Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

মেরিকে আদর্শ করছেন বেটন চ্যাম্পিয়ন

অনুপ্রেরণা ‘ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি’! রিও অলিম্পিক্স থেকে খালি হাতে ফেরা হোক বা অফ ফর্ম, নিজের শহরের লড়াকু মেয়েটির কথা ভেবেই নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি— বছর চব্বিশের মণিপুরী হকি প্লেয়ার কোঠাজিৎ সিংহ।

বেটনজয়ী ইন্ডিয়ান অয়েল। মঙ্গলবার। -শঙ্কর নাগ দাস

বেটনজয়ী ইন্ডিয়ান অয়েল। মঙ্গলবার। -শঙ্কর নাগ দাস

তানিয়া রায়
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪৪
Share: Save:

অনুপ্রেরণা ‘ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি’!

রিও অলিম্পিক্স থেকে খালি হাতে ফেরা হোক বা অফ ফর্ম, নিজের শহরের লড়াকু মেয়েটির কথা ভেবেই নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি— বছর চব্বিশের মণিপুরী হকি প্লেয়ার কোঠাজিৎ সিংহ। মণিপুরের তৃতীয় হকি অলিম্পিয়ান তিনি। মঙ্গলবার বেটন কাপের ফাইনালের পর বলছিলেন, ‘‘মেরির লড়াই আমাদের সবাইকেই খুব নাড়া দেয়। আমি নিজে যখন মনমরা হয়ে পড়ি, তখন ওর কথা ভাবি। আমারই শহরের মেয়ে লড়াই করে বিশ্বজয় করতে পারলে, আমি কেন পারব না? মেরি তো আমাদের শহরের গর্ব।’’

তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সেই এ বার বেটন কাপ জিতল ইন্ডিয়ান অয়েল। মঙ্গলবার বেটনের ফাইনালে ভারত পেট্রোলিয়ামকে ৫-৩ হারিয়ে দেয় কোঠাজিতের টিম ইন্ডিয়ান অয়েল। টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন মণিপুরের এই হকি প্লেয়ার।

কোঠাজিতের তিন দাদা ও এক দিদিও হকি খেলেন। তবে ছোট ভাইয়ের দুরন্ত প্রতিভা দেখে তাঁকে নয় বছর বয়সে ইম্ফল থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে লখনউয়ের সাইয়ে। সেখানেই আসল লড়াই শুরু কোঠাজিতের। কেমন ছিল সেই লড়াই? কোঠাজিৎ বলছিলেন, ‘‘প্রথমেই ভাষা সমস্যায় পড়তে হয়। হিন্দি তখন সে ভাবে বলতেও পারতাম না, বুঝতেও পারতাম না। আমাদের কোচ কিছু বোঝালে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতাম। তাই বকাও খেতে হত খুব। মণিপুরের একটা ছোট শহর থেকে এসেছি, ভাষা বুঝি না। সব কিছু যেন আমার কাছে নতুন। আলাদা একটা জগৎ। প্রথম প্রথম খুব কাঁদতাম। সেটা দেখে বাকিরা আমাকে খেপাত। তখন আরও বেশি কান্না পেত।’’ সঙ্গে আর্থিক সমস্যাও কম ছিল না। কোঠাজিৎ বলছিলেন, ‘‘বাড়ির অবস্থা ভাল ছিল না। বাবা একটা দোকানে কাজ করতেন। সংসারের চাপ সামলাতে বড় দাদাকে খেলা ছেড়ে চাকরির খোঁজ করতে হচ্ছে তখন। তার মধ্যেও আমার যাতে খেলার কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকে বাড়ির সবারই খেয়াল থাকত।’’

সেই লড়াইয়ের দিনগুলো সামনে রেখেই এখন আর একটা স্বপ্ন পূরণের আশায় কোঠাজিৎ। অলিম্পিক্স পদক। রিওতে আসেনি। টার্গেট তাই টোকিও। তবে তার আগে দু’বছর পর ২০১৮ বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন আছে কোঠাজিতের। সেই লক্ষ্যেই পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের অলিম্পিক্স পদক জয়ের লড়াই আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে তাঁকে।

বেটনের টুর্নামেন্ট সেরা অবশ্য একটা ব্যাপারে হতাশ। টুর্নামেন্টের মান নিয়ে। তাই এখানে সফল হয়েও তৃপ্তি নেই। কোঠাজিৎ বলছিলেন, ‘‘বেটন কাপ খেলতে আমি দ্বিতীয় বার এলাম। কোনও উন্নতি হয়নি। খুব অবাক লাগে জানেন, আমাদের মণিপুরেও দু’টি হকি টার্ফ রয়েছে। সেগুলো বেশ উন্নত মানের। এখানকার মতো নয়। অথচ কলকাতার মতো শহর, বাংলার মতো রাজ্যে হকির কোনও ভাল টার্ফ নেই। ড্রেসিংরুম নেই। ভাবাই যায় না।’’ এ দিন অবশ্য ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বেটনের ফাইনালে ঘোষণা করেন, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হকির জন্য যুবভারতীতে একটা টার্ফ বসানো হবে। এবং সেখানে আধুনিক মানের যাবতীয় সুযোগ সুবিধেও থাকবে।’’

এ দিন ইন্ডিয়ান অয়েলের হয়ে জোড়া গোল করেছেন গুরজিন্দর। এ ছাড়া তাদের তিনটি গোল এসকে উথাপ্পা, দীপক ঠাকুর, প্রভজোৎ সিংহের। জোড়া গোল করেন পেট্রোলিয়ামের জুনিয়র বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হরমনপ্রীত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE