কোচের পিঠে ভরসার হাত দেবজিতের।
প্রশংসা তাঁকে স্পর্শ করে না।
বিরুদ্ধ পরিস্থিতিকেও অনুকূল ভেবে এগোতে তিনি সিদ্ধহস্ত।
আইএসএল ফাইনাল খেলতে শুক্রবার কলকাতা ছাড়ার আগে আটলেটিকো দে কলকাতা কোচ জোসে মলিনা যেন বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন এই দু’টো বিষয়।
নমুনা?
বাইপাসের ধারের পাঁচতারা হোটেলে এটিকে-র ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক অ্যাওয়ে সেমিফাইনালে মলিনার একসঙ্গে ন’জন ফুটবলার পাল্টে টিম নামানোকে চমক বললেন। সঙ্গে সঙ্গে এটিকে কোচ তাঁকে থামিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘চমক আবার কী? আপনাদের মনে হলেও আমার তা মনে হয় না।’’ বলেই ফের সেই রেকর্ড বাজিয়ে দেন, ‘‘আমার টিমে চব্বিশ জনই ফার্স্ট টিমের প্লেয়ার। পরিস্থিতি বুঝে যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করি।’’
তা হলে ফাইনালেও কি ফের অভাবিত কিছু অপেক্ষা করছে মলিনার থেকে? এ বার চিরাচরিত হাসি মুখে সতর্ক ভাবে পরিস্থিতি সামলান কলকাতার স্প্যানিশ কোচ। ‘‘ফুটবলে চমক বলে কিছু হয় নাকি?’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘ফাইনালের টিম এখনও ঠিক করিনি। করলেও আপনাদের বলতে পারব না।’’
আর প্রতিকূলকে অনুকূল বানানো? তাও রয়েছে।
কোচিতেই কি বড়দিন পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন হিউম? শুক্রবারের এটিকে।
এ বার আইএসএলে কোচির স্টেডিয়ামে হলুদ জার্সির প্রত্যেকটা ম্যাচ দেখতে উপচে পড়েছে ভিড়। কোচি থেকে যা খবর, রবিবার ফাইনালে কলকাতার বিরুদ্ধে সচিন তেন্ডুলকরের দল মাঠে বারো জনে খেলবে। মেহতাব, রফিকরা এগারো জন মাঠে। আর দ্বাদশ ব্যক্তি— গ্যালারির ছেষট্টি হাজার কেরল ব্লাস্টার্স সমর্থকের শব্দব্রহ্ম। ফলে বিপক্ষ কোচ স্টিভ কপেলের স্ট্র্যাটেজি ছাড়াও এই ‘বাড়তি’ প্লেয়ারটিকে নিয়ে জেরবার হতে পারে এটিকে। কিন্তু এ দিন এটিকে কোচের শরীরী ভাষা দেখে মনে হল, তিনি যেন এই প্রশ্নটির অপেক্ষাতেই ছিলেন।
ফাইনালে কোচির গ্যালারি নিয়ে মলিনার সোজাসাপ্টা প্রতিক্রিয়া, ‘‘আরে, ওখানে তো লিগের ম্যাচ খেলে এসেছি। জিতেওছিলাম ম্যাচটা। দারুণ পরিবেশ। এখানে সল্টলেক স্টেডিয়াম সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। একমাত্র তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে কোচি স্টেডিয়ামের পরিবেশ।’’ একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন, ‘‘এই বিষয়টা নিয়ে আগের দিনই আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল। ছেলেদের বলেছি, দর্শকরা প্রায় সবাই কেরলের সমর্থক হলেও কিছু আসে-যায় না। বরং ভাবো, এ রকম দর্শক ঠাসা স্টেডিয়ামে খেলতে পারাটাই তো সব প্লেয়ারের স্বপ্ন। ফাইনালের পরিবেশটা উপভোগ করো।’’
এ বার আইএসএলে কেরলের বিরুদ্ধে অপরাজিত কলকাতা। দু’বছর আগে প্রথম আইএসএল ট্রফিও কলকাতায় এসেছিল কেরলকে হারিয়েই। এ দিন সেই প্রসঙ্গ উঠতে অবশ্য থামিয়ে দিলেন মলিনা। সাফ বললেন, ‘‘ওসব অতীত। আমি অতীত নিয়ে বাঁচি না। রেকর্ড ট্রফি জেতাবে না। এ বার চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে কোচিতে সেরা ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের।’’
কোচের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন হিউম। টুর্নামেন্টে সাত গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। হিউমের আগে দিল্লির মার্সেলিনহো (১০ গোল)। ফাইনালে কি হ্যাটট্রিক করে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারবেন এটিকে স্ট্রাইকার? এ দিন সে কথা তুলতে কানাডিয়ান গোলমেশিন বলে দিলেন, ‘‘গোল করাই আমার কাজ। প্রথম বার কেরল জার্সিতে ফাইনাল খেললেও ট্রফি জিততে পারিনি। আর গত বার এটিকের হয়ে ট্রফি জেতা উচিত ছিল আমার। কাজেই রবিবার নিজেকে নিংড়ে দেব মাঠে। আমার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এটিকের দ্বিতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া। বিপক্ষকে নিয়ে বেশি না ভেবে নিজেদের খেলা নিখুঁত করতে দিনরাত খাটছি এখন।’’
টিম কলকাতা শুক্রবারের রাতটা হায়দরাবাদে কাটিয়ে শনিবার সকালেই কোচি পৌঁছে যাচ্ছে। তার পরেই শুরু হয়ে যাবে হিউম-পস্টিগাদের ফাইনাল কাউন্টডাউন!
ছবি: উৎপল সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy