Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
ফিফা ফ্রেন্ডলি

ভারতের প্রাচীরে আটকে গেল চিন

ভারতীয় ফুটবলের ছবিটা যে গত কয়েক বছরে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে, তা অনেকে বুঝেও বুঝতে চাইছে না।

মরিয়া: গোল করার চেষ্টা সুনীল ছেত্রীর। এএফপি

মরিয়া: গোল করার চেষ্টা সুনীল ছেত্রীর। এএফপি

শ্যাম থাপা
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪৯
Share: Save:

চিন ০ ভারত ০

চিনের বিরুদ্ধে ম্যাচটার আগে অনেকেই ধরে নিয়েছিল, বড় ব্যবধানে হেরে মাঠ ছাড়বে সুনীল ছেত্রীরা। অতীতের পরিসংখ্যান দিয়ে বলছিল, ভারত কখনও জিততে পারেনি চিনের বিরুদ্ধে। এ বার তো নিজেদের ঘরের মাঠে ওরা ভারতকে দাঁড়াতেই দেবে না।

ভারতীয় ফুটবলের ছবিটা যে গত কয়েক বছরে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে, তা অনেকে বুঝেও বুঝতে চাইছে না। আমরা আগে বিদেশি দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ থাকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম। সুনীল ছেত্রীরা কিন্তু কোনও প্রতিপক্ষকেই ভয় পায় না। ওদের দর্শন হচ্ছে— মাঠে সবাই সমান। কেউ কারও চেয়ে এগিয়ে নেই। এটা সম্ভব হয়েছে আইএসএলের জন্যে। বিদেশি তারকাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে আমাদের ছেলেদের মধ্যে থেকে ভয় উধাও হয়ে গিয়েছে।

এশিয়া ফুটবলে চিন অন্যতম সেরা শক্তি। মার্সেলো লিপ্পির মতো বিখ্যাত কোচ দলের দায়িত্বে। ২০০২ বিশ্বকাপেও খেলেছে চিন। এই মুহূর্তে চিনের ঘরোয়া লিগে বিশ্ব ফুটবলের অসংখ্য তারকা খেলছে। অভিজ্ঞতায় ওরা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাই দেখতে চেয়েছিলাম, আমাদের ছেলেরা কী ভাবে চাপ সামলে লড়াই করে। ম্যাচের পরে দারুণ গর্ব হচ্ছে। গুরুপ্রীত সিংহ, সন্দেশ ঝিঙ্গান, প্রীতম কোটালদের জন্য।

গুরপ্রীত তো শনিবার চিনের সামনে প্রাচীর হয়ে উঠেছিল। একাই অন্তত পাঁচটি নিশ্চিত গোল বাঁচাল। কখনও শরীর শূন্যে ভাসিয়ে। কখনও আবার একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে। প্রশংসা করতে হবে কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনেরও।

চিনের রণকৌশল ছিল, প্রচণ্ড গতিতে আক্রমণাত্মক ও প্রেসিং ফুটবল। ওদের দু’টো শট আমাদের ক্রসবারেও লাগল। এই ধরনের রণনীতির মোকাবিলা করতে হয় খুব ঠান্ডা মাথায়। অর্থাৎ, নিজেদের রক্ষণ মজবুত করে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করার চেষ্টা করা। পুরো ম্যাচে সেটাই করে গেল আমাদের ছেলেরা।

কাউন্টার অ্যাটাক থেকেই ১৩ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত ভারত। রাইটব্যাক প্রীতম কোটালের শট চিনের গোলরক্ষক অবিশ্বাস্য দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেয়। এর মিনিট পাঁচেক পরেই সুনীলের শট ক্রসবারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তবে আমার মতে স্টিভনের সেরা চাল, লেফ্টব্যাক শুভাশিস বসুকে স্টপার হিসেবে খেলানো। সন্দেশ ও শুভাশিস দুর্ধর্ষ খেলল। ওদের দেখে মহেশ গাউলি ও দীপক মণ্ডল জুটির কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। মাসখানেক আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে দেখেছিলাম, ভারতের দুই স্টপার বারবার এক লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছিল। চিনের বিরুদ্ধে সেই ভুলটা হয়নি। শুভাশিসকে দেখে আমার নিজের ফুটবল জীবনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। আমি তখন মোহনবাগানে। অরুণ ঘোষ ছিলেন কোচ। ডুরান্ড কাপ খেলতে গিয়েছি। দিল্লির প্রচণ্ড ঠান্ডায় আমাদের ডিফেন্ডার প্রদীপ চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়ল। অরুণদার মাথায় হাত। আমি বললাম, চিন্তা করবেন না। আমিই স্টপারে খেলব। স্ট্রাইকার হওয়া সত্ত্বেও পুরো টুর্নামেন্টে আমি রক্ষণে খেললাম। মোহনবাগান চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। নতুন জায়গায় খেলার সাহস অনেকেরই থাকে না।

প্রথমার্ধ গোলশূন্য ভাবে শেষ হওয়ায় পরে মনে হচ্ছিল, চিন আমাদের হারাতে পারবে না। সেটাই হল। অ্যাওয়ে ম্যাচে শুরুর পনেরো মিনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই চাপটা সামলে নিতে পারলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সুনীল, জেজে, হোলিচরণরা মাটিতে বল রেখে নিজেদের মধ্যে অসংখ্য পাস খেলছিল। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, লং পাস ওরা প্রায় খেলেইনি। সব চেয়ে ভাল লাগল, অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দল থেকে সিনিয়র টিমে সুযোগ পাওয়া অনিরুদ্ধ থাপা, ফারুখ চৌধুরিরাও দারুণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলল। এই ছন্দ ধরে রাখতে পারলে আগামী বছর এশিয়ান কাপেও আমরা ভাল ফল করব। তবে সংযুক্ত সময়ে ফারুখ অবিশ্বাস্য ভাবে গোল না নষ্ট করলে, এ দিনই নতুন ইতিহাস লেখা হত ভারতীয় ফুটবলে।

ভারত: গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু, সন্দেশ ঝিঙ্গান, নারায়ণ দাস (আনাস এডাথোডিকা), উদান্ত সিংহ (নিখিল পূজারি), প্রণয় হালদার (বিনীত রাই), অনিরুদ্ধ থাপা, হোলিচরণ নার্জারি, জেজে লালপেখলুয়া (ফারুখ চৌধুরি) ও সুনীল ছেত্রী।

অন্য বিষয়গুলি:

Football India PR China FIFA Friendly match
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE