Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Drinking Water Supply

আসেনি বরাদ্দ, জল জীবন মিশনের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন

সূত্রের দাবি, গত ৮ মে এবং ৪ জুলাই প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। এর সমান্তরালে ২৯ মে এবং ২৪ জুলাই প্রায় ৭৩৯ কোটি টাকা করে অর্থ বরাদ্দ করে রাজ্যও। গত ১৩ অগস্ট প্রায় ১০১০ কোটি টাকা রাজ্যকে পাঠায় কেন্দ্র।

— প্রতীকী চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:১৬
Share: Save:

বাড়ি বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জলের প্রকল্পের (জল জীবন মিশন বা জেজেএম) অগ্রগতি ৫৩% ছাপিয়ে গেলেও বাকি এখনও অনেকটা কাজ। ২০২৫ সালের মধ্যে তা শেষ করার লক্ষ্য রেখেছে রাজ্য। কিন্তু এই প্রকল্পেও কেন্দ্রীয় বরাদ্দের একটি ভাগের অর্থ এখনও কেন এল না, তা নিয়ে চর্চা তৈরি হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। অর্থ দফতর সূত্রের বক্তব্য, দু’টি ভাগের বরাদ্দ পর পর দিতে হয়েছে রাজ্য সরকারকেই। তাঘিরেই এই চর্চা।

কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত জেজেএম-এ মোট খরচের ৬০ ভাগ দেওয়ার কথা কেন্দ্রের এবং বাকি ৪০ ভাগ অর্থ রাজ্যের দায়িত্বে। অর্থ-কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এমন ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কোনও একটি বরাদ্দ এসে পৌঁছলে তার সমান্তরালে রাজ্যকেও অর্থ দিতে হয় হিসেব কষে। চলতি আর্থিক বছর মে, জুলাই এবং অগস্ট মাসে কেন্দ্রের অর্থ পৌঁছেছে রাজ্যের কোষাগারে। ওই সময়ে রাজ্যও তার ভাগের অর্থ দিয়েছে প্রকল্পের খাতে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রের অর্থ আর আসেনি। বরং রাজ্যকেই তার ভাগের অর্থ বরাদ্দ করতে হয়েছে জেজেএম-এ। বস্তুত, গত মে মাস থেকে অগস্ট পর্যন্ত কেন্দ্র দিয়েছে প্রায় ২৫২৫ কোটি টাকা। অথচ মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩৬৯৯ কোটি টাকা রাজ্যের তরফে বরাদ্দ হয়েছে। সেই কারণেই সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন— শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের বরাদ্দ-ভবিষ্যৎ আবাস বা একশো দিনের কাজের প্রকল্পের মতোহবে না তো!

সূত্রের দাবি, গত ৮ মে এবং ৪ জুলাই প্রায় ৭৫৭ কোটি টাকা করে বরাদ্দ পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। এর সমান্তরালে ২৯ মে এবং ২৪ জুলাই প্রায় ৭৩৯ কোটি টাকা করে অর্থ বরাদ্দ করে রাজ্যও। গত ১৩ অগস্ট প্রায় ১০১০ কোটি টাকা রাজ্যকে পাঠায় কেন্দ্র। ৪ সেপ্টেম্বর রাজ্যও প্রকল্পের খাতে দেয় প্রায় ৯৮৬ কোটি টাকা। কিন্তু তার পরে থেকে কেন্দ্র আর কোনও বরাদ্দ পাঠায়নি এখনও। তবু রাজ্যকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ফের বরাদ্দ করতে হয়েছে ১২৩৩ কোটি টাকা। এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রের থেকে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ বা তার সহযোগী পরিকাঠামো তৈরির জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় না। জমি কিনে সেই পরিকাঠামো তৈরি করতে হয় রাজ্যকেই। এখনও পর্যন্ত তেমন প্রায় ১২ হাজার ৭৫০টি পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।” যদিও প্রবীণ এক আধিকারিকের অভিমত, “প্রকল্পের মোট খরচের ৬০% দেবে কেন্দ্র, ৪০%-এর দায়িত্ব রাজ্যের। সেই অনুপাতে এতদিন ধরে বরাদ্দ এসেছে। ফলে একটি দফার বরাদ্দ না পেলে আশঙ্কার কিছু এখনই থাকে না। তবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে হচ্ছে।”

প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে নলবাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে ২০১৯ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়। তবে এ রাজ্যে তা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে। সে বছর প্রকল্পের অগ্রগতি ছিল খুবই সামান্য। ২০২১ সাল থেকে রাজ্যে গতি পায় প্রকল্পটির কাজ। প্রকল্পের আওতায় সব মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় ১.৭৫ কোটি পরিবারকে জলের সংযোগ দিতে হবে। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত দেওয়া গিয়েছে প্রায় ৯৩.৫০ লক্ষ পরিবারে জলের সংযোগ। শতাংশের হিসেবে তা ৫৩.৩৬%। পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি রয়েছে কেরল, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্য। প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ২০২৪ সালের মধ্যে কেন্দ্র প্রকল্পটিকে শেষ করতে বললেও, এ বছর পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেকগুলি রাজ্যের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। ফলে প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রকে বরাদ্দ চালিয়ে যেতেই হবে। অভিজ্ঞ এক কর্তার কথায়, “মিশন ভিত্তিক প্রকল্পে আচমকা বরাদ্দ বন্ধ করা কঠিন। তা ছাড়া শুরুতে রাজ্যের অগ্রগতি শ্লথ থাকলেও এখন তা কাঙ্খিত গতিতেই ছুটছে। প্রকল্পের নাম-ব্র্যান্ডিং-সহ কেন্দ্রের সব শর্ত পালিত হচ্ছে। তা ছাড়া প্রকল্পের উপর মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিবের নজরও রয়েছে পর্যাপ্ত।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy