Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফের বিশ্বরেকর্ডের লক্ষ্যে সুমেরু অভিযানে সত্যরূপ

এই অভিযানে সফল হলে বছর পঁয়ত্রিশের সত্যরূপ হবেন বিশ্বের দ্বিতীয় এবং সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি, যাঁর ঝুলিতে থাকবে একই সঙ্গে সপ্তশৃঙ্গ, সপ্ত আগ্নেয়গিরি এবং ‘এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ (সপ্তশৃঙ্গ ও দুই মেরু একসঙ্গে) জয়ের শিরোপা।

বিজয়ী: কুমেরুতে সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। নিজস্ব চিত্র

বিজয়ী: কুমেরুতে সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। নিজস্ব চিত্র

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০২:০০
Share: Save:

সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি। সেই সঙ্গে দুই মেরু। এখনও পর্যন্ত বিশ্বে মাত্র এক জনই এই সব ক’টি জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন। এ বার সেই বিরল কৃতিত্ব ছোঁয়ার লক্ষ্যে অভিযানে যাচ্ছেন বাঙালি পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। তাঁর গন্তব্য এ বার সুমেরু। ৮৯ ডিগ্রি অক্ষাংশ থেকে ‘লাস্ট ডিগ্রি স্কি’ (১১১ কিলোমিটার পথ) করে পৃথিবীর উত্তরতম বিন্দুতে পৌঁছনোই এখন পাখির চোখ তাঁর।

এই অভিযানে সফল হলে বছর পঁয়ত্রিশের সত্যরূপ হবেন বিশ্বের দ্বিতীয় এবং সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি, যাঁর ঝুলিতে থাকবে একই সঙ্গে সপ্তশৃঙ্গ, সপ্ত আগ্নেয়গিরি এবং ‘এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ (সপ্তশৃঙ্গ ও দুই মেরু একসঙ্গে) জয়ের শিরোপা। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ভিতালি সিমোনোভিচ প্রথম এই তিন খেতাব জয় করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল পঁয়তাল্লিশ। প্রসঙ্গত, পাপুয়া নিউ গিনির কারস্টেইনজ শৃঙ্গ জয় করলে সত্যরূপের আন্টার্কটিকা অভিযানের সতীর্থ, রাশিয়ার ভ্লাদিস্লাভ লশকরেভ-ও এই কৃতিত্বের অধিকারী হবেন।

কলকাতার কবরডাঙার বাসিন্দা, বেঙ্গালুরুতে কর্মরত সত্যরূপ গত জানুয়ারিতেই জয় করেছিলেন আন্টার্কটিকার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি সিডলি। সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে সপ্তশৃঙ্গ ও সপ্ত আগ্নেয়গিরি জয় করে সে বার বিশ্বরেকর্ড করেন এই যুবক। তবে বাকি ছিল ‘এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ ছোঁয়ার স্বপ্ন। সেই লক্ষ্যেই আগামী রবিবার কলকাতা থেকে নরওয়েগামী বিমানে উঠছেন তিনি। এর পরে অসলো শহর থেকে লংইয়ারবেন হয়ে বিশেষ বিমানে পৌঁছবেন বার্নিও আইস ক্যাম্পে। সেখান থেকেই শুরু হবে স্কি-অভিযান।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে একই ভাবে স্কি করে দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছেছিলেন সত্যরূপ। সেই অভিযানের সঙ্গে এ বারের তফাত কোথায়? বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে সত্যরূপ বললেন, ‘‘কুমেরুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ছিল মহাদেশের উপর দিয়ে নাক বরাবর হেঁটে যাওয়া। খারাপ আবহাওয়া আর দুর্গমতাই ছিল সেখানকার সমস্যা। এ বার হাঁটতে হবে জমে যাওয়া সমুদ্রের উপর দিয়ে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, আর্দ্রতা বেশি থাকায় এবং বরফ উঁচু-নিচু হওয়ায় স্কি করাটা সেখানে সমস্যার। উষ্ণায়নের কারণে কোনও কোনও জায়গায় বরফ গলে যাওয়ায় অভিযাত্রীদের হয়তো ১১১ কিলোমিটারের অনেক বেশি পথ অতিক্রম করতে হবে। এর পরেও রয়েছে বরফের আস্তরণ সরে যাওয়ার সমস্যা। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সত্যরূপের ব্যাখ্যা, ‘‘হয়তো সারা দিন ধরে হেঁটে কোনও জায়গায় পৌঁছে রাতে ক্যাম্প করা হল। এ দিকে, সারা রাতে বরফ এতটাই সরে গেল যে, সকালে উঠে দেখলাম, আগের দিনের চেয়ে বেশি পিছিয়ে গিয়েছি!’’ রয়েছে মেরু ভাল্লুকের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনাও! ‘‘প্রতিটি দলের সঙ্গেই বন্দুক থাকে। ভাল্লুক এসে গেলে প্রথমে ভয় দেখানো হয়। তাতেও কাজ না হলে গুলি’’— অকপট অভিযাত্রী।

দিন কুড়ির এই অভিযানের জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। এই টাকা জোগাড় করতে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করতে হচ্ছে সত্যরূপকে। বন্ধুবান্ধব, পরিবার ছাড়াও কয়েকটি সংস্থা এবং মুর্শিদাবাদ পুলিশ এখনও পর্যন্ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের দুয়ারে কড়া নেড়েও সাড়া মেলেনি।

তবু দমছেন না সত্যরূপ। উল্টে জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। গ্র্যান্ড স্ল্যাম ছোঁয়ার প্রস্তুতি।

অন্য বিষয়গুলি:

Mountaineering Mountaineer Satyarup Siddhanta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE