বিনেশ ফোগাট। —ফাইল চিত্র।
১০০ গ্রাম! ৫০ কিলোগ্রামে এ টুকু ওজন কম-বেশিতে কী যায়-আসে? অনেক কিছু। একটা অলিম্পিক্স পদক হাতছাড়া হয়ে যায়। নিশ্চিত পদক বিনেশ ফোগাটের হাতছাড়া হয়েছে ১০০ গ্রামের জন্যই। ফাইনালের আগের কয়েক ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। তবু সেমিফাইনালের পর কী ভাবে বিনেশের ওজন ২ কিলোগ্রাম বৃদ্ধি পেল?
বেশ কয়েকটি খেলায় শরীরের ওজনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কুস্তি, বক্সিং, ভারোত্তোলন, জুডো, ক্যারাটের মতো খেলাগুলিতে খেলোয়াড়দের শরীরের ওজনের দিকে বাড়তি নজর দিতেই হয়। শরীরের ওজন কখন কমাতে হবে, কখন বৃদ্ধি করতে হবে তা জানেন খেলোয়াড়, কোচেরা। নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি মেনে প্রস্তুতি নেন তাঁরা। বিনেশও সেই পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই গিয়েছেন অলিম্পিক্সের সময়। তবু পারলেন না পদক জিততে।
মহিলাদের কুস্তির ৫০ কেজি বিভাগে খেলেন না বিনেশ। তাঁর বিভাগ ৫৩ কেজি। সেই মতোই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করেন। অলিম্পিক্স খেলতে মরিয়া বিনেশ নিজের ৫৩ কেজি বিভাগে সুযোগ না পেয়ে বেছে নিয়েছিলেন ৫০ কেজি। সেই মতো নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করেন অলিম্পিক্সের কয়েক মাস আগে থেকে। ওজন কমাতে নিরলস পরিশ্রম করেছিলেন। অলিম্পিক্সের ফাইনালে উঠে সেই পরিশ্রমের সুফলও পেয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অপরাজিত থাকা জাপানের প্রতিপক্ষকেও হারিয়ে দিয়েছিলেন। তবু ১০০ গ্রামের জন্য ছিটকে যেতে হল তাঁকে।
৫৩ কেজি থেকে নিজেকে ৫০ কেজির উপযোগী করে তুলতে চেষ্টার খামতি রাখেননি বিনেশ। বিশ্বমানের ফিজিয়ো, পুষ্টিবিদ, শক্তি বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়েছিলেন। ওজন কমানোর জন্য তাঁর জন্য তৈরি করা হয়েছিল কঠোর ট্রেনিং সূচি। সেই মতো সব কিছুই করছিলেন বিনেশ। খেলোয়াড়েরা প্রতিযোগিতার দিন সকালে ওজনের পরীক্ষার সময় বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। যাতে ওজন অনুমোদিত সীমার মধ্যে থাকে। তার পর খেয়ে শরীরে ওজন কিছুটা বাড়িয়ে নেন। কারণ খেলার আগে আর শরীরের ওজন মাপা হয় না। সেমিফাইনালের পর রাতে বিনেশের ওজন ছিল ৫২.৭ কিলোগ্রাম। ৫০ কেজি বিভাগে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য শরীরের ওজন ৫০ কেজি ৫০ গ্রামের মধ্যে থাকা বাধ্যতামূলক। কারণ সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম ছাড় পাওয়া যায়। বিশ্ব কুস্তি সংস্থার অন্য প্রতিযোগিতাগুলিতে ২ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ছাড় পাওয়া গেলেও অলিম্পিক্সের নিয়ম অত্যন্ত কড়া। ঠিক এই জায়গাতেই আটকে গিয়েছেন বিনেশ।
রাতে ৫২.৭ কিলোগ্রাম ওজন হওয়ায় সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে অন্তত ২ কেজি ৬৫০ গ্রাম ওজন কমাতে হত বিনেশকে। দ্বিতীয় দিন কেন এতটা বেড়ে গিয়েছিল তাঁর ওজন? ভারতীয় দল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিন ওজন দেওয়ার পর সকালে এক গ্লাস ফলের রস খেয়েছিলেন বিনেশ। প্রথম ম্যাচের আগে এবং পরে আরও দু’লিটার তরল খাবার খেলেছিলেন। সারা দিন ভারী কিছু না খেলেও শরীর ঠিক রাখতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অল্প পরিমাণ হালকা খাবার খেয়েছিলেন। প্রথম দিন তাঁকে যে ধরনের এবং পরিমাণ খাবার খেতে বলা হয়েছিল, তা মেনে চলেছিলেন বিনেশ। খাবারের পরিমাণ আরও কিছুটা কম হলে হয়তো ওজন বিভ্রাটে পড়তে হত না তাঁকে। আবার এক দিনে তিনটি ম্যাচ খেলার ধকল নেওয়ার জন্য যেটুকু না খেলেই নয়, তা খেতেই হয়েছে।
ওজন কমাতে সারা রাত জেগে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। বাড়তি ওজন ছেঁটে ফেলতে যা যা করা দরকার সব করেছিলেন। চুল ছোট করে ফেলেছিলেন। শরীর থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত বার করে দিয়েছিলেন। শরীরে জলের পরিমাণ যাতে বৃদ্ধি না পায়, তা নিশ্চিত করতে এক ঢোঁক জলও তাঁকে খেতে দেওয়া হয়নি। এত কিছু করেও পারেননি বিনেশ।
১০০ গ্রাম ওজন বেশি হওয়ায় বিনেশ অন্য একটি যন্ত্রে মাপেন। তাতেও ফল বদলায়নি। আর এক বার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে। চাওয়া হয়েছিল কয়েক মিনিট অতিরিক্ত সময়। কিন্তু অতিরিক্ত সময় দিতে রাজি হননি বিচারকেরা। নিয়মের কথা বলে তাঁরা ভারতের আবেদন খারিজ করে দেন।
সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। কোনও অনিয়ম বা হিসাবের ভুল হয়নি। হিসাবের থেকে কম বা বেশি দু’টিই ক্ষতিকর। বিনেশ আসলে হেরে গিয়েছেন নিজের নেওয়া চ্যালেঞ্জের কাছে। ৫৩ কেজির বদলে ৫০ কেজি বিভাগে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়ে শরীরকেই চ্যালেঞ্জ করে বসেছিলেন বিনেশ। আসলে মন আর শরীরের কুস্তিতে পদক হাতছাড়া হয়েছে তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy