নেইমার
দু’বছর আগে বেলো হরাইজন্তের সেই অভিশপ্ত রাতের ছবি আজও ব্রাজিল ভক্তের স্মৃতিতে টাটকা। জার্মানি শুধু এগারো জনকে মাঠে ৭-১ হারায়নি সে রাতে। বরং একটা ফুটবল সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়েছিল। যে যন্ত্রণা থেকে আজও পুরোপুরি বেরোতে পারেনি ব্রাজিল।
কোপার কোয়ার্টারে হার। শতবর্ষের কোপায় আরও খারাপ। গ্রুপেই বিদায়। সেই ঐতিহাসিক হলুদের দাপট যেন কোথাও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তাই তো এ বার নেইমার ও ব্রাজিলের জন্য অলিম্পিক্স হয়ে উঠেছে শাপমুক্তির মঞ্চ।
দু’বছর আগে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে নেইমার ছিলেন না। ডাগআউটে বসেই দেখতে হয়েছিল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ব্রাজিলের স্বপ্ন। এ বার কি সেই ওয়ান্ডারকিড যন্ত্রণা ভুলিয়ে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হতে পারবেন?
ব্রাজিলের প্রাক্তন বিশ্বকাপার জুনিনহো মনে করছেন নেইমার পারবেন সেলেকাও-দের সোনা দিতে। শুধু আবেগটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ‘‘নেইমার দুর্দান্ত প্রতিভা। ওর পায়ে বল থাকা মানেই সবাই আশা করে কিছু না কিছু দেখতে পাবে। কিন্তু ওকে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নেইমার জানে ব্রাজিলের জন্য ও কতটা গুরুত্বপূর্ণ,’’ বলছেন এক সময়ের ব্রাজিলের ফ্রি-কিক স্পেশালিস্ট।
জুনিনহো যেখানে নেইমারকে আবেগপ্রবণ হতে না করছেন, ব্রাজিলের আর এক প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মনে করছেন নেইমারের বিশ্বসেরা হওয়া মাত্র সময়ের অপেক্ষা। ২০০২ বিশ্বকাপের অন্যতম নায়ক রিভাল্ডো বলছেন, ‘‘নেইমার ভবিষ্যতে বিশ্বসেরা ফুটবলার হবেই। এই মুহূর্তে দারুণ ফর্মে আছে।’
মাঠের মধ্যে নেইমার যদি দলের আশার আলো হন তা হলে মাঠের বাইরের আশঙ্কার নামও কিন্তু নেইমার। ওয়ান্ডারকিড যেমন ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে গোল করতে অভ্যস্ত ঠিক তেমনই আবার পার্টি করার জন্যও বিখ্যাত। ওয়ান্ডারকিডের নৈশজীবন নিয়ে কিছু দিন আগেও বিতর্ক তৈরি হয়। সাংবাদিককে কটাক্ষ করে নেইমার বলেও দিয়েছিলেন, ‘‘ম্যাচের আগের রাতেও আমার পার্টি করতে কোনও সমস্যা নেই।’’ দেখা যাচ্ছে তিনি কথাও রেখেছেন। দিন কয়েক আগেই ব্রাজিল দলের সঙ্গে হোটেলে ঘর ভাড়া করে পার্টি করেন বার্সা তারকা।
ওয়ান্ডারকিডের এই পার্টি লাইফস্টাইলই এখন বিতর্কে। কেউ কেউ মনে করেন, মাঠে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে। আবার কেউ কেউ আশাবাদী, ক্লাব ফর্মটা অলিম্পিক্সেও দেখাতে পারবেন নেইমার। তবে প্রতিটা বড় টুর্নামেন্টে নেইমারের শেষটা হয় যন্ত্রণা দিয়েই। বিশ্বকাপে চোট পাওয়ার থেকে কোপায় কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখা, ওয়ান্ডারকিডের গায়ে ব্রাজিল জার্সি মানেই যেন অঘটন।
বৃহস্পতিবার রাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে নামছে ব্রাজিল। তার আগে অবশ্য ব্রাজিল শিবির ও নেইমারকে দেখলে কেউ বলবেই না এঁদের ওপর কোনও চাপ আছে। বরং প্রথম ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেও ট্যাটু নিয়ে মশগুল ব্রাজিল দল। মাঠ এবং মাঠের বাইরে নেইমার এখন সমান ভাবে ফুটবলারদের আইডল। মাঠের মধ্যে স্কিলের জন্য, মাঠের বাইরে তাঁর সব চমকপ্রদ ট্যাটুর জন্য। অধিনায়কের এই ট্যাটু ডিজাইনও এখন টুকছেন বাকি ফুটবলাররা। গ্যাব্রিয়েল জেসুস যেমন ওয়ান্ডারকিডের এক ট্যাটুর হুবহু ডিজাইন নিজের শরীরে করেছেন। ইন্সটাগ্রামে যে ছবি পোস্ট করেন ব্রাজিল অধিনায়ক।
অলিম্পিক্সে ব্রাজিল দলের কোচ রজেরিও মিকাইল। যাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, দলের মহাতারকা নেইমার খুশি মিকাইলের কোচিংয়ে। ‘‘রজেরিও মিকেইল দারুণ লোক। কোচ হিসেবেও খুব ভাল। আশা করছি ওর সঙ্গে আমরা সোনা জিততে পারব,’’ বলছেন নেইমার।
চার বছর আগে লন্ডন অলিম্পিক্সে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ফাইনালে হেরে রূপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলকে। যে দলের সদস্য ছিলেন নেইমারও। তবে ব্রাজিলের পোস্টার বয় মনে করছেন নিজের ঘরের মাঠে খেলা মানে প্রত্যাশার চাপ আরও বেশি। ‘‘ব্রাজিলে খেলা মানে সম্পূর্ণ আলাদা ছবি। ঘরের মাঠে খেলা মানে তো চাপ একটা থাকেই। তবে আমাদের দলটা দারুণ অবস্থায় আছে।’’
ব্রাজিলের গ্রুপে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরাক, ডেনমার্ক
প্রথম ম্যাচ ব্রাজিল বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (বৃহস্পতিবার রাত ১২-৩০)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy