প্রজ্ঞান ওঝা। এ বার বাংলায়।
দু’মাসের ক্রিকেট-কারাবাস। অ্যাকশন শুধরোতে হায়দরাবাদের স্থানীয় ক্রিকেটে দিন-রাত পড়ে থাকা। এবং শেষ পর্যন্ত রঞ্জি ট্রফির এলিট-গ্রহের মাটিতে পা।
প্রজ্ঞান ওঝা বাংলায় খেলার ডাক পাওয়ার দিনটাকে মনে রাখলে, দু’মাসের অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়কেও সম্ভবত ভুলতে পারবেন না।
‘‘আমার উপর দিয়ে কী গিয়েছে, আমি জানি। চাকিংয়ের জন্য আচমকা সাসপেন্ড হয়ে গেলাম। সমস্যা বেশি কিছু ছিল না। কিন্তু অ্যাকশন শুধরোতে তখন শুধু ক্লাব ক্রিকেট খেলে বেরিয়েছি হায়দরাবাদে। যাতে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে ভবিষ্যতে আর প্রশ্ন না ওঠে,’’ মঙ্গলবার সন্ধেয় বাংলায় আসার খবর সিএবি যুগ্ম-সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ঘোষণা করার কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইলে আনন্দবাজারকে বলছিলেন প্রজ্ঞান ওঝা।
এক সময় মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিশ্বস্ত সৈনিকদের এক জন ছিলেন। অস্ট্রেলিয়াকে দেশের মাঠে ৪-০ চূর্ণ করার পিছনে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে তাঁর বোলিংও ভুলতে পারেননি মাইকেল ক্লার্করা। প্রজ্ঞানকে তাঁর জীবন রূপকথার শুরু দিয়েছে, কিন্তু শুধুই রূপকথার উপত্যকায় আটকে রাখেনি। কয়েক বছর দেশের হয়ে খেলার পর ধারাবাহিকতার অভাবে টিমে জায়গা হারিয়েছেন। আর গত বছর ডিসেম্বরে তার উপর নেমে এসেছিল নির্বাসনের শাস্তি। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ থাকায় বাদ পড়তে হয়েছে হায়দরাবাদের রঞ্জি দল থেকে। চেন্নাইয়ের স্পোর্টস সায়েন্স সেন্টারে বোলিং পরীক্ষা দিয়ে ফিরতে ফিরতে বেরিয়ে গিয়েছে দু’টো মাস।
‘‘ওই সময়টা নিয়ে আর ভাবতেই চাই না। পরীক্ষা দিয়ে উতরে গিয়েছি ব্যস। ওই সময় আমার পরিবার আমার সঙ্গে ছিল। বাবা-মা অসম্ভব সমর্থন করেছেন। এখন ইন্ডিয়া এ দেখছি। ওখানে ভাল করতে হবে। বাংলা দেখছি। আমাকে বাংলা সুযোগ দিয়েছে যখন, ভাল করতে হবে। আবার একটা একটা করে করে এগোব। আগে ভারত এ। সেই টিমের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কী ভাবে বল করব, ঠিক করতে হবে। তার পর বাংলার চ্যালেঞ্জ,’’ বলছিলেন দেশের হয়ে টেস্টে একশো তেরো উইকেট পাওয়া প্রজ্ঞান। বলে আরও যোগ করে দিলেন, ‘‘হায়দরাবাদ গ্রুপ সি-তে। মানে, প্লেট গ্রুপ। প্লেট গ্রুপের টিমে আর থাকতে চাইনি। চেয়েছিলাম এ বার এলিট খেলব।’’
যে ইচ্ছে দীর্ঘ দিন হায়দরাবাদের হয়ে খেলার পর ওড়িশা-জাত তরুণকে এনে ফেলেছে বঙ্গ ক্রিকেটের উপকূলে। প্রজ্ঞান বলছেন, দু’টো কারণ তাঁর বাংলায় আসার। রঞ্জির বিচারে টিমটার মর্যাদা। আর ইডেন গার্ডেন্স। ‘‘বাংলা ভাল টিম। রঞ্জির বড় টিম। আর ইডেন কখনও খালি হাতে ফেরায়নি আমাকে। যত বার নেমেছি, এই মাঠ আমাকে কিছু না কিছু দিয়েছে। এ বারও আশা করি পাব। আশা করি বাংলাকে ভাল কিছু দিতে পারব।’’
সৌরাশিস লাহিড়ীও যা মানছেন। ওঝার আগমনে বাংলার অভিজ্ঞ অফস্পিনারের মনে হচ্ছে, জোড়া লাভ হল। তিনি এ বার খেললে একটা বোলিং পার্টনারশিপ পাবেন। যা এত দিন পাননি। আর দ্বিতীয়ত, বাংলার বাঁ হাতি স্পিনারদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেল যে টিমে ঢুকতে হলে এ বার প্রজ্ঞান ওঝাকে হারিয়ে ঢুকতে হবে! ‘‘বাংলার পেস আক্রমণ ভাল, স্পিন নয়— এটা ভাবা বন্ধ হবে। বিপক্ষ দু’বার ভাববে বাংলাকে কোন পিচে ফেলব। ওর মতো একজন স্পিনার থাকাটা বিরাট প্লাস পয়েন্ট। ডেভিডদার পর (উৎপল চট্টোপাধ্যায়) কারও সঙ্গে আমার সে ভাবে পার্টরনাশিপ হয়নি। এ বার আশা করছি হবে। ওর সঙ্গে উইকেট পাওয়ার লড়াইটাও জমবে। যেটা টিমেরই ভাল করবে।’’ তবে নতুন স্পিন-জুটিকে নিয়ে বঙ্গ ক্রিকেটমহলে স্বপ্ন দেখা শুরু হলেও সৌরাশিস-প্রজ্ঞানের মধ্যে এখনও কথা হয়নি। ‘‘কলকাতায় গিয়ে বলে নেব। সৌরাশিসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোনও অসুবিধে হবে বলে মনে হয় না,’’ বলে দিলেন প্রজ্ঞান।
প্রায় এক দশক ধরে বাংলার অধিনায়ক-নির্বাচকদের বলতে শোনা যেত, বঙ্গভূমিতে পেসার ওঠে। স্পিনার ওঠে না। তাই আসন্ন মরসুমে বাংলার রঞ্জি পারফরম্যান্সের মতো আরও একটা ব্যাপার দ্রষ্টব্য হবে—ওঝার আগমনে স্পিন-ভূত তাড়ানো গেল, না গেল না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy