Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

সকালের লড়াইটা ঋষভের সঙ্গে ইংল্যান্ডের, বললেন ভন

২০০৭-এ মাইকেল ভনের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এ মাঠেই টেস্ট জিতেছিল ভারত। তার পর সেই জয়ের ভিটামিনে চনমনে রাহুল দ্রাবিড়ের দল সিরিজও জেতে। আর সেই জয়ের নেপথ্যে প্রধান ভূমিকা ছিল বল হাতে জাহির খানের এবং ট্রেন্ট ব্রিজে সচিন-সৌরভের ৯৬ রানের পার্টনারশিপের।

নজরে: প্রশংসিত ঋষভ। ছবি: এএফপি।

নজরে: প্রশংসিত ঋষভ। ছবি: এএফপি।

সুমিত ঘোষ
নটিংহ্যাম শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০৫:১৪
Share: Save:

এগারো বছর আগের এক সকাল যেন ফিরে এসেছিল শনিবারের ট্রেন্ট ব্রিজে।

একই রকম কঠিন পরিস্থিতি। ক্রিজে দুই তারকা। দক্ষ পাইলটের মতো যাঁরা উড়ানকে টার্বুল্যান্স থেকে বার করে নিয়ে আসবেন।

২০০৭-এ মাইকেল ভনের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এ মাঠেই টেস্ট জিতেছিল ভারত। তার পর সেই জয়ের ভিটামিনে চনমনে রাহুল দ্রাবিড়ের দল সিরিজও জেতে। আর সেই জয়ের নেপথ্যে প্রধান ভূমিকা ছিল বল হাতে জাহির খানের এবং ট্রেন্ট ব্রিজে সচিন-সৌরভের ৯৬ রানের পার্টনারশিপের। সংখ্যার দিক থেকে এমন কোনও বড় রান না হলেও সেই সকালে দ্বিতীয় নতুন বল এবং ঠান্ডা হাওয়া হঠাৎই জীবন কঠিন করে তুলেছিল ব্যাটসম্যানদের। ইংরেজ পেসারদের সামনে অবিচল থেকে ভারতকে নিরাপদ জমিতে পৌঁছে দেন তাঁরা।

এগারো বছর আগের সেই অধ্যবসায়, জেদ এবং শৃঙ্খলাই যেন ফিরে এসেছিল সচিন-সৌরভদের পরবর্তী প্রজন্মের সব চেয়ে উজ্জ্বল দুই নক্ষত্রের ব্যাটিংয়ে। বিরাট কোহালি ১৫২ বলে ৯৭। তিন রানের জন্য তাঁর সেঞ্চুরি হারানোর দৃশ্য মনে করিয়ে দেবে এগারো বছর আগের সেই ম্যাচে ৯১ রানে আউট হওয়া সচিনকে। অজিঙ্ক রাহানে ১৩১ বলে ৮১। তিনি যেন সেই ম্যাচে ৭৯ করা সৌরভ।

চূড়ান্ত হতাশ দেখাল কোহালিকে। লেগস্পিনার আদিল রশিদের অনেক বাইরের বলে মুহূর্তের জন্য সংযম হারিয়ে উইকেট এবং সেঞ্চুরি হারালেন তিনি। রাহানে ফিরলেন অ্যালেস্টেয়ার কুকের অসাধারণ ক্যাচে। শেষ মুহূর্তে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পাখির মতো ছোঁ মেরে তুলে নিলেন।

কোহালি এবং রাহানে চতুর্থ উইকেটে যোগ করলেন ১৫৯ রান। টেস্ট এবং সিরিজ যদি এখান থেকে ঘোরে, এটাই টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকবে। রাহানে যখন যোগ দিলেন তাঁর অধিনায়কের সঙ্গে, চেতেশ্বর পূজারাকে বোকা বানিয়ে তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ড। ডিপ স্কোয়্যার লেগ রেখে তাঁকে হুক মারতে প্রলুব্ধ করার ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে দেখেও মারতে গেলেন পূজারা। দলের তিন নম্বর ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে সংযম আশা করা হয়। মাচা বাঁধা হয়েছে দেখেও তিনি সাবধানী হলেন না। শিকারির হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে এলেন। ভারত তখন ৮২-৩ এবং ‘লর্ডস’-এর মেঘলা আকাশ মাথায় নিয়ে লাঞ্চে গেলেন কোহালি।

তখনকার মতো দেখে মনে হচ্ছিল, সফরে প্রথম বার একটা দু’ঘণ্টার পর্বে শাসক হতে হতেও ফের রাশ আলগা করে ফেলল ভারত। প্রত্যাশা মতোই তিনটি পরিবর্তন করে নামল কোহালির দল। তার মধ্যে ওপেনার হিসেবে শিখর ধওয়নকে ফেরানোটা নিশ্চয়ই সব চেয়ে বিতর্কিত। উপমহাদেশের বাইরে ধওয়নের ওয়ান ডে-সুলভ ব্যাটিং কোনও কাজে আসবে না বলে রায় দিয়ে রেখেছেন পণ্ডিতরা।

এ দিন কিন্তু ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের রিংটোন সেট করে দিয়ে যান ধওয়ন। শুরু থেকে তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ব্যাট করছিলেন। আলগা বল পেলে মারছিলেন। খুচরো রানের জন্য দৌড়চ্ছিলেন। প্রথম উইকেটে ৬০ তুললেন তিনি এবং কে এল রাহুল। খুব ছোট একটা পার্টনারশিপ কিন্তু বিশ্বাস ফিরিয়ে আনে ওই ৬০ রানই। ধওয়নের ৬৫ বলে ৩৫ প্রভাবের বিচারে অন্তত হাফ সেঞ্চুরির সমান। ডেভিড গাওয়ারকে পর্যন্ত বলতে শোনা গেল, ‘‘সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটা খেলেছে ধওয়ন। ওর ইতিবাচক শরীরী ভাষা অনেকটাই তফাত করে দিয়েছে সকালে।’’

সকালে তৈরি হওয়া বিশ্বাস হারিয়ে গিয়ে ফের অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আশঙ্কার মধ্যে উদ্ধারকার্য শুরু করলেন কোহালি এবং রাহানে। অসাধারণ সব স্ট্রোক খেললেন দু’জনে। কোহালির সেরা শট ভারতের প্রথম তিন উইকেটের তিনটিই নেওয়া ক্রিস ওকসকে মারা অফড্রাইভ। রাহানে কাট মারছিলেন চাবুকের মতো। এক বার এত জোরে কাট মারলেন যে, বল দেখতে না পেয়ে হাত দিয়ে মাথা ঢেকে বাঁচতে চাইলেন বেন স্টোকস। কাছাকাছি সময়ে গ্যালারিতে রবিনহুড। ট্রেন্ট ব্রিজে এই সাজসজ্জা দেখা যাবে বলেই আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ডের পরিস্থিতি দেখে চিন্তিত রবিনহুড দেখা যাবে, কে ভেবেছিল!

নটিংহ্যামের ক্রিকেটীয় কিংবদন্তি— তিনি, হ্যারল্ড লারউডও তো উপস্থিত ছিলেন। মাঠের মধ্যে বেন স্টোকসের সাজসজ্জা নিয়ে। ডগলাস জার্ডিনের মতোই যে এ দিন কোহালি আর রাহানেকে বডিলাইন বোলিং দিয়ে আক্রমণ করলেন জো রুট। লেগসাইডে ফিল্ডার সাজিয়ে বাউন্সার বৃষ্টি ঘটানোর নির্দেশ দিলেন। চা-পানের আগে নিজের শহরে স্টোকসদের বডিলাইন দেখে নিশ্চয়ই ফের মনে-মনে হাসলেন লারউড। আর বললেন, ‘‘আমার দোষ হয়েছিল। পরে সবাই টুকল।’’

বডিলাইন চলল প্রায় আধ ঘণ্টা। দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যান বুক চিতিয়ে সেই আগুন সামলালেন। রাতে হোটেলে ফিরে গিয়ে এই অংশটা মনে পড়লে সব চেয়ে ছটফট করবেন কোহালি এবং রাহানে যে, বডিলাইন সামলেও উইকেট দিয়ে এলাম!

সকালে কোহালি টস হারার পরে অবশ্য অনেকে তাঁর মন্তব্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেন। হোল্ডিং জিজ্ঞেস করলেন— বিরাট, টস জিতলে তুমি কী করতে? ভারত অধিনায়ক বললেন, ‘‘আমি ব্যাট করতাম।’’ ইংল্যান্ডের সাংবাদিকেরা শুনেই হাসাহাসি শুরু করে দিলেন। কটাক্ষ মিশিয়ে কেউ কেউ বলতে থাকলেন, এই ব্যাটিয়ের অবস্থা আর ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন কি না বলছে টস জিতলে ব্যাটিং করত! তাঁরা অবশ্য দিনের শেষে প্রশ্ন তুলছেন, জো রুটই ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন কি না?

দিনের শেষে কোহালি-রাহানের পাশাপাশি চর্চা ঋষভ পন্থকে নিয়ে। যিনি টেস্ট ক্রিকেটে রানের খাতা খুললেন আদিল রশিদকে ছক্কা মেরে। তা-ও কি না রশিদ আগের ওভারেই কোহালিকে তুলেছেন। কারও কারও কপিল দেবের সেই এডি হেমিংসকে টানা চারটি ছক্কা মেরে ফলো-অন বাঁচানোর ঘটনা মনে পড়ে গেল। দিনের শেষে ভারত ছয় উইকেটে ৩০৭, পন্থ ৩২ বলে ২২ ব্যাটিং। মাইকেল ভনের মতো প্রাক্তন ইংল্যান্ড ক্রিকেটারেরা পর্যন্ত উত্তেজিত। ‘‘আইপিএলে অনেক দেখেছি ঋষভের ব্যাটিং। পাওয়ারহিটার। রবিবার সকালে লড়াইটা ওর সঙ্গে ইংল্যান্ডের,’’ বলে গেলেন ভন। পরে সাংবাদিক বৈঠকে এসে ভারতের ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার বলে যান, পন্থ তাঁকে বিনোদ কাম্বলির কথা মনে করাচ্ছেন। বাঙ্গার বলেন, ‘‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কাম্বলির প্রথম স্কোরিং শট ছিল ছয়।’’

যদি ঋষভ এবং অশ্বিন মিলে চারশোর কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারেন প্রথম ইনিংস স্কোরকে, এগারো বছর আগের ট্রেন্ট ব্রিজ ফেরার স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে!

অন্য বিষয়গুলি:

Rishabh Pant Cricket India-England
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE