Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
কঠিন মুহূর্তে বেশি সাহস দেখিয়েছে ইংল্যান্ড, বলছেন বিরাট

সিরিজ হারের পর প্রশ্ন উঠে গেল হার্দিক-ঋষভদের নিয়ে

কোহালি মনে করছেন, ইংল্যান্ডের নীচের দিকের মিডল-অর্ডার এবং টেলএন্ডাররা ভারতীয়দের চেয়ে অনেক বেশি লড়াকু মানসিকতা দেখিয়েছেন। এবং, ঠিকই মনে হচ্ছে তাঁর। ভারতের দিকে হার্দিক পাণ্ড্য, ঋষভ পন্থ দুই ইনিংসে ব্যর্থ।

দুই ইনিংসেই ব্যর্থ ঋষভ পন্থ।

দুই ইনিংসেই ব্যর্থ ঋষভ পন্থ।

সুমিত ঘোষ
সাউদাম্পটন শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৯
Share: Save:

টেস্টের কঠিন মুহূর্তগুলোতে ইংল্যান্ড বেশি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন বিরাট কোহালি। ভারত অধিনায়ক বলছেন, সেটাই আসল পার্থক্য করে দিয়েছে এই টেস্টে। পাশাপাশি, মেনে নিচ্ছেন কাছাকাছি এসেও জয়ের সীমানা অতিক্রম করতে না পারার রোগ দ্রুত সারিয়ে তুলতে হবে।

এই নিয়ে পর-পর তিন বার জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেও পারল না ভারত। এ বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন, এই সিরিজে এজবাস্টনে প্রথম টেস্ট এবং রবিবার সাউদাম্পটনে। শেষ ইনিংসে দু’শো রানের টার্গেটের আশেপাশে পেয়েও জিততে পারল না দল। সকালে ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী বলছিলেন, ইংল্যান্ড অনেকটা ‘লিড’ পেয়ে গেলেও ম্যাচ পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। তাঁরা খুব ভাল ভাবেই ম্যাচে আছেন। শাস্ত্রীর কথা সঠিক প্রমাণ করার জন্য দরকার ছিল একটা ভাল শুরু। কিন্তু ২৪৫ রানের টার্গেটের সামনে নবম ওভারেই ২২-৩ হয়ে যায় ভারত। ড্রেসিংরুমে ফিরে যান কে এল রাহুল, শিখর ধওয়ন এবং চেতেশ্বর পূজারা। বিশেষ করে পূজারার আউটে সব চেয়ে ধাক্কা লাগে। প্রথম ইনিংসে তিনি অনমনীয় থেকে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ সব কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর দেওয়াল হয়ে ওঠাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

কোহালি মনে করছেন, ইংল্যান্ডের নীচের দিকের মিডল-অর্ডার এবং টেলএন্ডাররা ভারতীয়দের চেয়ে অনেক বেশি লড়াকু মানসিকতা দেখিয়েছেন। এবং, ঠিকই মনে হচ্ছে তাঁর। ভারতের দিকে হার্দিক পাণ্ড্য, ঋষভ পন্থ দুই ইনিংসে ব্যর্থ। অশ্বিন প্রথম ইনিংসে রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়ে গিয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও কোহালি-রাহানের জুটি বাদ দিলে কেউ সে ভাবে প্রতিরোধ দেখাতে পারেননি। ও দিকে, স্যাম কারেন দুই ইনিংসেই ইংল্যান্ডের হয়ে মূল্যবান রান যোগ করে দিয়ে গিয়েছেন।

উৎসব: কোহালিকে আউট করার পরে মইনকে নিয়ে সতীর্থরা।

কোহালি সে সব দিকেই ইঙ্গিত করছেন। যদিও সতীর্থদের কাউকে কাঠগড়ায় তুলতে চান না। প্রতিপক্ষকেই কৃতিত্ব দিয়ে বললেন, ‘‘ওরা অক্লান্ত ভাবে চাপটা রেখে গিয়েছে। ম্যাচের কঠিন মুহূর্তগুলোতে আমাদের চেয়ে বেশি সাহস দেখিয়েছে।’’ চোখেমুখে হতাশা। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালবাসেন কোহালি। সিরিজ শেষ হওয়ার আগেই যে সিরিজের ফয়সালা হয়ে গেল, সেই অপমান তাঁকে আঘাত করবে। কিন্তু দলের বাকিদের কতটা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে, সেটাও দেখার। হার্দিক পাণ্ড্য, ঋষভ পন্থরা স্টাইল ভাই হয়ে নানা রকম চুলের ছাঁট দেবেন নাকি সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন তারকা হতে পারবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকবে ক্রিকেট মহল।

পরাজয়ের যন্ত্রণার মধ্যেও ‘স্পোর্টসম্যান স্পিরিট’ হারালেন না। অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন স্যাম কারেনকে। বললেন, ‘‘দারুণ এক জন ক্রিকেটার। আমি স্যাম কারেনকে অভিনন্দন জানাতে চাই।’’ এজবাস্টন এবং সাউদাম্পটন— দু’জায়গাতেই জেতার মতো অবস্থা ছিল কোহালির দলের। এবং দু’টো মাঠেই কারেন কাঁটা হয়ে বিঁধলেন তাঁদের। ভারত অধিনায়ক তাই জানেন, মইন আলি ম্যাচের সেরা হলেও কে তাঁদের সিরিজ থেকে ছিটকে দিল। এজবাস্টনে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডকে চেপে ধরার পরেও ব্যাট হাতে কারেন-ঝড় ভারতের সামনে টার্গেট স্কোর বাড়িয়ে দেয়। এখানেও প্রথম ইনিংসে ৮৬-৬ থেকে কারেনের ৭৮ ইংল্যান্ডকে পৌঁছে দেয় ২৪৬ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসেও বাঁ হাতি অলরাউন্ডার করে যান ৪৬।

কোহালি যদিও ম্যাচে কী হল না তার চেয়ে বেশি করে ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজতে চান। বললেন, ‘‘অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা করা যেতে পারে। অনেক কিছু ঘটেছে এই টেস্টে। কোনটা হলে কী হত, কোনটা না ঘটলে আমরা জিততে পারতাম কি না, সে সব নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। তবে খুব নেতিবাচক দিক নেই।’’ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন চেতেশ্বর পূজারার। ‘‘প্রথম ইনিংসে পূজারা আমাদের টেনে নিয়ে গিয়েছে। না হলে লড়াইয়ের জমিটাই হয়তো পাওয়া যেত না।’’ তার পরে যদিও স্বীকার করে নিচ্ছেন, প্রথম ইনিংসে তাঁরা যেমন রানটা কম করেছেন, তেমনই ইংল্যান্ড একটু বেশি রানের ‘লিড’ পেয়ে যায়। মনে করছেন, তাঁদের সামনে টার্গেট স্কোর আরও কম হতে পারত। ‘‘পিচে প্রত্যেকটা বলই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল। আমরা জানতাম, ভাল শুরু দরকার। সেটা হয়নি। আমি জিঙ্কস (রাহানে) প্রত্যেকটা বল ধরে ধরে খেলব ঠিক করেছিলাম। আমাদের পার্টনারশিপ হল কিন্তু এ রকম পরিস্থিতিতে একটা উইকেট যাওয়া মানেই ফের চাপ তৈরি হয়ে যাওয়া,’’ ব্যাখ্যা তাঁর।

দল যে লড়াই করেছে, সেটা তাঁকে হারের যন্ত্রণার মধ্যে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিচ্ছে। ‘‘লর্ডস টেস্ট বাদ দিলে আমার মনে হয় না কোনও ম্যাচ একপেশে হয়েছে। দু’টো দল সমানে-সমানে লড়াই করেছে। টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য এটাই,’’ বলে দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘সিরিজের ফয়সালা হয়ে গেলেও ওভালে আমরা একই রকম তীব্রতা নিয়ে মাঠে নামব।’’

নয় উইকেট নিয়ে প্রত্যাবর্তনেই ম্যাচের সেরা মইন আলি বলে গেলেন, মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন দলে ফেরার জন্য। ‘‘বাড়িতে টিভি-তে ওদের খেলা দেখতে দেখতে সত্যিই ক্লান্ত হয়ে উঠছিলাম। টেস্ট ক্রিকেটকে খুব মিস করেছি। দারুণ লাগছে ফিরতে পেরে। সব চেয়ে ভাল লাগছে দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরেছি ভেবে,’’ বললেন মইন। তাঁকে অফস্পিনার হিসেবে পরিণত করে তুলেছেন সাকলিন মুস্তাক। বারবার স্পিন গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গেলেন। আইপিএলে কোহালির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়েই খেলেন মইন। তাঁর আইপিএল অধিনায়ককে হারিয়ে নিজের ক্রিকেটজীবনই বাঁচিয়ে তুললেন।

ছবি: রয়টার্স।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE