অনুশীলনে ব্যস্ত সত্যব্রত।—নিজস্ব চিত্র।
বাংলার রঞ্জি দলে জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ঝাড়গ্রামের বছর চব্বিশের সত্যব্রত মুর্মু। জঙ্গলমহলের এই আদিবাসী যুবকের ইচ্ছাপূরণের লড়াইয়ের শরিক অরণ্যশহরের একটি বেসরকারি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ সংস্থা। ঝাড়গ্রামের ‘রঘুনাথ মেমোরিয়াল স্পোর্টিং ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’ নামে ওই সংস্থায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেওয়া সত্যব্রতর কাছে এবার বাংলার রঞ্জি দলে খেলার সুযোগ এসেছে। সম্প্রতি রঞ্জি দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৩২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে সিএবি। ওই তালিকায় সত্যব্রতও রয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রঞ্জি ট্রফির খেলা শুরু হচ্ছে। ৩২ জনের মধ্যে থেকে প্রথম পর্যায়ে ১৫ জনকে খেলানোর জন্য বেছে নেওয়া হবে। ফলে, নিজেকে প্রমাণের জন্য কলকাতায় নিয়মিত অনুশীলন করছেন সত্যব্রত। কিন্তু সুযোগ পেলেই ঝাড়গ্রামের সংস্থার কোচের তত্ত্ববধানেও অরণ্যশহরের মাঠে অনুশীলন করছেন তিনি।
সত্যব্রতর পাশাপাশি, ওই সংস্থায় প্রশিক্ষণ নেওয়া ঝাড়গ্রাম শহরের স্কুলপড়ুয়া বছর তেরোর পুষ্পেন্দু পাহাড়ি এবার সিএবি-র অনুর্ধ্ব চোদ্দো বাংলা দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। জঙ্গলমহলে ক্রিকেট প্রতিভাদের তুলে ধরার জন্য সরকারি স্তরে নানা প্রচার রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে ফি-বছর জঙ্গলমহল কাপ ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু জঙ্গলমহলে ক্রিকেট নিয়ে সেই অর্থে সরকারি স্তরে এখনও তেমন উদ্যোগের কথা জানা নেই। সেই প্রেক্ষিতে অরণ্যশহরের ওই সংস্থায় প্রশিক্ষণরত তরুণ ও কিশোর প্রতিভাদের রঞ্জি ও বাংলা দলে সুযোগ পাওয়ার ঘটনায় আশার আলো দেখছেন জঙ্গলমহলের প্রবীণ খেলোয়াড় ও প্রশিক্ষকেরা।
‘রঘুনাথ মেমোরিয়াল স্পোর্টিং ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’র প্রশিক্ষক পেশায় রেলকর্মী তাপস দাস বলেন,“আমাদের সীমিত সামর্থ্য। সপ্তাহে মাত্র দু’দিন ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি মাঠে প্রশিক্ষণ নেয় ১১০ জন তরুণ-কিশোর। এর মধ্যে প্রতিভা ও অনুশীলনের জোরে এবার সত্যব্রত-পুষ্পেন্দুরা আমাদের মনে আশার আলো জাগাচ্ছে। ওদের দেখে বাকিরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছে।”
ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুরে সত্যব্রতর আদিবাড়ি। সত্যব্রতর বাবা খগেন্দ্রনাথ মুর্মু অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী। সত্যব্রত অবশ্য খেলা ও পড়াশুনোর জন্য কলকাতায় থাকেন। আশুতোষ কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান (অনার্স) নিয়ে স্নাতকস্তরে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন এই আদিবাসী যুবক। ছোটবেলা থেকেই খেলা-পাগল সত্যব্রত সিএবি-র স্কুল পর্যায়ে বিভিন্ন বিভাগে খেলেছেন। এ জন্য অবশ্য জামশেদপুরের ক্রিকেট কোচ কানু চক্রবর্তীর বিশেষ অবদান রয়েছে। এরপর কলকাতায় সিএবি-র সেকেন্ড ডিভিশন ও ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে বাংলার ক্রিকেট-কর্তাদের নজরে আসেন সত্যব্রত। সত্যব্রত গত দু’বছর ধরে ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলছেন। তিনি মূলত ব্যাটস্ম্যান ও উইকেট কিপার। কলকাতা লিগে খেলার সুবাদে কয়েক মাস আগে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ‘স্পোর্টস্ কোটা’য় চাকরিও পেয়েছেন সত্যব্রত। সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোক মলহোত্র ও জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে রঞ্জি দলে প্রথম ১৫ জনের তালিকায় ওঠার জন্য সত্যব্রত-সহ ৩২ জন ক্রিকেটার এখন নিয়মিত ইডেন গার্ডেনে অনুশীলন করছেন।
রবিবার ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি মাঠে অনুশীলনের ফাঁকে সত্যব্রত জানালেন, “এখন রঞ্জি দলের জন্য কলকাতায় নিয়মিত অনুশীলন করছি। তবে কলকাতায় থাকলেও আমি প্রতি সপ্তাহে ঝাড়গ্রামে এসে তাপসদার তত্ত্বাবধানেও অনুশীলন করি। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই উনি আমকে যথেষ্ট উত্সাহ দিয়ে গিয়েছেন। রঞ্জিতে খেলার জন্য নিজেকে উজাড় করে প্রমাণের চেষ্টা করছি।” ঝাড়গ্রামের ওয়েস্ট এন্ড স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র পুষ্পেন্দু পাহাড়ির বাড়ি অরণ্যশহরের ঘোড়াধরায়। পুষ্পেন্দুর বাবা পূর্ণেন্দু পাহাড়ি প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতরের কর্মী। বাঁ হাতে ব্যাট করা পুষ্পেন্দু গত বছর জম্মুতে অনুর্ধ্ব-১৪ জাতীয় স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলা স্কুল দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিল। ২০১৩-১৪ বর্ষে সিএবি আয়োজিত জেলাস্তরের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় এবং অম্বর রায় সাব জুনিয়র ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ভাল খেলার জন্য পুষ্পেন্দু বাংলা দলে ট্রায়ালের সুযোগ পায়। অনুর্ধ্ব ১৪-র বাংলা দলে এবার মূল ৩০ জনের তালিকায় পুষ্পেন্দুও রয়েছে। গত চার বছর ধরে তাপসবাবুর তত্ত্বাবধানে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এই কিশোর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy