এখন যুযুধান। অজিত ও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
বেঙ্গল অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাঁড়ারে টাকা নেই। বাংলার খেলাধুলার উন্নতিতে সংস্থার গুরুত্ব বা প্রভাবও তেমন নেই। এখানে ঘোরাফেরা করা বেশির ভাগ খেলার কর্তারাই খেলার চেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে। আকর্ষণ বলতে শুধু কর্তাদের ম্যানেজার হয়ে বিদেশ ভ্রমণ অথবা অবজার্ভার হয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিনি পয়সায় ঘুরে বেড়ানো।
এই রকম একটা ক্রীড়া সংস্থার পদ দখল নিয়ে বৃহস্পতিবার নজিরবিহীন গন্ডগোলে উত্তাল ময়দান। কারণ ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই ভাই—অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিওএ-র সাধারণ সভার পর দু’জনের মধ্যে যে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে তাকে ‘গৃহযুদ্ধ’ বললেও কম বলা যায়। পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে দাদা এবং ভাইয়ের পারবারিক এই প্রকাশ্য ‘যুদ্ধ’ থামাতে শেষ পর্যন্ত হয়তো হস্তক্ষেপ করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিন রাতে সে রকম ইঙ্গিতই পাওয়া গিয়েছে কালীঘাটে মমতার বাড়ি থেকে।
মুখ্যমন্ত্রীর ছোট ভাই স্বপন যেমন এ দিন বিওএর সভার পর বলে দিয়েছেন, ‘‘দাদা নিজে অন্যায় ভাবে চার বছর আগে নির্বাচিত হয়ে এসেছিল। আর সেই দাদা-ই আমাকে এখন আটকানোর চেষ্টা করছে নিয়ম দেখিয়ে।’’ আর মমতার বড়দা এবং বর্তমান সংস্থার প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা ততটা চাঁচাছোলা না হলেও বলে দিয়েছেন, ‘‘ভাইয়ের এই আচরণ আমি ভাল চোখে দেখছি না। আমি এবং স্বপন দুজনে বিওএ-র দু’টো প্রধান পদে থাকলে সেটা মমতার ইমেজেরই ক্ষতি করবে। সবাই বলবে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতার জোরে আমরা সব দখল করছি। সেটা আমি চাই না। আর ওর সচিব হওয়ার যোগ্যতাই তো নেই।’’ তার পাল্টা হিসাবে ভাই স্বপনের আবার মন্তব্য, ‘‘দাদার কী যোগ্যতা আছে? ওকে তো আমিই বিওএতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে এনেছিলাম। এখন আমাকে ভয় পাচ্ছে। জানে আমি এলে ও জিরো হয়ে যাবে। আমাদের পরিবারে দিদি মুখ্যমন্ত্রী আর ভাইপো অভিষেক যদি দলের সচিব হতে পারে তা হলে আমরা হব না কেন? লালুপ্রসাদ আর রাবড়িও তো একই সঙ্গে দুটো বড় পদে ছিল। মোহনবাগানে টুটুদা আর টুম্পাই তো দুটো বড় পদে আছে।’’ এসব শুনে অবশ্য কোনও উত্তর দিতে চাননি অজিতবাবু। ‘‘ও পাগলামি করছে। দশ-বারো জন ছেলে নিয়ে মিটিং-এ ঢুকে পড়ছে। নিয়ম মানছে না। ও যা বলে বলুক। নির্বাচনে জিতে এসে সচিব হোক। আমি নিজে ওকে সচিব করব না।’’
ঝামেলা চলছিল অনেক দিন ধরেই। গন্ডগোলের কারণ বর্তমান সচিব চন্দন রায়চৌধুরীর জায়গায় বিওএ-র সচিব হতে চাইছেন স্বপন। ভাইয়ের এই ইচ্ছেয় আপত্তি রয়েছে দাদা অজিতের। তিনি ফের সচিব হিসাবে চার বছরের জন্য চাইছেন চন্দনকে। কিছু কর্তাও তাই চাইছেন। চন্দন নিজে অবশ্য দুই ভাইয়ের ঝামেলায় ঢুকতে নারাজ। বললেন, ‘‘আমি দাঁড়াব না। সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি।’’ চন্দন এ কথা প্রকাশ্যে বলায় স্বপনের আশা ছিল এ দিনই দাদা তাঁকে সচিব হিসাবে ঘোষণা কবে দেবেন। কিন্তু সংস্থার গঠনতন্ত্রে নিয়ম না থাকায় তা হয়নি। দিল্লি থেকে আসা আইওএ-র অবজার্ভার সুরেশ শর্মার উপস্থিতিতে সাধারণ সভা হলেও সচিব-সহ কোনও পদাধিকারীর নাম-ই ঘোষণা করেননি প্রেসিডেন্ট অজিতবাবু। তিনি বলে দেন, ‘‘গঠনতন্ত্রে আছে কর্মসমিতি গঠনের সভার পরের প্রথম সভায় পদাধিকারী নির্বাচিত হয়। সেটাই হবে।’’ এর পরই সভায় ঝামেলা শুরু হয়। এক দল কর্তা দাবি করেন, কর্মসমিতির সভার দিনই পদাধিকারী নির্বাচন হয়। এটাই বিওএ-র পরস্পরা। সেটাই করতে হবে। অজিতবাবু তা মানতে চাননি। ঠিক হয়, ১১ নভেম্বর সংস্থার নির্বাচন হবে। এ নিয়ে প্রচন্ড ঝামেলা শুরু হয় সভায়। নিয়ম নিয়ে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন হকির গুরবক্স সিংহ, ফুটবলের কৃষ্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সাঁতারের রামানুজ মুখোপাধ্যায়, বক্সিং-এর অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
কিন্তু নানা খেলার কর্তাদের ঝামেলার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দেয় মুখ্যমন্ত্রীর দাদা আর ভাইয়ের লড়াই। ময়দান বহু নির্বাচন দেখেছে, কিন্তু এ রকম লড়াই তো কোনও দিন দেখেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy