ফাইনাল দেখতে মহাতারারা। রবিবার ইডেনে রণবীর সিংহ, ফারহান আখতার ও অনিল কপূর। ছবি: উৎপল সরকার।
বি ব্লকের একদম বাঁ দিকের কর্পোরেট বক্সটা গোটা আইপিএলে বরাদ্দ থাকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জন্য। মাঠে কেকেআর খেলছে মানে দর্শকদের চোখ বাইশ গজে তো থাকেই, মাঝে মধ্যেই আবার ঘুরে যায় ওই বক্সটার দিকে। ওখানেই তো ‘দর্শন’ মেলে জুহি চাওলা, সুস্মিতা সেন, গৌরি খান, ঊষা উত্থুপদের। ভাগ্য সহায় থাকলে ওই বারান্দায় এসে দাঁড়ান পাঁচ ফুট ছয়ের এক মেগাস্টার। দেশের মাটিতে সাতটা আইপিএলে যাঁর সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েছে ইডেন গার্ডেন্স।
আজ ইডেনে কেকেআর নেই। ট্রফির দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে অনেক আগেই। তিনি, শাহরুখ খানও নেই। হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পর বেড রেস্টে। আর ইডেনে তাঁর ডেরা থেকে আজ সোনালি-বেগুনি রংও উধাও। বদলে সেখানে দুলছে এক ঝাঁক গাঢ় নীল পতাকা। কোথাও উঁকি মারছে উজ্জ্বল হলুদ।
আইপিএলে তারকা কি কম পড়িয়াছে?
রবিবারের ফাইনালের আগে শাহরুখহীন ইডেনকে দেখে যদি কোনও দর্শকের মনে প্রশ্নটা উঁকি মেরে থাকে, তা হলে তার উত্তরটাও পেয়ে যাওয়ার কথা খুব দ্রুত।
কারণ শাহরুখ খান নেই, তবু আজ ওই বক্সের দিকে গোটা বি ব্লক হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। ওই বারান্দার দিকে তাক করে আছে শয়ে শয়ে মোবাইল ক্যামেরা। ওই দিকে এগিয়ে যাচ্ছে টুকরো টুকরো কাগজ, যদি একটা অটোগ্রাফ পাওয়া যায়।
শাহরুখ খান নেই, কিন্তু তাঁর বক্সে তারকা মোটেও কম পড়েনি! বারান্দার যে কোণটা জুহির পছন্দের, সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁরই এক সময়কার সহ-অভিনেতা অনিল কপূর। পাশে ধুসর টি-শার্ট আর জিনসে ফারহান আখতার। আর মাঝামাঝি যিনি দাঁড়িয়ে, রবিবারের ইডেনে দেখা গেল তাঁকে ঘিরে উত্তেজনাটাই সবচেয়ে বেশি। তিনি, রণবীর সিংহ।
ইডেনের রাস্তা ধরার আগে রবিবার বিকেলে আনন্দবাজার অফিসে বসে রণবীর বলছিলেন, ‘ইলেকট্রিক’ একটা সন্ধের অপেক্ষায় আছেন। বলছিলেন, এ বারের আইপিএলে আরসিবির একটাও ম্যাচ না দেখতে পারার আফসোসের কথা। ‘‘খুব দুঃখ হচ্ছে যে এ বার বেঙ্গালুরুর একটাও ম্যাচ দেখতে পেলাম না। আমার তিন প্রিয় ক্রিকেটার ওই টিমে খেলে। বিরাট কোহলি, ক্রিস গেইল, এবি ডে’ভিলিয়ার্স। এখানে মুম্বইকে সাপোর্ট করতে এসেছি, কিন্তু আমার ধোনিকেও দারুণ লাগে।’’
বক্তাকে কেন আধুনিক বলিউডের অন্যতম পুরুষ ফ্যাশন আইকন বলা হচ্ছে, সেটা তাঁর পোশাকেই পরিষ্কার। কালো শর্টসের সঙ্গে হাতা গোটানো সাদা ফুল-স্লিভ শার্ট। কুচকুচে কালো ডিজাইনার সানগ্লাস, স্নিকার্স আর তাঁর ট্রেডমার্ক হতে চলা কালো হ্যাট। ঘণ্টাখানেক পর যখন ইডেনে আবির্ভাব, দেখা গেল ডান হাতটা ঝুলছে একটা কালো স্লিংয়ে। কিন্তু তাতে রণবীরের উৎসাহ কমে তো নিই-ই, বরং তাঁর চোখেমুখে ইডেনে প্রথম আইপিএল শো দেখতে আসার বিস্ময়, একসঙ্গে ছেষট্টি হাজারের চিৎকারের ঘোর।
ইডেন-বিহ্বলতার মধ্যেই চলল জোয়া আখতারের নতুন ফিল্ম ‘দিল ধড়কনে দো’র প্রোমোশন। ফিল্মের অন্যতম তারকা অনিল কপূর বলে দিলেন, রণবীরই নাকি তাঁদের ‘ডি থ্রি’ পরিবারের ক্যাপ্টেন। দীপিকা পাড়ুকোনের ‘বিশেষ বন্ধু’ যখন প্রায় চিৎকার করে বলে যাচ্ছেন ‘আয়্যাম অন টপ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’, পাশে দাঁড়ানো ফারহান তখন অনেক সংযত। হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘আইপিএল উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে এসেই বলেছিলাম, মুম্বই ফাইনালে উঠবে। দেখলেন তো?’’
দু’চোখ ভরে দেখে রাখল ইডেন। দেখল, গ্যালারি শো-তে কোনও অংশে এসআরকের চেয়ে কম যান না রণবীর। দেখল, স্লিংয়ে ঝোলানো হাত নিয়েও রেলিং ধরে উঠে পড়তে তাঁর একটুও অসুবিধে হয় না। দেখল, ডিজের গানের সঙ্গে মুহূর্তে মুহূর্তে নতুন নাচের স্টেপ আমদানি করছেন তিনি। দেখল, রোহিত শর্মার ওভার বাউন্ডারির খুশিতে অনিল-ফারহানের সঙ্গে তাঁর মিনি মেক্সিকান ওয়েভ। দেখল, ধোনির উইকেট পড়ার উত্তেজনায় বক্স থেকে তাঁর প্রায় উল্টে পড়ে যাওয়া। দেখল, গ্যালারির দিকে তাঁর অবিরাম হাত নাড়া আর ফ্লাইং কিস। দেখল, সন্ধে ছ’টায় তিনি যে রকম উচ্ছল, মধ্যরাত পেরিয়েও তাই।
আর সব দেখেশুনে হয়তো অবাক হয়ে ভাবল, এই মানুষটা কি রক্তমাংস দিয়ে তৈরি, নাকি নিখাদ মূর্ত প্রাণশক্তি?
বাদশার ইডেন-সাম্রাজ্যের মালিকানা নিতে হলে রণবীরকে আরও অনেকটা পথ পেরোতে হবে। কিন্তু ইডেনের যুবরাজের সিংহাসনটা তাঁকে দিতে বোধহয় আপত্তি করবে না কলকাতা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy