Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নাটকীয় টাই জেতালেন ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ য়ুকি

আরও একটা ‘সুপার সানডে’ ভারতীয় টেনিসে! ঠিক সাত দিনের মাথায়। আগের রবিবার বিয়াল্লিশের লিয়েন্ডারের ষোলোতম গ্র্যান্ড স্ল্যাম-সহ উইম্বলডনের ইতিহাসে ভারতীয়দের সর্বপ্রথম ত্রিমুকুট জয়। এই রবিবার ডেভিস কাপের ইতিহাসে চতুর্থ বার ভারতের ০-২ অথবা ১-২ পিছিয়ে থেকে শেষ দিন নাটকীয় টাই জেতা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০২:৩৬
Share: Save:

আরও একটা ‘সুপার সানডে’ ভারতীয় টেনিসে! ঠিক সাত দিনের মাথায়।

আগের রবিবার বিয়াল্লিশের লিয়েন্ডারের ষোলোতম গ্র্যান্ড স্ল্যাম-সহ উইম্বলডনের ইতিহাসে ভারতীয়দের সর্বপ্রথম ত্রিমুকুট জয়।

এই রবিবার ডেভিস কাপের ইতিহাসে চতুর্থ বার ভারতের ০-২ অথবা ১-২ পিছিয়ে থেকে শেষ দিন নাটকীয় টাই জেতা।

তার চেয়েও বোধহয় তাৎপর্যের, লিয়েন্ডার-উত্তর ভারতীয় টেনিস প্রজন্মের প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠা! আরও সরাসরি বললে, য়ুকি ভামব্রির ‘টেনিস প্রাপ্তবয়স্ক’ হয়ে ওঠা।

এ দিন ক্রাইস্টচার্চে প্রথম রিভার্স সিঙ্গলসে নিউজিল্যান্ডের মার্কাস ড্যানিয়েলকে (ফ্লু-আক্রান্ত সেরা কিউয়ি সিঙ্গলস প্লেয়ার হোসে স্ট্যাথামের বদলি) স্ট্রেট সেটে ৬-৪, ৬-৪, ৬-৪ হারিয়ে সোমদেব দেববর্মন টাইয়ের স্কোর ২-২ করলেও তখনও ভারতের ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফে ওঠার বলতে গেলে কিছুই ঘটেনি।

ওই মুহূর্তে পঞ্চম ‘রাবার’ই সর্বোচ্চ পর্যায়ের দেশজ টেনিস-যুদ্ধে বরাবরের প্রবলতম চাপের সিঙ্গলস ম্যাচ। এবং সেটা সোমদেবের থেকেও কম সময়ে স্ট্রেট সেটে ৬-২, ৬-২, ৬-৩ জিতে যিনি ভারতকে মহাগুরুত্বপূর্ণ টাইয়ে চূড়ান্ত ৩-২ স্কোরলাইনে উদ্ধার করলেন, সেই য়ুকির জীবনের এটাই প্রথম ‘জীবন্ত’ পঞ্চম ‘রাবার’ জয়।


গর্বের দিন

দিল্লির ২৩ বছরের যুবক প্রাক্তন জুনিয়র বিশ্বসেরা। জুনিয়র অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন। লিয়েন্ডারের পর একমাত্র ভারতীয় জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলসজয়ী। কিন্তু গত বছর সেপ্টেম্বরে ঠিক একই পরিস্থিতিতে ঘরের কোর্টে সার্বিয়ার ফিলিপ ক্রাজিনোভিচের কাছে উড়ে গিয়েছিলেন য়ুকি। যে ম্যাচ জিতলেই জকোভিচের দেশকে হারিয়ে ডেভিস কাপের কুলীন হিসেবে পরিচিত ষোলো দেশের ওয়ার্ল্ড গ্রুপে ঢুকে পড়ত ভারত।

তখনই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, তা হলে ডেভিসে রামনাথন-বিজয়-রমেশ-লিয়েন্ডারের পরম্পরা বর্তমান প্রজন্ম ধরে রাখার মতো প্রাপ্তবয়স্ক আর কবে হবে? গুরুতর সেই প্রশ্নের যুতসই উত্তর রবিবার ভারতীয় টেনিস পেয়ে গেল ক্রাইস্টচার্চের হাড়কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যে। ওয়াইল্ড পার্ক টেনিস সেন্টারের ইন্ডোর হার্ডকোর্টে। যদিও সার্বিয়ার ক্রাজিনোভিচ আর নিউজিল্যান্ডের মাইকেল ভেনাস এক নন। কিন্তু ডেভিসে আবার কোনওকালেই এটিপি র‌্যাঙ্কিং তেমন বড় বিচার্য নয়। নইলে এই ‘ওয়ার্ল্ড কাপ অব টেনিসে’ ঐতিহাসিক ভাবে এত ঝুড়ি ঝুড়ি অঘটনের ইতিহাস রচিত হত না। তা ছাড়া পরিস্থিতির বিচারে দু’টোই ডু-অর-ডাই লড়াই। স্বভাবতই তাই য়ুকি মহানায়কের সম্মান পাচ্ছেন এই মুহূর্তে ভারতীয় টেনিসমহল জুড়ে। জয়দীপ মুখেপাধ্যায় থেকে নরেশকুমার, আখতার আলিদের সমবেত মত, এত দিনে সত্যিকারের চাপের মুখে ম্যাচ বার করে নেওয়ার মতো একজন সিঙ্গলস প্লেয়ার পেল ভারতীয় ডেভিস কাপ টিম। যে মহাজয়ে কোনও লিয়েন্ডার, কোনও মহেশ, এমনকী কোনও বোপান্নারও অবদান নেই। তা ছাড়া সোমদেব-য়ুকির এই জয় ক্রাইস্টচার্চের প্রতিকূল আবহাওয়া সামলে বলে, তা যেন আরও বেশি গৌরবান্বিত হচ্ছে।

এর পরে...

পরের বছর ওয়ার্ল্ড গ্রুপে খেলার জন্য ভারতকে এ বছর ১৮-২০ সেপ্টেম্বর প্লে-অফ টাই খেলতে হবে। নিয়ম মতো এ বারের ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্রথম রাউন্ডে পরাজিত ৮ দেশের কারও বিরুদ্ধে। এরা হল; জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, চেক প্রজাতন্ত্র, ইতালি, ব্রাজিল, ক্রোয়েশিয়া, জাপান, সুইৎজারল্যান্ড। যা বুধবার লটারিতে ঠিক করবে আইটিএফ।

ক্রাইস্টচার্চ থেকে মোবাইলে ভারতীয় দলের কোচ জিশান আলি যেমন বলে দিলেন, ‘‘এখানে বাইরে তো ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বটেই। এমনকী ইন্ডোর স্টেডিয়ামেও তাপমাত্রা ৭-৮ ডিগ্রি ছিল এই ক’দিন। কোনও হিটিং সিস্টেম নেই এদের ইন্ডোরে। কী ঠান্ডায় যে খেলে জিততে হয়েছে ভাবতে পারবেন না! সোমদেব, বিশেষ করে য়ুকির জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’ সোমদেব সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘‘চাপের মুখে য়ুকি স্নায়ু ঠান্ডা রেখে অবিশ্বাস্য ভাল খেলেছে।’’

আর স্বয়ং মহানায়ক কী বলছেন? ‘‘দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে নেমে চাপের মুখে জাতীয় দলকে জয় এনে দিতে পারাটা জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অনুভূতি!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE