চনমনে: পারলে আমাকে ধরো। মঙ্গলবার ইনদওরের হোলকার স্টেডিয়ামে থেরা ব্যান্ড পরে কোমরের জোর বাড়াতে এ ভাবেই বিশেষ অনুশীলন সেরে ফেললেন ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা। টেস্ট শুরু বৃহস্পতিবার। এএফপি
ঝকঝকে আকাশ। তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেলের দিকে শীতল বাতাস পেসারদের মনোবল বাড়িয়ে দিতে পারে দ্বিগুণ। বলাই যায়, টেস্ট ক্রিকেটের আদর্শ পরিবেশ ইনদওরের হোলকার স্টেডিয়ামে।
সেখানে বাংলাদেশকে স্বাগত জানানো হতে পারে গতিময় পিচে। কারণ, বাংলাদেশ উপমহাদেশের দল। ভারতের মতো স্পিনারদের বিরুদ্ধে সাবলীল। তাই মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মাদের বিরুদ্ধে সবুজ পিচে পরীক্ষায় ফেলে দেওয়া হতে পারে মোমিনুল হকের দলকে।
ইনদওরের বিমানবন্দর থেকে মাঠে যাওয়ার পথে চোখে পড়ল একাধিক হোর্ডিং ও দেওয়াল লিখন। লেখা, ‘‘গো ভিগান, সেভ অ্যানিম্যালস’’। ভিগানিজ়মের চল অন্যান্য শহরের চেয়ে এখানে বেশিই। পশুহত্যা, অথবা কোনও প্রাণীকে বন্দি করে রাখার চলও কম। পশুপ্রেমী এই শহরে একাধিক ভিগান রেস্তোরাঁয় ভিড়। এমনকি ভিগানদের জন্য আলাদা দোকানও রয়েছে।
এমন শহরেই বাংলাদেশকে কঠিন পিচে স্বাগত জানাতে চলেছে ভারত। সব চেয়ে বড় পরীক্ষা ভারতীয় পেস ত্রয়ীর বিরুদ্ধে। শেষ সিরিজে যাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানেরা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টে ইনিংসে হারে ফ্যাফ ডুপ্লেসির দল। এমনকি বিপক্ষ ওপেনারদের একটি ইনিংসেও পঞ্চাশ রানের জুটি গড়তে দেননি শামি, ইশান্তরা। অনভিজ্ঞ বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও সেই ছবি ফিরতে পারে।
এ দিন অনুশীলনের শুরুতে থেরা-ব্যান্ড কোমরে বেঁধে ওয়ার্ম-আপ করেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। কোমরের জোর বাড়ানোর জন্যই ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ ব্যান্ড। ইউসেইন বোল্ট থেকে নোভাক জোকোভিচ, এই বিশেষ ব্যান্ড ব্যবহার করেই কোমরের শক্তি বাড়াতেন। সেই প্রথায় হাঁটছেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরাও। ফিজিক্যাল ট্রেনিং শেষ করেই শুরু হল নেট প্র্যাক্টিস। নতুন বল তুলে দেওয়া হল শামি, উমেশদের হাতে। গত সিরিজের আত্মবিশ্বাস যেন তাঁদের চোখেমুখে। শুধু বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের যে কোনও দলই তাঁদের গতির বিরুদ্ধে সমস্যায় পড়বে।
বাংলাদেশকে গতিময় পিচে স্বাগত জানানোর কারণ কি? বিপক্ষ দলে এমনও শক্তিশালী কোনও পেসার নেই, যাঁকে সামলাতে সমস্যা হতে পারে বিরাট কোহালিদের। মুস্তাফিজুর রহমান দলের সব চেয়ে অভিজ্ঞ পেসার। তিনিই খেলেছেন মাত্র ১৩টি টেস্ট। উইকেটসংখ্যা মাত্র ২৮। আল আমিন হোসেন ছ’টি টেস্ট খেলে মাত্র ছ’টি উইকেট পেয়েছেন। তাঁরাই বাংলাদেশের মূল পেস আক্রমণ। টি-টোয়েন্টি সিরিজে আল আমিন কিছুটা সমস্যায় ফেললেও মুস্তাফিজুর ছিলেন নিষ্প্রভ। মূল শক্তি তাই স্পিনাররাই। অফস্পিনার মেহদি হাসান মিরাজ, বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের উপর নির্ভর করেই ভারতের ২০ উইকেট তোলার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।
উইকেটে ঘাস রাখা নিয়ে পিচ প্রস্তুতকারক সমন্দর সিংহ চৌহান বলছিলেন, ‘‘আবহাওয়া একেবারে শুষ্ক। পিচে ঘাস না থাকলে পাঁচ দিন মাটি ধরে রাখা যাবে না। ভাঙতে শুরু করবে। তা ছাড়া টেস্ট দেখতে এসে সমর্থকেরা যদি ব্যাট ও বলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই দেখতে না পান, তা হলে কেন আসবেন?’’ যোগ করেন, ‘‘এখানে বরাবরই স্পোর্টিং উইকেট বানানো হয়। ২০১৬ এবং ২০১৭ রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল এখানে হয়েছে। স্কোরকার্ড মিলিয়ে দেখে নিতে পারেন, ব্যাটসম্যান ও বোলাররা সমান সুবিধা পেয়েছে কি না।’’
২০১৬ রঞ্জি ট্রফি ফাইনালে শার্দূল ঠাকুরও যেমন ছয় উইকেট পেয়েছিলেন, তেমনই চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন পার্থিব পটেল। ২০১৭ ফাইনালের ছবিও একই রকম। দিল্লি বনাম বিদর্ভ ম্যাচে রজনীশ গুরবাণী ও নবদীপ সাইনি ছ’টি করে উইকেট পেয়েছিলেন। আবার তৃতীয় দিন ১৩৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছিলেন অক্ষয় ওয়াখড়ে। ২০১৬-এ নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে যদিও স্পিন সহায়ক উইকেটই বানানো হয়েছিল। কারণ বিপক্ষে ছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরির মতো পেসার। সমন্দর বললেন, ‘‘পিচে ঘাস নিয়ে কোনও দলই এখনও কিছু বলেনি। আশা করি, ম্যাচের দিনও ঘাস থাকবে।’’
ভারতের সহ অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে বলে গেলেন, ‘‘ভারত সব সময়েই নিজেদের শক্তিতে আস্থা রেখেছে। বিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে ভাবছে না। তবে বাংলাদেশ খুব ভাল দল। টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যে কোনও দলের বিরুদ্ধেই জিততে হবে। অন্যের শক্তির চেয়ে নিজেদের প্রস্তুতিতে ভরসা রাখছি।’’
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পিচে যদি ঘাস থাকে, সে ক্ষেত্রে তিন পেসার নিয়েই নামতে পারে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ তিন পেসার খেলিয়ে মেহদি হাসানকে অলরাউন্ডার হিসেবে খেলায় কি না সেটাই দেখার। বাংলাদেশের ক্রিকেটার মহম্মদ মিঠুন বলছিলেন, ‘‘ভারতীয় পেস আক্রমণ প্রচণ্ড শক্তিশালী। প্রত্যেককে নিজেদের সেরাটা দিতেই হবে।’’ সঙ্গে আর অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজাকে সামলানোর কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। মিঠুনের কথায়, ‘‘ভারতের পেস আক্রমণ শক্তিশালী হলেও স্পিন আক্রমণই বেশি দাপট দেখিয়েছে। তাই স্পিনারদের সামলানোর উপরে নজর দিচ্ছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy