নজরে: টেস্ট সিরিজে জায়গা ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় ঋদ্ধিমান। ফাইল চিত্র
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা জিতে নিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। যা শোনার পরে মনে হচ্ছে, আর কোনও সন্দেহই থাকার কথা নয় যে, বিশাখাপত্তনমে প্রথম টেস্টে বাংলার প্রহরীই উইকেটকিপার হিসেবে দাঁড়াতে চলেছেন।
আনন্দবাজারের সঙ্গে ফোনে একান্ত আলাপচারিতায় বৃহস্পতিবার শাস্ত্রী বলেন, ‘‘ঋদ্ধি পুরো ফিট হয়ে গিয়েছে। চোট পাওয়ার আগে টেস্টে ও-ই আমাদের এক নম্বর উইকেটকিপার ছিল। ওর উইকেটকিপিং দক্ষতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার দরকার নেই।’’ প্রসঙ্গত, দেশের মাঠে ঘূর্ণি পিচে যে ঋষভ পন্থ নন, ঋদ্ধিমানই দল পরিচালন সমিতির প্রথম পছন্দ, সেই খবর প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজারেই।
ভারতীয় দলে এই মুহূর্তে দুই উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা এবং ঋষভ পন্থের অবস্থানও পরিষ্কার করে দিচ্ছেন শাস্ত্রী। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘সাদা বলের ক্রিকেটে ঋষভের আশেপাশে কেউ নেই। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সব চেয়ে নির্মম ম্যাচউইনারদের এক জন ও।’’ যোগ করছেন, ‘‘তবে মাথায় রাখতে হবে টেস্ট ক্রিকেটে ঋদ্ধি আছে এবং ও ফিট হয়ে গিয়েছে। ওর উইকেটকিপিং দক্ষতা দুর্দান্ত। আমরা দেশের মাঠে খেলব। তাই টেস্টে ঋষভকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাখবে ঋদ্ধি।’’
বরাবরই বাংলার উইকেটকিপার সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত শাস্ত্রী। ‘কট মার্শ বোল্ড লিলি’-র ঢংয়ে তিনিই তৈরি করে দিয়েছিলেন বাংলার দুই ক্রিকেটারকে নিয়ে সেই বিখ্যাত হয়ে যাওয়া সংলাপ ‘কট সাহা বোল্ড শামি’। চোটের জন্য আঠেরো মাস বাইরে ছিলেন ঋদ্ধি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ফিরলেও দু’টি টেস্টেই খেলানো হয়েছিল ঋষভকে। এ বার দস্তানা হাতে প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ তৈরি। থাকবেন মহম্মদ শামিও। দুর্গাপুজোর মধ্যে হবে প্রথম টেস্ট (২-৬ অক্টোবর)। বাঙালির উৎসব চলার মধ্যেই ফিরতে পারে জনপ্রিয় সেই ‘কট সাহা বোল্ড শামি’ জয়ধ্বনি!
ঋষভকে নিয়ে সম্প্রতি সোজাসাপ্টা মন্তব্য করেছিলেন শাস্ত্রী। বলেছিলেন, আগ্রাসনের সঙ্গে সতর্কতাকেও মেশাতে জানতে হবে। উল্টোপাল্টা শট খেলে দলকে ডুবিয়ে এলে যত বড় প্রতিভাই হোন না কেন, তাঁকেও কড়কানি খেতে হবে। হেড কোচের এই মন্তব্য নিয়ে ঝড় বয়ে যায় ভারতীয় ক্রিকেটে। অনেকে পাল্টা বলেছেন, ঋষভের উপর চাপ তৈরি না করে তাঁকে মুক্ত মনে খেলতে দেওয়া উচিত। যা শুনে উত্তেজিত শাস্ত্রী। বলে দিচ্ছেন, ‘‘কে বলল, আমরা ওকে মুক্ত মনে খেলতে দিই না। বিশেষজ্ঞরা অনেক কথা বলছেন। ভুলে গেলে কী করে চলবে যে, ইংল্যান্ডে জুনিয়র ছেলেটাকে সাহস করে আমরাই খেলিয়েছিলাম। অনেক বিশেষজ্ঞ তখন তো বলেছিল, কাঁচা একটা ছেলেকে টেস্টে নামিয়ে দিল!’’
কোনও রাখঢাক না রেখেই শাস্ত্রী বলে দিচ্ছেন, ‘‘ঋষভের প্রতিভা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। শট নির্বাচন নিয়ে বলেছিলাম আমি। টিম ম্যানেজমেন্ট টেনে লাভ নেই, কথাটা আমিই বলেছিলাম। এখনও বলছি, শট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ওকে পরিণত হতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু ওকে সেটা ধরিয়ে দেওয়ার মানে এই নয় যে, আমরা ওর প্রতিভা বা যোগ্যতায় আস্থা হারিয়ে ফেলেছি।’’ হেড কোচের আরও সংযোজন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে হয়তো এখনও অনেক লম্বা রাস্তা পেরোতে হবে ঋষভকে। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে ওর মতো প্রতিভা এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে খুব কমই আছে। সেটা টিমের মধ্যে আমরা সকলে জানি। বাইরে থেকে কে কী বলল, তা শোনার দরকারই নেই আমাদের।’’ ঋষভকে নিয়ে শাস্ত্রীর করা মন্তব্যের জেরে পাল্টা বক্তব্য রেখেছেন যুবরাজ সিংহ, গৌতম গম্ভীরের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। শাস্ত্রীর বক্তব্য হয়তো তাঁদের দিকেই পাল্টা তোপ।
ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে দীনেশ কার্তিক ব্যর্থ হওয়ার পরে শাস্ত্রীর উদ্যোগেই অভিষেক ঘটেছিল পন্থের। ওভালের শেষ টেস্টে তিনি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন। এর পর অস্ট্রেলিয়া সফরে কয়েকটি ইনিংসে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসার পরে সিডনিতে তাঁর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন শাস্ত্রী এবং কোহালি। সিডনি টেস্ট শুরুর সকালে শাস্ত্রী তাঁকে বলেন, ‘‘শুরুর দিকে আধ ঘণ্টা বোলারকে দে। বাকি দিনটা তোর হবে। আর কুড়ি-পঁচিশ করার কথা ভাবিস না, একশো ভাবতে শেখ।’’ সেই টেস্টেই দেড়শো করে ড্রেসিংরুমে ফেরার পরে বুকে টেনে নিয়ে হেড কোচ বলেন, ‘‘আমি তো তোকে একশো ভাবতে বলেছিলাম। তুই তো দেখছি দেড়শো ভাবছিস।’’
আসন্ন টেস্ট সিরিজের প্রসঙ্গ উঠতেই অবশ্য ঋষভ এবং ঋদ্ধির তুল্যমূল্য আলোচনা চলে আসছে এবং শাস্ত্রী সোজাসাপ্টা ভঙ্গিতেই বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমাদের হয়তো যেখানে যাকে দরকার, সেই অনুযায়ী চলতে হবে। ভুললে চলবে না, ঋদ্ধিও দুর্ধর্ষ উইকেটকিপার।’’ কপিলের বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ‘চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়ন্স’ দ্রুত যোগ করেন, ‘‘কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে কোনও প্রশ্নই নেই ঋষভকে নিয়ে। ও যে অসামান্য এক প্রতিভা, তা নিয়ে কারও সন্দেহ থাকতে পারে? এটা ঠিক যে, ওর উইকেটকিপিং দক্ষতা বাড়াতে হবে। অনেক উন্নতির জায়গা আছে সেখানে। আরে, এই কথাগুলোও তো কাউকে বলতে হবে!’’ শট নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ায় এই মুহূর্তে বেশ খানিকটা চাপে ঋষভ। কিন্তু তাঁর ভবিষ্যৎ কেমন বুঝছেন? জিজ্ঞেস করায় একটুও না ভেবে শাস্ত্রীর জবাব, ‘‘দুর্দান্ত ভবিষ্যৎ। বয়স ওর দিকে রয়েছে। তাই খামতির জায়গাগুলো সারিয়ে তোলার সময় পাচ্ছে।’’ এর পরেই কোহালিদের হেড কোচের মন্তব্য, ‘‘সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, টেস্ট ক্রিকেটের সেরা উইকেটকিপারকে দেখে বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে ঋষভ। তার নাম ঋদ্ধিমান সাহা। উইকেটকিপিং স্কিল শেখার জন্য ঋদ্ধির চেয়ে ভাল উদাহরণ আর কে হতে পারে!’’
বিশাখাপত্তনমে প্রথম টেস্ট ম্যাচের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বৃষ্টিই। তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত শাস্ত্রী। তবে আরও বেশি উদ্বিগ্ন শোনাল তাঁর প্রধান ফাস্ট বোলারের ছিটকে যাওয়ার কথা তোলায়। ‘‘বিরাট ধাক্কা,’’ যশপ্রীত বুমরার চোট নিয়ে বললেন শাস্ত্রী। তার পরেই কিছুটা আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে যোগ করলেন, ‘‘তবে এক দিক দিয়ে ভাল যে, একেবারে শুরুতেই চোটটা ধরা পড়েছে। তাই খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার আগেই সতর্কতা নেওয়া যাবে।’’ কতটা গুরুতর বুমরার চোট? শোনা যাচ্ছে, বুমরা দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদি সেই দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ অস্ত্রোপচারের কথা বলেন, সেই রাস্তাতেই হাঁটতে হবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে একেবারেই তাড়াহুড়ো করতে চায় না দল। শাস্ত্রী বলে দিলেন, ‘‘আমরা এমনিতেই বিশ্রাম দিয়ে ওকে খেলাচ্ছিলাম। এখন আরওই সতর্ক থাকা দরকার। কোনও ভাবেই অতিরিক্ত বোঝা চাপানো যাবে না।’’
বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়ে ওঠা বুম বুম বুমরা। সব ধরনের ক্রিকেটে কোহালিদের বোলিং ব্রহ্মাস্ত্র। দুঃস্বপ্নেও কি কেউ হারাতে চাইবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy