যে দৃশ্য শেষ চারে আর দেখতে চান না এটিকে কোচ। ছবি: উৎপল সরকার।
জোসে মলিনা কি আন্তোনিও হাবাসকেই অনুসরণ করছেন?
কাকতালীয় হতে পারে কিন্তু শুক্রবার ইয়ান হিউমরা গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচ খেলার পর সেটাই মনে হচ্ছে অনেকের।
দু’বছর আগে ২০১৪-তে আইএসএলে আটলেটিকো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে বার কিন্তু গ্রুপ লিগের ১৪ ম্যাচের মধ্যে মাত্র চারটি জিতেছিল হাবাস ব্রিগেড। এ বার জোসে মলিনার এটিকে-রও একই অবস্থা। ১৪টি ম্যাচের মধ্যে চার ম্যাচ জিতেছেন পস্টিগা-হিউমরা। পার্থক্য একটাই, আই এস এল ওয়ানে হাবাসের কলকাতা ১৯ পয়েন্ট পেয়ে তিনে শেষ করেছিল। মলিনার ছেলেরা এ বার ২০ পয়েন্ট পেয়েছে। এটিকে এই মুহূর্তে লিগ টেবলের তিনেই রয়েছে। তা হলে কি আবার ফাইনালে খেলতে দেখা যেতে পারে কলকাতাকে? এ বার কি চ্যাম্পিয়ন হবে এটিকে? কলকাতার কর্তারা এসব দেখে হঠাৎ-ই হাত-গুনতে শুরু করেছেন। আশায় বুক বাঁধছেন।
এটিকে চ্যাম্পিয়ন হবে কী না সেটা জানা যাবে ১৮ ডিসেম্বর রাতে। তার আগে তো সেমিফাইনালের হার্ডল পার হতে হবে মলিনার টিমকে। কিন্তু শেষ চারের লড়াইয়ের আগে মলিনাকে চিন্তায় রেখেছে ঘরের মাঠে এটিকে-র পারফরম্যান্স। সেখানে সাত ম্যাচে জয় যে মাত্র একটি।
ঘরের মাঠে খেলা থাকা মানেই ম্যাচের পর আটলেটিকো দে কলকাতার কোচের গলায় শুনতে পাওয়া গিয়েছে শুধুই হাহুতাশ! কখনও তাঁকে উত্তর দিতে হয়েছে রক্ষণের বিশ্রী গোল খাওয়া নিয়ে, কখনও গোল নষ্ট নিয়ে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কেন এত সুযোগ পেয়েও কলকাতা জিততে পারল না? সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন শুনে মলিনা বললেন, ‘‘এ দিন আমার থেকেও মনে হয় বেশি কষ্ট পাচ্ছে বেলেনকোসো নিজে।’’ ফুটবলারদের বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দাগেন না। কিন্তু এ দিন ঘুরিয়ে স্প্যানিশ কোচ বুঝিয়ে দিয়েছেন, বেলেনকোসোর জন্যই এটিকে-র তিন পয়েন্ট হাতছাড়া করেছে।
শুধু এ দিনের ম্যাচই নয়, এর আগেও এটিকে ফুটবলাররা ঠিকঠাক গোলের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পারার জন্য যে বারবার পয়েন্ট হাতছাড়া করতে হয়েছে কলকাতাকে, সেটা অবশ্য সরাসরি বলে দিয়েছেন। মলিনা। ‘‘আমাদের সমস্যা হল গোল পাচ্ছি না। সুযোগগুলোই ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারছি না। এর আগের দিল্লি, চেন্নাই, কেরল সব ম্যাচেই তো গোল করতে না পারার জন্য পয়েন্ট নষ্ট করতে হয়েছে,’’ হতাশ গলায় বলছিলেন এটিকে কোচ।
তাঁর কথা শুনে মনে হয়েছে টিম সেমিফাইনালে উঠলেও টিমের বেশ কিছু সমস্যায় তাঁর রাতের ঘুম নষ্ট হচ্ছে—
১) গোলের সুযোগগুলো সব সময় ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারছেন না ফুটবলাররা।
২) ডিফেন্সও সে ভাবে জমাট বাঁধছে না। ডিফেন্ডারদের ভুলে বার বার গোল হজম করতে হচ্ছে।
৩) ঘরের মাঠে সাফল্য আসছে না। ৭ ম্যাচে মাত্র একটা জয়। সেমিফাইনালে এটা না ভোগায়।
৪) জেতার অভ্যেস টিমটার তৈরি হয়নি।
চিন্তায় থাকলেও সেমিফাইনালের লড়াইটা একেবারে নতুন ভাবে শুরু করতে চাইছেন মলিনা। তাঁর দাবি, ‘‘আমি জানি ঘরের মাঠে আমাদের রেকর্ড খুবই খারাপ। আমি এটাও জানি, গোলের সুযোগগুলো আমরা নষ্ট করছি বলে জিততে পারছি না। তবে সেমিফাইনালে আমাদের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ। নতুন লড়াই। ’’
এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি যা, তাতে কলকাতাকে শুরুতে হয়তো অ্যাওয়ে ম্যাচই খেলতে হতে পারে। কারণ এ দিনের ম্যাচ ড্র করায় ১৪ ম্যাচে কলকাতার পয়েন্ট ২০। রয়েছে লিগ তালিকার তিন নম্বরে। দিল্লি ডায়নামোসেরও ২০ পয়েন্ট। তবে তারা আরও একটি ম্যাচ খেলবে। মলিনার দাবি, ‘‘আগে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলি বা হোম ম্যাচ, এতে কিছু যায় আসে না। আমাদের জিততে হবে।’’
কলকাতা কোচ যখন ফাইনালের দরজায় কড়া নাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস পরের মরসুম নিয়ে ভাবনায়। পুণেতেই পরের বার থাকছেন তিনি, জানিয়ে দিয়েছেন স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে। আর কলকাতাকে হারাতে না পারায় হতাশ হলেও বলে গেলেন, ‘‘ওদের জন্য শুভেচ্ছা রইল।’’
এটা বলার পর অবশ্য স্প্যানিশ কোচের মুখটা তেতোই দেখাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy