আতঙ্কের ফ্রেডকে ভুলে নতুন ফ্রেডকে ( বাঁ দিকে) নিয়ে স্বপ্ন দেখছে ব্রাজিল।
তাঁর বিখ্যাত বার্সা সতীর্থ চব্বিশ ঘণ্টা আগেই মাঠে নেমে পড়েছেন দেশের জার্সি গায়ে। সেই লিওনেল মেসির রবিবার রাত থেকেই প্রিয় সতীর্থ থেকে মহাপ্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হতে চলেছেন তিনি— নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়র। আর্জেন্তিনার পরের দিনই যে কোপায় নামছে ব্রাজিল!
পেরুর বিরুদ্ধে কোপা অভিযান শুরু করতে চলেছে নেইমারের ব্রাজিল। আর তার ঠিক আগেই নেইমারের দিকে ট্রফি জেতার চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন স্বয়ং ব্রাজিল কিংবদন্তি— পেলে!
ফুটবলসম্রাট তাঁর দেশের বর্তমান প্রজন্মের সেরা ফুটবলারকে সাফ বলে দিয়েছেন, ‘‘বার্সেলোনার হয়ে তো অনেক ভাল ভাল খেললে। এ বার দেখি, ব্রাজিলকেও ট্রফি জেতাও।’’
ফুটবলবিশ্বের এখন সেরা তর্ক ‘ক্লাব বনাম দেশ’! অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এখন নিজেদের একশো শতাংশটা ক্লাবের জার্সিতেই দিচ্ছেন তারকারা। মোটা পেমেন্টের বিনিময়ে। তার চেয়ে অনেক কম পারিশ্রমিকে দেশের হয়ে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার যুগ চলে গিয়েছে। সেই বিতর্কেই যেন আরও ইন্ধন জুগিয়ে পেলে বলেন, ‘‘মেসির মতো নেইমারেরও অবস্থা। যখন মেসি বার্সেলোনার হয়ে খেলে ও জানে ওর ক্ষমতা কী। আর্জেন্তিনার হয়ে সেই জিনিসটা কিন্তু দেখা যায় না। নেইমারের পরিস্থিতিটাও সেই রকম।’’ কোপা প্রচারের অভাবে ভুগলেও পেলের মতে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় ফুটবল টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত প্রতিভার অভাব নেই। ‘‘কোপায় অনেক ভাল প্রতিভা আছে। দেখি, তারা সবাই কেমন খেলে,’’ বলেছেন পেলে।
নেইমারকে কাঠগড়ায় পেলে দাঁড় করালেও পরিসংখ্যান কিন্তু অন্য কথা বলছে। ‘ব্রাজিল ওয়ান্ডারকিড’ দেশের জার্সিতেও ৬৩ ম্যাচে ৪৩ গোল করে ফেলেছেন। এত ভাল ম্যাচ পিছু গোলের পরিসংখ্যান ব্রাজিলের অনেক তাবড় তারকারও নেই। পেলে যখন মনে করছেন ক্লাবের খেলায় বেশি মন দিয়ে দেশের হয়ে পুরোটা দিচ্ছেন না মহাতারকারা, তখন বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারের ঠিক উল্টো পথে গিয়ে ব্রাজিল কোচ দুঙ্গা পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ক্লাবই এক ‘অন্য নেইমার’ উপহার দিয়েছে ব্রাজিলকে।
‘‘নেইমার এখন অনেক উন্নতি করেছে। আগের থেকে অনেক ভাল খেলছে। আর তার জন্য বার্সেলোনাকে কৃতিত্ব দিতে হবে,’’ বলছেন দুঙ্গা। তেইশ বছর বয়সেই জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার চাপ সামলাতে হবে নেইমারকে। কিন্তু সেই পরীক্ষাতেও লেটার মার্কস নিয়ে উত্তীর্ণ হবেন নেইমার, তা-ও মনে করছেন দুঙ্গা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘নেইমার চ্যালেঞ্জ নিতে জানে। ওকে অধিনায়ক করেছি যখন, তখন চাপটাও ঠিক সামলে নেবে ও।’’
কোপায় নামার ঠিক এক দিন আগে চিলি পৌঁছল ব্রাজিল। যতই কোপা প্রচারের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাক, ব্রাজিল নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা একই রকম আছে। ব্রাজিলের প্লেন চিলির টেমুকোতে রানওয়ে ছোঁয়ার পর নেইমার, দানি আলভেজরা যখন একের পর এক টিমবাসে উঠছেন, সেখানে হাজারের বেশি ব্রাজিল সমর্থক দাঁড়িয়ে। সবার আব্দার— সেল্ফি তুলবেন তাঁদের প্রিয় তারকাদের সঙ্গে। সবচেয়ে অবাক করা দৃশ্য, সেই ব্রাজিল সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন টুর্নামেন্টের সংগঠক চিলির প্রচুর মানুষও। নেইমারদের দেখে যাঁরা নিজেদের দেশের দলের কথা ভুলে চিত্কার করছিলেন।
ব্রাজিলের পাশে ‘ফেভারিটের’ তকমা থাকলেও পেরুও কম আত্মবিশ্বাসী নয়। যার অন্যতম কারণ দলে গত বারের কোপায় গোল্ডেন বুট জয়ী পাওলো গেরেরোর এ বারও দলে থাকা। ম্যাচের আগে যিনি হাল্কা করে নেইমারকে কটাক্ষ করেছেন। বলেন, ‘‘ব্রাজিল মানেই শুধু নেইমার নয়। বাকি আরও ফুটবলার রয়েছে। ওদের দলটা ভাল।’’
নেইমার ছাড়াও ব্রাজিল দলের ভরসার আর এক নাম ফ্রেড। তবে নাম ফ্রেড হওয়ায় ব্রাজিল সমর্থকরা প্রার্থনা করছেন ইনি যেন আগের ফ্রেডের মতো না হন। যাঁকে বিশ্বকাপের পর থেকেই ‘জাতীয় ঠাট্টা’ করা হয়েছে। দুঙ্গার ফ্রেড অবশ্য স্ট্রাইকারও নন। মাঝমাঠের ইঞ্জিন। কোপার ওয়ার্ম আপ ম্যাচগুলোয় তাঁর পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে সবার। এক বছর আগেই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। যাঁর প্রশংসায় দুঙ্গা বলেছেন, ‘‘ফ্রেড খুব ভাল খেলছে। আশা করব ও সেই ফর্ম ধরে রাখুক কোপায়।’’ এক দিকে ফ্রেড যেমন নতুন প্রজন্মের তারা, উল্টো দিকে প্রত্যাবর্তনে ফের চমকে দিতে মরিয়া অভিজ্ঞ রবিনহো। চিলির বিরুদ্ধে অতীতে হ্যাটট্রিকও আছে তাঁর।
ম্যাচ ভেনুতে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস চলছে। প্রচণ্ড ঠান্ডা। তার উপর পেরুর মতো অভিজ্ঞ বিপক্ষ। সঙ্গে সেই ক্ষত— শেষ বার কোনও বড় টুর্নামেন্টের ম্যাচ বলতে গত বছর বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সেই ১-৭ হার! প্রতিটা প্রতিকূলকতা টপকে ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার শৃঙ্গে বসতে পারবে কি না সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy