কারইয়াকিন-কার্লসেন। নিউ ইয়র্ক সিটিতে দাবার বিশ্বযুদ্ধে। ছবি: রয়টার্স
‘মোৎজার্ট অব চেস’ বনাম ‘ডিফেন্স মিনিস্টার অব চেস’।
দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে যুযুধান দুই খেলোয়াড়কে এটাই বলা হচ্ছে। মানে নরওয়ের ম্যাগনাস কার্লসেন বনাম রাশিয়ার সের্গেই কারইয়াকিন।
নিউ ইয়র্ক সিটিতে ১২ রাউন্ডের লড়াইয়ে ১১টা হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে ৯টা ড্র। পয়েন্ট ৫.৫-৫.৫। সাড়ে ছয় পয়েন্ট পেলেই চ্যাম্পিয়ন। আর শেষ গেমটাও ড্র হলে ফয়সালা টাইব্রেকারে।
সোমবার ভারতীয় সময় গভীর রাতে শেষ রাউন্ডের যুদ্ধে কী হবে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। কার্লসেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন, টুর্নামেন্টে নামার আগে ফেভারিট ছিলেন। কিন্তু আট নম্বর গেমে কার্লসেনকে হারিয়ে দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন কারইয়াকিন।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে কার্লসেন এই প্রথম পিছিয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্বনাথন আনন্দের বিরুদ্ধে গত দু’বার বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নের তাজের লড়াইয়ে যেটা দেখা যায়নি। হতাশায় বাধ্যতামূলক প্রেস কনফারেন্সেও আসেননি কার্লসেন। প্রশ্ন উঠেছিল কার্লসেন কী এই প্রথম চাপে পড়ে গেলেন?
দশ নম্বর গেমে অবশ্য সেই কার্লসেন স্টাইলে প্রত্যাবর্তন। মানে ধীরে সুস্থে অজগড়ের মতো একটু একটু করে শিকারকে গিলে ফেলা। এগারে নম্বর গেমও ড্র। শেষ রাউন্ডে সাদা ঘুঁটিতে কার্লসেনকে রুখতে পারবেন কারইয়াকিন? গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘দু’জনের পারফরম্যান্সের রেকর্ড যদি দেখেন নিঃসন্দেহে কার্লসেন ফেভারিট বারো নম্বর রাউন্ডে। তবে যে কার্লসেনকে এগারোটা রাউন্ড আটকে রাখতে পেরেছে সে আরও একটা রাউন্ডে চমকে দিতেই পারে। আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না। কুড়ি শতাংশ যদি পারফরম্যান্সে হয়, বাকি আশি শতাংশ নার্ভের যুদ্ধ শেষ রাউন্ডে।’’
তবে সূর্য এটাও মনে করেন কার্লসেনের প্লেয়িং স্টাইল নরওয়ের বিস্ময় দাবাড়ুকে অ্যাডভান্টেজ দেবে। কার্লসেন কখনও ওপেনিংয়ের উপর নির্ভর করে জেতেন না। দাবা বিশ্বে বেশির ভাগ প্লেয়ারেরই যেটা প্রধান অস্ত্র। কারইয়াকিনেরও তাই। কার্লসেনের অস্ত্র মিডল আর এন্ড গেম। ‘‘সাদামাঠা একটা পজিশন থেকে কার্লসেন ম্যাচ বের করে নিতে পারে। ভাল ওপেনিংয়ের উপর নির্ভর করতে হয় না। তাই বোর্ডে সাত ঘণ্টা লড়ার পরও কার্লসেনকে ফ্রেশ দেখায়। এটাই ওর সুবিধে,’’ বলছেন সূর্যশেখর। সঙ্গে আরও যোগ করেন, ‘‘তবে কারইয়াকিনও কিন্তু কম যায় না। ক্যান্ডিডেটসে আনন্দ, ফাবিও কারুয়ানা, পিটার সিডলারের মতো প্লেয়ারকে টপকে জিতেছে। গত সাত-আট বছর ধরে বিশ্বের টপ টেন জায়গাটা ধরে রেখেছে। নরওয়ে চেস মানে যেখানে মোটামুটি বিশ্বের সেরা দাবাড়ুরা লড়তে নামে সেখানে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কার্লসেনও সেই টুর্নামেন্টে ছিল। তা ছাড়া ওর ডিফেন্স দারুণ। যে জন্য দাবা বিশ্বে ওকে ডিফেন্স মিনিস্টার বলেন অনেকে। কার্লেসেনের চ্যালেঞ্জটা তাই সোজা হবে না।’’
এক মিলিয়ন ইউরো পুরস্কারমূল্যের লড়াইয়ের (প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা) শেষপর্বটা কতটা জমজমাট সেটা ভারতের আর এক গ্র্যান্ডমাস্টারের সোমবারের কথায় আরও পরিষ্কার। ‘‘প্রচণ্ড লড়াই। নাটক, উত্তেজনা, আবেগ, নার্ভ, সাসপেন্স। এগারো নম্বর রাউন্ডের ম্যাচটা বলিউডকেও হার মানিয়ে দিল। ১২ নম্বর গেমের জন্য আর তর সইছে না।’’ টুইট তানিয়া সচদেবের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy