গভীর রাত পর্যন্ত প্রহ্লাদ সর্দারের ক্যারাটে অনুশীলন দেখে পাড়ার লোকেরা প্রহ্লাদের নাম দিয়েছেন ‘ব্রুস লি’। প্রতীকী ছবি।
আরও কিছুটা স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছলেন বাঘা যতীনের ‘ব্রুস লি’ প্রহ্লাদ সর্দার। সাউথ এশিয়া স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপে ক্যারাটের দু’টি বিভাগে (কাতা এবং কুমিতে) সোনা জিতেছেন তিনি। শনিবার সেই খবর জানাতে গিয়ে হলদিয়া থেকে প্রহ্লাদ বলেন, ‘‘বাবা-মাকে খুব মনে পড়ছে। মাকে ফোনে বলেছি। কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। এ বার ভাল করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি নিতে হবে।’’
গত শুক্রবার থেকে এশিয়া স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে হলদিয়ায়। চলবে আজ, রবিবার পর্যন্ত। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান-সহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ অংশগ্রহণ করেছে এই প্রতিযোগিতায়। প্রহ্লাদ জানান, শ্রীলঙ্কা আর বংলাদেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে জোর টক্কর হয়েছে তাঁর। শুক্রবার ‘কাতা’-এ (ক্যারাটের বিভিন্ন কসরতের একক উপস্থাপনা) সোনা জয়ের পরে শনিবার ‘কুমিতে’-তেও (দু’জনের মধ্যে লড়াই) সোনা জিতেছেন তিনি।
এ দিন ছেলের সাফল্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন প্রহ্লাদের মা সবিতাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটা নিজের চেষ্টাতেই সব করে। আমরা প্রয়োজনটুকুও মেটাতে পারি না। সোনা জিতেই আমাকে ফোন করেছিল। ফিরলে একটু পায়েস করে খাওয়াব।’’ প্রহ্লাদের বাবা বলেন, ‘‘ক্যারাটে ওর জীবন। খেলতে বারণ করি না আমরা। কিন্তু একটা চাকরির বড় দরকার। সংসার তো চলে না!’’
বাঘা যতীন পূর্ব রাজাপুরে বাবা-মায়ের সঙ্গে টালির বাড়িতে থাকেন প্রহ্লাদ। বাবা সুবল সর্দার এক
কালে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। বহুতল থেকে ইট পড়ে আহত হয়ে আপাতত বাড়িতেই, কর্মহীন। সংসার চালাতে বাড়ি বাড়ি কাজ করেন প্রহ্লাদের মা সবিতাদেবী। আর্থিক কারণে নবম শ্রেণির পরে আর পড়া হয়নি প্রহ্লাদের। সংসার চালাতে প্রহ্লাদ এখন সাইকেলে করে মাংসের দোকানে মুরগি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। সেই সঙ্গে চলে ক্যারাটে অনুশীলন। গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ির সামনের রাস্তায় তাঁর ক্যারাটে অনুশীলন দেখে পাড়ার লোকেরা প্রহ্লাদের নাম দিয়েছেন ‘ব্রুস লি’।
তাঁর লড়াইয়ের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পরে তাঁকে ডেকে কথা বলেন সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ আধিকারিকেরা। প্রহ্লাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তাঁরা তা দেখছেন বলে আশ্বাস দেন। ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দফতর থেকেও প্রহ্লাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এশিয়া স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপে যাওয়ার জন্য প্রহ্লাদকে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে কাউন্সিলর দফতর থেকে। লাজুক স্বভাবের প্রহ্লাদ বলেন, ‘‘সকলে এ ভাবে পাশে থেকেছেন বলেই পারলাম। ফিরে আরও ভাল করে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।’’
টালির ঘরের ছেলের স্বপ্ন কি বিশ্ব ছোঁবে? অপেক্ষা এ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy