সাল। বাংলার ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা সিএবি-র নির্বাচনে সভাপতি পদে ডালমিয়ার বিরুদ্ধে প্রার্থী হন কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়। তাঁকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন বুদ্ধদেব। সৌরভও সমর্থন করেছিলেন প্রসূনকে।
০৯২৩
ভোটে শেষ পর্যন্ত ডালমিয়াই জয়ী হয়ে সিএবি সভাপতি হন। বুদ্ধদেব তখন বলেছিলেন, ‘‘অশুভ শক্তির কাছে শুভ শক্তির পরাজয়।’’
১০২৩
ন’বছর পর ২০১৫ সালে ডালমিয়ার প্রয়াণের পর সৌরভই সিএবি-তে তাঁর চেয়ারে বসেন।
১১২৩
ক্রিকেট প্রশাসনে সৌরভের সেই অভিষেকও রাজনীতিমুক্ত ছিল না। কারণ, নবান্নে সৌরভকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, সৌরভই সিএবি-র পরবর্তী সভাপতি। সেখানেই তিনি ঘোষণা করেন, ডালমিয়া-পুত্র অভিষেক হবেন সিএবি সচিব।
১২২৩
সে বার কোনও নির্বাচন হয়নি সিএবি-তে। বিজেপি এবং বামপন্থী নেতারা তার কড়া সমালোচনাও করেছিলেন।
১৩২৩
২০১৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে নাটকীয় পরিবর্তন হয়। আরও এক বার সৌরভের সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে।
১৪২৩
লোঢা কমিশনের সুপারিশে ২০১৯ সালে বোর্ড সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে হয় নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে।
১৫২৩
শ্রীনিবাসনের জায়গায় তাঁরই ঘনিষ্ঠ ব্রিজেশ পটেলের নাম বোর্ড সভাপতি হিসেবে উঠে আসে। ব্রিজেশের ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। অনেকে তাঁকে অভিনন্দনও জানিয়ে দেন। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়ে সেই মর্মে।
১৬২৩
কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে পুরো ছবিটিই বদলে যায়। বোর্ড সভাপতি পদে সৌরভও মনোনয়ন জমা দেন। নির্বাচন হয়। সেখানে নাটকীয় ভাবে ব্রিজেশকে হারিয়ে সৌরভই বোর্ড সভাপতি হন।
১৭২৩
জনশ্রুতি, প্রাক্তন ক্রিকেটার, প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি এবং বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুরের উদ্যোগেই সৌরভ মনোনয়ন জমা দেন।
১৮২৩
আরও গভীরে ঢুকে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, হঠাৎ অনুরাগ কেন সৌরভকে বোর্ড সভাপতি করতে উদ্যোগী হলেন? এর পিছনে কি শক্তিশালী কারও মস্তিষ্ক রয়েছে?
১৯২৩
জবাবও খুঁজে বার করা হয়— অমিত শাহ প্রথমে সৌরভের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপর অসমের মুখ্যমন্ত্রী এবং অসম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি হিমন্ত বিশ্বশর্মা বোর্ড সদস্যদের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য বলেন।
২০২৩
ঘটনাপ্রবাহে শেষমুহূর্তের নাটকীয় মোচড়ে সৌরভ বোর্ড সভাপতি হয়ে যান! অমিত-পুত্র জয় শাহ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব পদে বসেন।
২১২৩
এর পর জোর জল্পনা শুরু হয় ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ‘দাদা বনাম দিদি’ লড়াই নিয়ে। সৌরভই না কি বাংলার নির্বাচনে ‘বিজেপি-র মুখ’ হিসেবে থাকবেন। সৌরভ বোর্ড সভাপতি হওয়ার সময় না কি তেমনই ‘কথা’ হয়েছিল। যদিও সৌরভ বা বিজেপি— কোনও পক্ষই এ ব্যাপারে কখনও কিছু বলেনি।
২২২৩
বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অনেকে এখনও মনে করেন, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সৌরভ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে না পড়লে ‘দাদা বনাম দিদি’ হয়ে যেতেই পারত। তবে সৌরভ তখনই বলে দিয়েছিলেন, তিনি তখন রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী নন। তবে কোনওদিন যে আসবেন না, তেমন কিছুও তিনি বলেননি।
২৩২৩
শুক্রবার সৌরভের বাড়িতে শাহের নৈশভোজ এবং শনিবার একটি অনুষ্ঠানে দাদার মুখে ‘‘দিদি আমার কাছের মানুষ’’ বলার মধ্য দিয়ে আবার মহারাজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।