ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের পর ভারতীয় দল। ছবি: পিটিআই
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ শুরুর আগে বিরাট কোহলী বলছিলেন, “কখন, কোথায় আটকে দেওয়া হবে আমরা জানি না। ভবিষ্যতেও এই জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে বেরোতে পারব কি না তাও জানি না। শুধু শারীরিক বাধা নয়, এ যেন এক প্রকার মানসিক ভাবেও আটকা পড়ে যাওয়া।” লকডাউনের এক বছর পার করেও যেন আটকেই রয়েছে খেলাধুলো।
২৩ মার্চ, ২০২০। ভারত জুড়ে শুরু হল লকডাউন। থেমে গেল আই লিগ। পিছিয়ে দেওয়া হল আইপিএল। খেলোয়াড়রা আটকা পড়লেন চার দেওয়ালের মাঝখানে। ছুটে বেড়ানো যাঁদের রোজকার অভ্যেস তাঁরা সকলে গৃহবন্দি।
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০। যে দেশের মানুষের কাছে ক্রিকেট ধর্ম, ক্রীড়া ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সেই ক্রিকেটেরই যেন দারস্থ হল সকলে। তবে দেশের মাটিতে নয়, দুবাইয়ে শুরু হল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। শুরুর আগে চেন্নাই সুপার কিংস দলের বেশ কিছু ক্রিকেটার করোনা আক্রান্ত হওয়ায় টুর্নামেন্ট নিয়েই আশঙ্কা দেখা গিয়েছিল। তবে সেই বাধা টপকে দর্শকহীন মাঠে অনুষ্ঠিত হল আইপিএল।
শুধু দর্শকহীন হওয়াই নয়, বেশ কিছু নিয়ম পাল্টে গেল ক্রিকেটে। বলে থুতু লাগানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা। টসের সময় হাত মেলানোতে নিষেধাজ্ঞা। ম্যাচের সময় বোলারের টুপি, চশমা, রুমাল ধরবেন না আম্পায়ার। এমন বেশ কিছু নিষেধ নিয়েই মাঠে ফিরল ক্রিকেট। স্বস্তি পেলেন ক্রিকেটাররাও। তবে কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল গুঞ্জন। জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে ক্রিকেটারদের মানসিক স্থিতি নিয়ে উঠতে শুরু করল প্রশ্ন।
কোহলী শোনালেন সাবধানবানী। তিনি বললেন, “পরিস্থিতি এমন না হয়ে যায়, যে ক্রিকেটার মানসিক কাঠিন্য দেখাতে পারবে এই সময়, শুধু সেই খেলতে পারবে। না পারলে সরে যেতে হবে অন্য কাউকে সুযোগ করে দিয়ে। সেটা বোধ হয় ক্রিকেটের জন্য ভাল হবে না।” রবি শাস্ত্রী যদিও জানিয়েছিলেন জৈব সুরক্ষা বলয় আরও মজবুত করেছে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক।
ক্রিকেটে কিছু পরিবর্তন এনে শুরু করা গেলেও চিন্তায় পড়লেন অন্য খেলোয়াড়রা। টোকিয়ো অলিম্পিক্স পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আপাতত ঠিক হয়েছে এই বছর ২৩ জুলাই থেকে শুরু হবে সেই প্রতিযোগিতা, বিদেশি দর্শকহীন ভাবে। যে খেলোয়াড়রা টিকিট জোগাড় করে ফেলেছেন তাঁরা চিন্তামুক্ত। যাঁরা পারেননি তাঁদের কী হবে?
ভারতের ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা নেহওয়াল যেমন এখনও অনিশ্চিত। শুরুর দিকে যখন একের পর এক প্রতিযোগিতা বাতিল হচ্ছে সকলে তা গ্রহণ করেছিলেন প্রাণের ঝুঁকির কথা ভেবে। সময় যত এগিয়েছে তত চিন্তা বেড়েছে। তাইল্যান্ড ওপেনে নামার আগে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন সাইনা। শেষ পর্যন্ত খেলতে নামার সুযোগ পেলেও ছিটকে যান দ্বিতীয় পর্বেই। অল ইংল্যান্ড ওপেনে প্রথম পর্বেই থেমে যেতে হয় চোটের জন্য। অলিম্পিক্সের আগে টোকিয়োর টিকিট জোগাড় করতে পারবেন তো তিনি? উত্তর অজানা।
শুধু সাইনা নন, অনিশ্চয়তা আজও গ্রাস করে রয়েছে ভারতীয় ক্রীড়া জগৎকে। মার্চ মাসের শুরুতেই স্পেনে একটি বক্সিং প্রতিযোগিতার ফাইনালে গোটা ভারতীয় দল ছিটকে যায় একজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায়। কোচ বলেন, “কিছু করার নেই। থুতনিতে ঘুষি খেলাম, এগিয়ে যেতে হবে।” যে সব মুষ্টিযোদ্ধারা টিকিট পেয়ে গিয়েছেন তাঁদের অনুশীলনও বন্ধ হয়ে যায় লকডাউনে। যে দেশে লকডাউন কিছুটা হলেও শিথিল সেখানে চলে যান তাঁরা।
শুটাররা এখন বিশ্বকাপের মঞ্চে লড়ছেন দিল্লিতে। এক বছর কোনওরকম প্রতিযোগিতায় অংশ না নিয়েও ছন্দে রয়েছেন তাঁরা। টেবিলটেনিসে অলিম্পিক্সের টিকিট জোগাড় করে ফেলেছেন সরথ কমল, মনিকা বাটরারা।
২৩ মার্চ, ২০২১। কঠিন লড়াই লড়ছে ক্রীড়া জগৎ। তার মাঝেও হাসি ফোটালেন কোহলীরা। পুণেতে একদিনের সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পেল ভারত। সব ধরনের খেলাতেই ধীরে ধীরে ফুটছে আশার আলো। লকডাউনের এক বছর পার করে সচল হচ্ছে ক্রীড়া জগৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy