স্বপ্ন: অলিম্পিক্সের সেমিফাইনালে এ বার লড়াই লাভলিনার। ফাইল চিত্র।
পদক নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে আগেই। আজ, বুধবার সকালে অলিম্পিক্স বক্সিংয়ের ৬৯ কেজি বিভাগে ঐতিহাসিক লড়াইয়ে নামছেন ভারতের লাভলিনা বরগোহাঁই। যে ম্যাচ জিতলে ভারতের প্রথম বক্সার হিসেবে অলিম্পিক্সের ফাইনালে যাবেন অসমের এই বক্সার কন্যা। সে ক্ষেত্রে সোনা বা রুপোর পদক গলায় ঝোলানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। না হলে ব্রোঞ্জ পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে তাঁকে।
মঙ্গলবার টোকিয়োতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ভারতীয় মহিলা বক্সিং দলের কোচ আলি কামার বলে দিলেন, ‘‘বিপক্ষে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বুসেনাজ় সুরমেনেলি। কঠিন প্রতিপক্ষ। কিন্তু পদক নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় অনেক চাপমুক্ত হয়ে বুধবার নামবে লাভলিনা। ওর এই ফুরফুরে মানসিকতা বুসেনাজ়কে চাপে ফেলতেও পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘এটাই প্রথম অলিম্পিক্স লাভলিনার। সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে অতিরিক্ত আবেগ যাতে সমস্যা না করে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত বোঝানো হয়েছে রবিবারেই।’’
জানা গেল, কোয়ার্টার ফাইনাল চিনা তাইপের খেলোয়াড় প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিয়েন-চিন চেনকে হারানোর পরে লাভলিনার গ্রামের রাস্তা রাতারাতি কাঁচা থেকে পাকা হয়ে গিয়েছে স্থানীয় পূর্ত বিভাগের সৌজন্যে। যে খবর টোকিয়োতে বসে পেয়েছেন লাভলিনা। সে কারণে ‘মনখুশ’ এই ভারতীয় বক্সারের। লাভলিনার বাবা টিকেন সিংহের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, ‘‘মেয়ে সেমিফাইনালে ওঠার পরে আমাদের গ্রামের রাস্তা পাকা হয়ে গিয়েছে। রবিবার রাতে যখন ফোন করেছিল, তখন সে কথা ওকে জানানোয় মেয়ে খুব খুশি হয়েছে। বলেছে গ্রামের মুখ আরও উজ্জ্বল করতে সেমিফাইনালে নিজের সেরা লড়াইটা উপহার দেবে। প্রার্থনা করুন ওর জন্য।’’
২০০৮ ও ২০১২ সালে অলিম্পিক্স থেকে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন বিজেন্দ্র সিংহ ও মেরি কম। কোয়ার্টার ফাইনাল জিতে পদক নিশ্চিত হওয়ায় ইতিমধ্যেই সেই তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন লাভলিনা। এ বার ফাইনালে উঠলে তৈরি হবে নতুন কীর্তি।
টোকিয়ো থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, গত ৪৮ ঘণ্টায় তুরস্কের বিপক্ষ বক্সারের এ বার অলিম্পিক্সে বাউটের ভিডিয়ো দেখিয়ে তাঁর কোন জায়গায় আঘাত হানতে হবে তা লাভলিনাকে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচেরা। বলা হয়েছে, একটু দূর থেকে রক্ষণ করে প্রতি-আক্রমণে যেতে। মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় হকি দলের সেমিফাইনাল ম্যাচ গেমস ভিলেজে বসে দেখার পরে ঘণ্টা দু’য়েক অনুশীলন করেছেন ভারতের এই মহিলা বক্সার। ২৩ বছরের মেয়ে নিজেও মাথা শান্ত রাখতে ধ্যান করছেন।
ভারতীয় কোচ বলছিলেন, ‘‘অবসরে গান শুনে, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে অনেকটাই চাপমুক্ত। ওকে বলা হয়েছে, এই ম্যাচটা অন্য বাউটের মতো দেখতে, ফাইনালে গেলে ইতিহাস তৈরি হবে, সে সব মাথায় রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। তা হলে চাপ বাড়তে পারে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘সেমিফাইনাল টোকিয়োর স্থানীয় সময় অনুযায়ী বেলার দিকে যখন হবে, সেই সময়েই গত দু’দিন ধরে লাভলিনাকে স্পারিং-সহ বিভিন্ন কৌশলগত মহড়া দেওয়ানো হয়েছে।’’
শোনা যাচ্ছে, সেমিফাইনালে বিপক্ষকে দেখে নিয়ে প্রতি-আক্রমণে ঝাঁপানোর পরিকল্পনা থাকতে পারে লাভলিনার। অতীতে তুরস্কের এই বক্সারের বিরুদ্ধে কখনও লড়েনি লাভলিনা। ২০১৯ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বুসেনাজ় সোনা পেয়েছিলেন। আর লাভলিনা সেই প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পেলেও একে অপরের মুখোমুখি হননি সে বার। বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, এতে সুবিধা পেতে পারে ভারতীয় মেয়ে। কারণ, বিপক্ষের মুখ লক্ষ্য করে লাভলিনার সরাসরি ‘পাঞ্চ’ (ঘুসি) বা প্রতি-আক্রমণের সময় জোরালো আপারকাট নিয়ে আগ্রাসী হওয়ার ব্যাপারে খুব বেশি যেমন জানা নেই বুসেনাজ়ের, তেমনই মাঝে মাঝে রক্ষণ ও আক্রমণে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে যে অসুবিধা হয় লাভলিনা, সেটাও তিনি জানেন না। আলি কামারের কথায়, ‘‘মঙ্গলবার অনুশীলনে বেশ আত্মবিশ্বাসী লেগেছে ওকে। ফাইনালে যেতে মুখিয়ে রয়েছে লাভলিনাও। ওর উচ্চতা একটা ইতিবাচক ব্যাপার।’’ যোগ করেছেন ‘‘কোয়ার্টার ফাইনালে আক্রমণ ও রক্ষণে লাভলিনার ভারসাম্য কখনও কখনও ব্যাহত হয়েছে। সেমিফাইনালে সেটা আটকাতে মহড়া চলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy