অনুশীলনে: ক্লাবকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পরে ফের মাঠে নামলেন শিল্টন পালরা। দর্শক কোচ শঙ্করলাল ও তাঁর সহকারী অর্পণ দে। —নিজস্ব চিত্র।
সাত দিনের মধ্যে জুলাই মাসের বেতন দেওয়া হবে, কর্তাদের কাছ থেকে বুধবার এই আশ্বাস পাওয়ার পর মোহনবাগান ফুটবলাররা তাদের বিদ্রোহে আপাতত ইতি টানলেন। নেমে পড়লেন অনুশীলনেও।
এ দিন বিকেলে মোহনবাগান তাঁবুতে ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্রের সঙ্গে ফুটবলারদের আলোচনার পর অধিনায়ক শিল্টন পাল বলে দিলেন, ‘‘অঞ্জন স্যার আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন চেয়েছিলাম সবাই। উনি আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সাত দিনের মধ্যে বকেয়া এক মাসের মাইনে দিয়ে দেবেন। আর কোনও সমস্যা নেই।’’
মঙ্গলবার দিপান্দা ডিকা, শিল্টন পাল-সহ ফুটবলাররা এক যোগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ক্লাব বেতন না দিলে তাঁরা অনুশীলনে নামবেন না। কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন সবাই। সেই মতো বুধবার দুপুরে মাঠে এসে ড্রেসিংরুমে জড়ো হন ফুটবলাররা। ইদের জন্য মেহতাব হোসেন এবং আজহারউদ্দিন মল্লিক আসেননি। সচিব-সহ কোনও বড় কর্তার দেখা না পেয়ে তাঁরা মাঠে নেমেও ফিরে আসেন ড্রেসিংরুমে। সেটা দেখার পরই ক্লাবের এক ফুটবল বিভাগের কর্তার ফোন যায় সচিবের কাছে। সচিব তখন কথা বলেন অধিনায়ক শিল্টন পালের সঙ্গে। জানিয়ে দেন, অনুশীলনের পর অন্য কেউ নয়, তিনি নিজে এসে সবার সঙ্গে কথা বলবেন। শিল্টন সবাইকে নিয়ে এর পর সভায় বসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সচিব যখন নিজে বলেছেন, তখন অনুশীলনে নামা উচিত। উনি কী বলেন সেটা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। এর পরেই প্রায় কুড়ি মিনিট দেরিতে অনুশীলন শুরু করেন শঙ্করলাল। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, অনুশীলনে নামলেও বল পায়ে মাঠে নামেননি দিপান্দা ডিকা, হেনরি কিসেক্কা, সৌরভ দাশ, শিল্টন ডি’সিলভারা। গোল পোস্টের পিছনেই শারীরিক সক্ষমতার পাঠ নেন সবাই। সেই অনুশীলনে অবশ্য কোনও প্রাণ ছিল না। শনিবার কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে মোহনবাগানের খেলা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সঙ্গে। তার আগে কেন বল পায়ে কোনও ফুটবলার নামছেন না, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। প্রশ্ন উঠে যায়, তা হলে কি এটা প্রতীকী অনুশীলন হচ্ছে। কোচ শঙ্করলাল কোনও কথা বলেননি। তিনি সচিবের সঙ্গে ফুটবলারদের সভার আগেই বাড়ি চলে যান বিতর্ক এড়াতে। তবে শিল্টন বলেন, ‘‘ওরকম অনুশীলনই হবে ঠিক ছিল। এর সঙ্গে বকেয়া মাইনের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ মোহনবাগানের যা পরিস্থিতি তাতে জুলাই মাসের মাইনে হলেও অগস্টের বেতন হওয়া কঠিন। সেটা ঠিক সময়ে না পেলে কী আপনারা আবার বিদ্রোহী হবেন? মোহনবাগানে টানা তেরো বছর খেলা শিল্টন বলেন, ‘‘এখন এক মাসের মাইনে বকেয়া। সেটা নিয়েই কথা হয়েছে। পরেরটা পরে ভাবা যাবে।’’ তবে তিনি বলে দেন, ‘‘ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল জুনিয়র ফুটবলার বা বাইরের ফুটবলাররা যারা আছে তাদের আসা-যাওয়া বা খাওয়া দাওয়ার জন্য টাকা ক্লাব দিতে পারে এখনই। কিন্তু আমরা জানিয়েছি সবাইকে একসঙ্গে মাইনে টাকা মিটিয়ে দিন। কারণ এই টাকায় অনেকেরই সংসার চলে।’’ এর আগে এ রকম মাইনে সমস্যা বেশ কয়েক বার হয়েছে ক্লাবে। এরকম হলে কী তা খেলার উপর প্রভাব পড়ে। শিল্টন বলেন, ‘‘সে তো পড়েই। মাইনে না পেলে তার প্রভাব তো পড়বেই।’’
তবে প্রতিশ্রুতি দিলেও সাত দিনের মধ্যে ফুটবলারদের মাইনের সত্তর লাখ টাকা যে দেওয়া যাবেই তা নিশ্চিত করে বলতে চাননি সচিব অঞ্জন মিত্র। বলে দেন, ‘‘আমি তো মে মাসেই ব্যবস্থা করেছিলাম টাকার। কিন্তু বিরোধীরা সমস্যা তৈরি করছে। যাতে ফুটবল টিম বিপদে পড়ে তাই নানা রকম চক্রান্ত চলছে। তাঁরা কেউ দলের সাফল্য চাইছে না। ফুটবল দল নিয়ে যারা রাজনীতি করছেন তাদের সদস্য-সমর্থকদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’’ শনিবার সভা আছে আদালত নিযুক্ত নির্বাচন কমিটির। সেখানে ফুটবলারদের মাইনের ব্যাপারটি উঠবে। জুলাই মাসের মাইনে হলেও অগস্টের টাকা কোথা থেকে আসবে তা বলতে পারেননি সচিব। বলে দেন, ‘‘জোগাড় করার চেষ্টা করতে হবে। তবে মাইনে দেওয়ার দায় আমার একার নয়। এর দায় কোম্পানির বোর্ডের সব সদস্যেরই।’’ সচিব এ কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই তাঁকে পাল্টা তোপ দেগে দেন অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত। বলে দেন, ‘‘সচিব পুরো বিষয়টি গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ফুটবল দল চালানোর দায়িত্ব কোম্পানির। এটা ঠিক। তবে শুধু টাকা বা স্পনসর নয় সমস্ত সিদ্ধান্তই নেওয়ার কথা কোম্পানির।’’ সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শিবিরের অন্যতম প্রধান কর্তা জানিয়ে দেন, ‘‘সচিব যাদের ফুটবল বিভাগে নিয়োগ করেছেন তাদের সরিয়ে দিন। আমাদের হাতে দল তুলে দিন। আমরা দায়িত্ব নিয়ে আগের মতোই দল চালাব।’’
বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ
ইস্টবেঙ্গল বনাম টালিগঞ্জ অগ্রগামী (ইস্টবেঙ্গল, ৪-৩০)। সাধনা নিউজে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy