ওয়াং ইহানকে হারিয়ে শেষ চারে। ছবি: এপি।
মেয়েদের বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের ক্যাচলাইন গত কয়েক বছর ধরেই সাইনা বনাম চায়না! সে ড্যানিশ মেয়ে ক্যারোলিনা মারিন যতই এখন র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর হন। কিংবা অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন থাকুন।
আবার সাইনা নেহওয়াল যতই চিনাদের সবচেয়ে তীক্ষ্ণ কাঁটা হন না কেন, একজনের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদি কন্যার হেড-টু-হেড বড়ই করুণ।
শুক্র-সন্ধের জাকার্তার আগে পর্যন্ত সেটা ছিল সাইনার দিক থেকে ২-৯। সেটার আজ ৩-৯ হওয়াটা বড় কথা নয়। বড় কথা— শেষ দুটো সাক্ষাতেই সাইনা হারালেন প্রাক্তন অলিম্পিক, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, পয়লা নম্বর মেগা চিনা ইহান ওয়াংকে। এবং দু’টোই কী তাৎপর্যের জয়!
দু’টোই এ বছরে। প্রথম জয়টা অল ইংল্যান্ডে সাইনাকে প্রথম বার ফাইনাল খেলার গৌরবময় সরণি গড়ে দিয়েছিল। আর এ দিনের জয়টা সাইনাকে এনে দিল তাঁর কেরিয়ারের প্রথম বিশ্ব ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের পদক। বিশ্বের দুই নম্বরের উজ্জ্বল কেরিয়ারের যে দু’টো মাত্র জায়গা এত দিন খানিকটা অন্ধকার ছিল, সেই দু’টোই আলোকিত হল ইহান-বধে। আবার সেই পুরনো কথাটাকেই সত্যি করে যে, সময় যেমন নিষ্ঠুর ভাবে আপনার থেকে কিছু কেড়ে নেয়, তেমনই আবার সেই সময়ই আপনাকে দারুণ ভাল কিছু ফেরতও দেয়!
বিশ্ব ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের নিয়মানুযায়ী, সেমিফাইনালে উঠলেই ব্রোঞ্জ পদক পাকা। সেই মতো এ দিনই সাইনার ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত হয়ে গেল তাঁর প্রিয় শিকারক্ষেত্র জাকার্তার কোর্ট থেকে (যেখানে তিনি তিনবার ইন্দোনেশিয়ান সুপার সিরিজ চ্যাম্পিয়ন)। সাইনাও স্বীকার করছেন, ‘‘ম্যাচটা আমার কাছে ফাইনালের মতোই ছিল। জয়টা অনেক ব্যাপারেই আমার জন্য প্রথম বলে আমার কোচেদের, পরিবারকে ধন্যবাদ।’’
শনিবার সেমিফাইনালে বিশ্বের ২৯ নম্বর লিন্ডাওয়েনি ফানেত্রির সঙ্গে সাইনার লড়াই। জিতলে নিদেনপক্ষে রুপো নিশ্চিত। ফানেত্রির সঙ্গে হেড-টু-হেডেও সাইনা ২-১ এগিয়ে। তবে স্থানীয় তারকা বলে গোটা গ্যালারি কাল ফানেত্রির পিছনে আর সাইনার বিপক্ষে থাকবে এটাও মাথায় রাখার ব্যাপার।
ভারতীয় পুরুষদের চ্যালেঞ্জ গতকালই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এ দিন প্রথমে মেয়েদের ডাবলসে ২০১১-র ব্রোঞ্জজয়ী জ্বালা গাট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পা (বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে ২৮ বছরের পদক-খরা শেষে সেটাই ছিল ভারতের প্রথম সাফল্য) এবং তার পরে সিঙ্গলসে গত দু’বারের (২০১৩ ও ’১৪) ব্রোঞ্জজয়ী পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধু কোয়ার্টার ফাইনালেই হেরে যাওয়ায় এ বারের বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে ভারতীয়-ব্রিগ্রেডের পদক-সম্ভাবনার বিচারে এখন সবেধন নীলমণি সাইনা।
অথচ চিফ কোচ, সাইনার প্রাক্তন গুরু পুল্লেলা গোপীচন্দ প্রাক টুর্নামেন্টে বলেছিলেন, ভারতীয়রা এ বার রেকর্ড পদক জিতবে। কিন্তু বাস্তবে গোপীর মুখরক্ষা করলেন তাঁরই গুরুকুল ছেড়ে এক বছর হল চলে যাওয়া সাইনা-ই।
তিনটেই অসাধারণ গেমের হাড্ডাহাড্ডি কোয়ার্টার ফাইনালে ইহানকে ২১-১৫, ১৯-২১, ২১-১৯ সাইনা হারানোর পরে তাঁর বর্তমান কোচ বিমল কুমার সাইডলাইনে যে ভাবে শিশুর উচ্ছ্বাসে চেয়ার ছেড়ে উঠে লাফাতে লাগলেন সেটাও তো তাৎপর্যের। গোপী পর্যন্ত এসে ততক্ষণে সাইনা-বিমল-মধুমিতা সিংহ বিস্তদের সেই ভিড়ে (ভারতীয় মেয়েদের টিমের কোচ) মিশে গিয়েছেন। সাফল্যের যে কোনও শত্রু থাকে না!
ভারতের ৬৯তম স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন তখন যেন সাইনার ব্যাডমিন্টন জীবনেও এক স্বাধীনতার সূর্যোদয়! অলিম্পিক পদকজয়ীর ট্রফি ক্যাবিনেটে যে ছয় বছরের অধরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পদকও আজ থেকে থাকছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy