ব্যক্তিগত ভাবে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছেন বিরাট।
চার বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের ইংল্যান্ড সফর এখন অতীত। বিরাট কোহালির কাছে এ বারের ইংল্যান্ড সফর ক্রমে স্বপ্নের সফর হয়ে উঠছে। ব্যক্তিগত ভাবে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছেন বিরাট। দল হিসেবেও ভারতের প্রত্যাবর্তন খুব সম্ভবত এই ট্রেন্ট ব্রিজ থেকেই শুরু হতে চলেছে। পরিস্থিতি, পিচ, ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের হাল, ভারতীয় বোলিং— সব দেখে একটা কথাই বলব। এই টেস্ট ইংল্যান্ডের পক্ষে বাঁচানো কঠিন। আজ, চতুর্থ দিনে না হোক, পঞ্চম দিনে ভারত সিরিজের স্কোর ১-২ করে দেবে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫২-৭ তুলে ডিক্লেয়ার দিয়ে ভারত ৫২১ রানের লক্ষ্য দিল ইংল্যান্ডের সামনে। এত রান তুলে আজ পর্যন্ত টেস্টে কেউ জিততে পারেনি।
বিরাট প্রসঙ্গে আসার আগে ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টটা নিয়ে একটু বলি। পিচে ইতিমধ্যেই ‘ফুটমার্কস’ দেখা যাচ্ছে। চতুর্থ এবং পঞ্চম দিনে নিঃসন্দেহে বল ভাল ঘুরবে। এই ইংল্যান্ড দলে পাঁচ জন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান আছে। যতদূর শুনেছি, আর. অশ্বিন বোলিং করে দিতে পারবেন। আমার মনে হয় না, এই ইংল্যান্ড দলে এমন কোনও ব্যাটসম্যান আছে, যে টেস্টের শেষ দু’দিন ভারতীয় স্পিন সামলাতে পারবে। তা ছাড়া আমাদের পেসাররা প্রথম ইনিংসে কী রকম বল করেছে, সেটা ভুললেও চলবে না।
আগের দিন পেসাররা ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার পরে বিরাটদের সামনে কাজটা ছিল, উইকেটে পড়ে থেকে রান করা। ভারত অধিনায়ক ঠিক সেটাই করে দেখালেন। ছোটবেলায় আমাদের কোচেরা একটা কথা বলতেন। ‘‘বালিশ-বিছানা নিয়ে পিচে যাও, আর ঘুমিয়ে পড়ো।’’ বিরাট ঠিক সেই কাজটাই করলেন। অর্থাৎ কোনও অবস্থাতেই উইকেট দেব না।
বিরাটের (১০৩) এই ইনিংসে সব চেয়ে মনে ধরল ওঁর মনঃসংযোগ আর শৃঙ্খলাটা। কী ভাবে লাল বলের ক্রিকেট খেলতে হয়, সেটা এ দিন দেখিয়ে দিলেন বিরাট। ২৩তম টেস্ট সেঞ্চুরি করার পথে প্রচুর বল ছেড়েছেন। অফস্টাম্পের বাইরে ব্যাট বাড়িয়ে দেননি (এক-আধবার ছাড়া)। বলের জন্য অপেক্ষা করে শট খেলেছেন। এই টেকনিক্যাল রদবদলগুলোই কিন্তু বিরাটকে সাহায্য করেছে চার বছর আগের দুঃসহ স্মৃতি ভুলিয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজের আধিপত্য জারি করতে। উল্টো দিকে চেতেশ্বর পূজারাকে (৭২) পেয়ে যান বিরাট। দ্বিতীয় ইনিংসে পূজারা ২০৮ বল খেললেন। বিরাট ১৯৭। বিরাটের এই সিরিজে মোট রান এখন ৪৪০। সুনীল গাওস্করের এক সিরিজে ৭৭৪ রান টপকে গেলে অবাক হব না।
ইংল্যান্ড বোলাররা এই দু’জনকে টলাতে না পেরে শর্ট বল দিতে শুরু করেন। একা বেন স্টোকসই ৪০টার ওপর শর্ট বল করলেন। কিন্তু বিরাট-পূজারা কেউই ফাঁদে পা দেননি। প্রথম ইনিংসে শর্ট বলে আউট হওয়ার শিক্ষাটা ভাল মতোই নিয়েছেন পূজারা। ইংল্যান্ডের একমাত্র স্পিনার আদিল রশিদকে খুব সাধারণ লেগেছে। লাল বলের ক্রিকেট থেকে এত দিন দূরেই ছিলেন এই লেগস্পিনার। কিন্তু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিরাটকে একটা ভাল বলে আউট করার পরে নির্বাচকেরা রশিদকে টেস্টে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু একটা বল দিয়ে যে টেস্টের গুণগত মান বোঝা সম্ভব নয়, সেটা পরিষ্কার হল। বরং মইন আলির মতো অলরাউন্ডারকে খেলালে পারত ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডকে আরও ডোবাল স্লিপ ফিল্ডিং। দু’দলের স্লিপ ফিল্ডিংই খারাপ হয়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ডকে ভুগতে হচ্ছে বেশি। রবি এবং সোমবার মিলে উইকেটের পিছনে বেশ কয়েকটা ক্যাচ ছাড়ল ইংল্যান্ড। যার মধ্যে কোহালি, পূজারার ক্যাচও আছে। যার ফল তো ভুগতেই হবে। ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার জনি বেয়ারস্টো হাতে চোট পাওয়ায় ইংল্যান্ড আরও সমস্যায়। ইংল্যান্ডের পরিবেশে মাঝে মাঝে বল ব্যাটসম্যানকে পার করে গিয়েও সুইং করে। তখন উইকেটকিপারের হাত ঠিক জায়গায় না থাকলেই চোট পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বেয়ারস্টোর ক্ষেত্রেও তাই হল। বেয়ারস্টো যদি ব্যাট করতে না পারে, তা হলে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামার আগেই তো এক উইকেট হারিয়ে বসে আছে!
ইংল্যান্ড বাঁচার জন্য এখন একটাই প্রার্থনা করতে পারে, ‘আল্লা মেঘ দে, পানি দে।’
স্কোরকার্ড
ভারত ৩২৯ ও ৩৫২-৭ ডি.
ইংল্যান্ড ৬১ ও ২৩-০
ভারত (আগের দিন ১২৪-২-এর পর থেকে দ্বিতীয় ইনিংস)
চেতেশ্বর পূজারা ক কুক বো স্টোকস ৭২
কোহালি এলবিডব্লিউ বো ওকস ১০৩
অজিঙ্ক রাহানে বো রশিদ ২৯
ঋষভ পন্থ ক কুক বো অ্যান্ডারসন ১
হার্দিক পাণ্ড্য ন. আ. ৫২
মহম্মদ শামি ক কুক বো রশিদ ৩
আর অশ্বিন ন. আ. ১
অতিরিক্ত ১১
মোট ৩৫২-৭ ডি.
পতন: ১-৬০ (রাহুল, ১১.২), ২-১১১ (ধওয়ন, ২৩.২), ৩-২২৪ (পূজারা, ৭১.৩), ৪-২৮১ (কোহালি ৯৩.৪), ৫-২৮২ (ঋষভ, ৯৪.৪), ৬-৩২৯ (রাহানে ১০৭.১), ৭-৩৪৯ (শামি, ১০৯.৩)।
বোলিং: জেমস অ্যান্ডারসন ২২-৭-৫৫-১, স্টুয়ার্ট ব্রড ১৬-৩-৬০-০, ক্রিস ওকস ২২-৪-৪৯-১, বেন স্টোকস ২০-৩-৬৮-২, আদিল রশিদ ২৭-২-১০১-৩, জো রুট ৩-০-৯-০।
ইংল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস)
অ্যালেস্টেয়ার কুক ব্যাটিং ৯
কিটন জেনিংস ব্যাটিং ১৩
অতিরিক্ত ১
মোট ২৩-০
বোলিং: যশপ্রীত বুমরা ৩-১-১৬-০, ইশান্ত শর্মা ৪-১-৫-০, আর অশ্বিন ২-১-২-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy