Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

বকেয়া বেতন চেয়ে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ফেডারেশনে অভিযোগ সঞ্জয়ের

সাড়ে তিন বছর মোহনবাগানকে কোচিং করিয়েছেন সঞ্জয়। আই লিগ ও ফেড কাপে সাফল্য পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত গত বছর একটি ম্যাচ ড্র করার পর তাঁকে কার্যত বাধ্য করা হয় থুতু ছিটিয়ে, ইট মেরে আই লিগের মাঝপথে কোচের পদ ছাড়তে।

ক্ষুব্ধ: বকেয়া চেয়ে অনড় প্রাক্তন কোচ সঞ্জয় সেন। —ফাইল চিত্র।

ক্ষুব্ধ: বকেয়া চেয়ে অনড় প্রাক্তন কোচ সঞ্জয় সেন। —ফাইল চিত্র।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫০
Share: Save:

ফুটবলারদের বকেয়া মেটানোর আশ্বাস দেওয়ার পর ক্লাব তাঁবুতে যখন স্বস্তির আবহ, তখনই আরও বড় ধাক্কা এল মোহনবাগানে। বকেয়া চার মাসের মাইনের টাকা চেয়ে ফেডারেশনের দ্বারস্থ হলেন সবুজ মেরুনকে আই লিগ দেওয়া কোচ সঞ্জয় সেন। ফুটবলাররা টাকা না পেয়ে মাঝেমধ্যেই দ্বারস্থ হন ফেডারেশনের। কিন্তু দেশের কোনও কোচ আজ পর্যন্ত এই রাস্তায় হাঁটেননি। ফলে সঞ্জয়ের অভিযোগকে নজিরবিহীন বলছেন দিল্লির ফুটবল হাউসের কর্তারা। পরিস্থিতি যা তাতে, প্রাক্তন কোচের বকেয়া না মেটালে শতবর্ষপ্রাচীন ক্লাবের এ এফ সি লাইসেন্সিংয়ের ছাড়পত্র আটকে যেতে পারে। বড় বিপদে পড়তে পারে মোহনবাগান।

সাড়ে তিন বছর মোহনবাগানকে কোচিং করিয়েছেন সঞ্জয়। আই লিগ ও ফেড কাপে সাফল্য পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত গত বছর একটি ম্যাচ ড্র করার পর তাঁকে কার্যত বাধ্য করা হয় থুতু ছিটিয়ে, ইট মেরে আই লিগের মাঝপথে কোচের পদ ছাড়তে। পদত্যাগ করার সময় তাঁর বেতন বকেয়া ছিল চার মাসের। বেতনের সেই আঠারো লাখ টাকা চেয়ে বেশ কয়েকবার ই মেল এবং ফোন করেও গত সাত মাসে মোহনবাগান কর্তাদের কাছ থেকে সাড়া পাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত বুধবার সবর্ভারতীয় ফুটবল সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন সঞ্জয়। সেখানে তিনি চুক্তির নথিপত্র জুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘‘মোহনবাগান আমার বকেয়া চার মাসের টাকা কিছুতেই দিচ্ছে না। সাত মাস ধরে অপেক্ষা করেছি। বাধ্য হয়ে আপনাদের সাহায্য চাইছি।’’ চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ফেডারেশন সচিব কুশল দাশ। দিল্লি থেকে ফোনে তিনি বললেন, ‘‘চিঠি পেয়েছি। অভিযোগ গুরুতর। আমরা মোহনবাগানকে চিঠি পাঠিয়ে দিচ্ছি। বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্যও বলছি। যদি ওরা টাকা মিটিয়ে না দেয়, তা হলে আইন দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোচ বা ফুটবলারদের চুক্তি অনুযায়ী কোনও ক্লাব টাকা না দিলে সেটা ফিফার নিয়মে কিন্তু বড় অপরাধ।’’ কিন্তু মোহনবাগানের যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে ওঁরা যদি টাকা না দেয়, তা হলে ফেডারেশনের কোন কমিটি এর বিচার করবে তা অবশ্য বলতে চাননি কুশলবাবু। বলে দেন, ‘‘আমার কাছে এর আগে ফুটবলারদের অনেক অভিযোগ এসেছে। কিন্তু কোনও কোচের এরকম অভিযোগ নজিরবিহীন। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে হবে, কোচের ব্যাপারটাও প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি দেখবে কি না? তবে চুক্তির টাকা না মেটালে লাইসেন্সিং নিয়ে সমস্যা হতে পারে মোহনবাগানের।’’

দু’দফায় ফেডারেশনে অভিযোগ করেছেন বর্তমানে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ক্লাব এটিকে-র সহকারী কোচ। একটি ক্যুরিয়ারের চিঠির মাধ্যমে। অন্যটি ই মেল করে। এটিকের কোচিং করাতে সঞ্জয় এখন স্পেনে। মাদ্রিদ থেকে ফোনে সঞ্জয় বুধবার বলে দিলেন, ‘‘সাত মাস অপেক্ষা করেছি। যে ক্লাবে আমি এতদিন কোচিং করিয়েছি সেই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে মন চাইছিল না। অনেক দিন অপেক্ষা করেছি। ওঁরা বলছে, দু’মাসের টাকা ছেড়ে দিন। কিন্তু পরিশ্রমের টাকা ছাড়ব কেন? যখন আমি ক্লাবের হয়ে কথা বলতে গিয়ে সাসপেন্ড হয়েছিলাম, তখন জরিমানার পাঁচ লাখ টাকা নিজের পকেট থেকে দিয়েছি। তখন তো ক্লাব দেয়নি। ১৮ লাখ টাকা পাই। সেটাই দিতে হবে।’’ টাকা না পেলে সঞ্জয় ফিফার দ্বারস্থ হতে পারেন বলে খবর। যেতে পারেন আদালতেও। সঞ্জয়ের চিঠির খবর শুনে মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র বলে দেন, ‘‘এটা কোম্পানির ব্যাপার। টাকা দেওয়ার দায় আমার সঙ্গে কোম্পানির বোর্ডে থাকা প্রেসিডেন্ট, সহ সচিব, অর্থ সচিবেরও। ক্লাব সমস্যায় পড়লে সবাইকে তার দায় নিতে হবে।’’

সামনে নির্বাচন। কর্তাদের কাজিয়ায় ক্লাবের যা অবস্থা, তাতে মোহনবাগানকে না শাস্তির মুখে পড়তে হয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE