অশোক দিন্দা ১০-০-১৯-৭। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
আতঙ্কের নাম অশোক দিন্দা।
পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ ওভারে ১৯ রানে সাত উইকেট!
আতঙ্কের নাম কল্যাণীর বাইশ গজ।
পরিসংখ্যান বলছে, দু’দিন না গড়াতেই ৪০ উইকেট! ওড়িশা দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ৩৭ রানে!
দু’দিনের অবিশ্বাস্য এই ক্রিকেটের পর ছ’পয়েন্ট পেয়ে বাংলার লিগ টেবলে শীর্ষে উঠে আসাটা ক্রিকেট মহলে এক নম্বর আলোচনা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সামনে চলে আসছে বিতর্কিত বাইশ গজ। যে পিচ নিয়ে ওড়িশা ইতিমধ্যেই সরকারি ভাবে অভিযোগ জানিয়েছে ম্যাচ রেফারির কাছে। যে পিচ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হওয়া উচিত কি না?
সন্ধ্যায় সিএবি প্রেসিডেন্ট এবং সদ্য বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান হওয়া সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘আমাদের পেসার-স্পিনার-ব্যাটসম্যানরা তো একই উইকেটে খেলেছে। ওদের তো সমস্যা হয়নি। আমি আজ মাঠে ছিলাম না। জানি না, ওড়িশার কী সমস্যা হয়েছে।’’ কিন্তু ওড়িশা যে অভিযোগ জানিয়েছে? সৌরভ বলছেন, ‘‘সেটা ওদের ব্যাপার।’’ ম্যাচ শুরুর আগে বলা হচ্ছিল, টার্নিং উইকেট। প্রথম দিন স্পিনারদেরই রাজ ছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা বাদেই হুঙ্কার পেসারদের। ওড়িশার বসন্ত মোহান্তি বাংলাকে থামিয়ে দেওয়ার পর দিন্দার এই ভয়ঙ্কর স্পেল। যে দিন্দা দু’দিন আগে প্র্যাকটিসে বলের চেয়ে ব্যাট হাতে বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেছিলেন। যাঁকে আগের দিন তিন ওভারের বেশি বল দেওয়াই হয়নি, সেই দিন্দাই মঙ্গল-বিকেলের আতঙ্ক! এমনকী একটা সময় মনে হচ্ছিল রঞ্জিতে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড (হায়দরাবাদের ২১) না ভেঙে দেয় ওড়িশা।
কেন এমন হল? পেসারদের বল কখনও লাফিয়েছে, কখনও নিচু হয়েছে। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যাটসম্যান শরীরে খেয়েছেন, হেলমেটে খেয়েছেন। অভিমন্যু ঈশ্বরন এলবিডব্লিউ হয়েছেন প্রায় গড়িয়ে যাওয়া একটা বলে। ওড়িশা অধিনায়ক নটরাজ বেহরা তো স্বীকারই করে নিলেন, ‘‘বাংলার ব্যাটসম্যানরা হেলমেটে খাচ্ছে দেখে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভয় পেয়ে যায়। ম্যাচ জিততে গিয়ে কি দলকে হাসপাতাল বানাব?’’ ওড়িশা শিবিরের অভিযোগের মোদ্দা কথা এটাই— ‘‘আনপ্লেয়েবল উইকেট। এখানে ব্যাটসম্যানদের যে কোনও সময় বড় ধরনের চোট হতে পারে।’’ প্রায় একই বক্তব্যের আরও একটা চিঠি আগের দিনই তাঁরা দিয়েছিলেন ম্যাচ রেফারিকে। ম্যাচ রেফারি শক্তি সিংহ এ দিন প্রতি বিরতিতে ছুটে যাচ্ছিলেন মাঠের মাঝখানে। আম্পায়ারদের সঙ্গে যে উইকেট নিয়ে কথাও বলছিলেন, বাইরে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। বিকেলে তিনি বলে দেন, ‘‘ওড়িশার অভিযোগ বোর্ডে জমা পড়েছে। আম্পায়াররা কী রিপোর্ট দেবেন, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’ আম্পায়াররা নিরুত্তর।
মঙ্গলবার সকালে একটা সময় বাংলার স্কোর ছিল ৭৮-৫। সেখান থেকে ১৩৫ অল আউট। বোর্ডে বাংলার ছ’জনের নামের পাশে কোনও সংখ্যা লেখা গেল না। আর ওড়িশার স্কোরবোর্ডে কোনও দু’অঙ্কের সংখ্যাই নেই।
উইকেট নিয়ে যতই বিতর্ক লাগুক না কেন, ঘটনা হল, বাংলা আপাতত টেবল টপার। ৭ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে। এবং নকআউট দেখছে। মনোজ বলছেন, ‘‘আমরা এখন যে কোনও পরিবেশে, যে কোনও উইকেটে খেলার জন্য তৈরি।’’ আর কোচ সাইরাজ বাহুতুলে বলছেন, ‘‘ছেলেদের মধ্যে সেই মানসিকতা এসেছে, যেটা চাইছিলাম।’’
মনোজরা না হয় মাঠের লড়াইয়ে এগোলেন। কিন্তু এই বিতর্কিত পিচের জন্য কাঠগড়ায় উঠতে হবে না তো সৌরভদের? প্রশ্নটা কিন্তু উঠে পড়ল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা প্রথম ইনিংস ১৪২। ওড়িশা প্রথম ইনিংস ১০৭। বাংলা দ্বিতীয় ইনিংস ১৩৫ (বসন্ত ৫-১৬)। ওড়িশা দ্বিতীয় ইনিংস ৩৭ (দিন্দা ৭-১৯, ওঝা ৩-১৪)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy