প্রহসন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বাঁচানোর ‘অপচেষ্টা।’
ডালমিয়া গদিতে থেকেও আদতে শ্রীনির বোর্ড।
আরব সাগর পারে রবিবাসরীয় আইপিএল বৈঠক পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার দেশজোড়া প্রতিক্রিয়ার বিস্ফোরণ। চ্যানেল। সোশ্যাল মিডিয়া। শ্রীনি-বিরোধী শিবিরের কোনও কোনও মুখ। যারা পরিষ্কার বলে দিল, জগমোহন ডালমিয়ার বোর্ড বলে যেটাকে উপস্থাপনা করা হচ্ছে, তা শুধু নামেই। বরং বোর্ড এখন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের দিকে ঝুঁকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিযুক্ত কমিটি সিএসকে-কে নির্বাসিত করার রায় দিয়ে দিলেও যারা গড়িমসি করবে। সাব-কমিটির তলায় আরও একটা সাব-কমিটি বসানোর মতো হাস্যকর সিদ্ধান্ত নেবে। অহেতুক ছ’সপ্তাহের সময় চেয়ে ব্যাপারটাকে আরও পিছিয়ে দিতে চাইবে। এবং সর্বোপরি— চেন্নাই সুপার কিংগসকে আপ্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করে যাবে!
বোর্ডের প্রভাবশালী শীর্ষকর্তাদের কেউ কেউ আগাম জানতেন, রবিবার কী আসতে চলেছে। জানতেন যে, একটা নির্দিষ্ট খসড়া আইনজীবী ইতিমধ্যে বানিয়ে ফেলেছেন। গভর্নিং কাউন্সিল বৈঠকে সেই মতো চলা হবে। বলা হবে, আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লর নেতৃত্বাধীন একটা কমিটি হোক। পোশাকি নাম যার ওয়ার্কিং গ্রুপ। যা হল। বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুর যে চার পয়েন্টের মিডিয়া রিলিজ পাঠালেন, তাতে বলা আছে যে লোঢা কমিশনের রায় খুঁটিয়ে বুঝবে এই ওয়ার্কিং গ্রুপ। বোর্ড পরামর্শদাতাদের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করবে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যেখানে আইপিএলের সঙ্গে যুক্ত সবার স্বার্থ দেখা হবে। ছ’সপ্তাহের মধ্যে যারা রিপোর্ট জমা করবে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কাছে। যা শেষ পর্যন্ত যাবে ওয়ার্কিং কমিটিতে।
বৈঠকের আগে অনুরাগ-রাজীব মিনি বৈঠক। সভা থেকে বেরিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার মুম্বইয়ে। ছবি: পিটিআই।
আইপিএলকে ‘পরিষ্কার’ করতে নতুন জমানার বোর্ডের যে ব্যবস্থাপনা আদিত্য বর্মার মতো কারও কারও মাথায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। এ দিন বিকেলে টিভি স্টুডিওয় ঢোকার আগে উত্তেজিত বিহার সংস্থার সচিব ফোনে বলছিলেন, ‘‘ওরা এখন দেশের লোককে বোকা বানানোর লড়াইয়ে নেমেছে। বুঝতে পারছে না যে, ওদের ধারণা মতো সবাই বোকা নয়। লোকে জানে রাজীব শুক্ল বা বোর্ড কার কথামতো চলছে। এ দিন প্রমাণ হয়ে গেল শ্রীনি গিয়েও যায়নি। সবচেয়ে খারাপ লাগছে ডালমিয়ার অবস্থা দেখে। কী প্রশাসক ছিলেন, আর কী অবস্থা হয়েছে!’’
বোর্ডের শক্তিপরীক্ষায় হারের দিনে প্রেসিডেন্টকে যোগাযোগ করা সম্ভব হল না। তাঁর মোবাইল বন্ধ। বোর্ড প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে শুধু বলা হল, গভর্নিং কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি কথা বলবেন না। প্রেসিডেন্ট নীরব থেকে গেলেন। বৈঠকেও মাত্র একজন বাদে কোনও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর পাওয়া গেল না। প্রাক্তন বোর্ড কোষাধ্যক্ষ অজয় শিরকে ছাড়া কেউ নাকি বলেননি যে এর পরেও সিএসকে-রাজস্থানকে রেখে দেওয়া অন্যায় হবে। ওদের অবিলম্বে ছাঁটাই করা হোক।
শোনা গেল, ক্রিকেট সেন্টারের বৈঠকে সিএসককে বাঁচানোর অন্যতম মুখ্য ভূমিকা নাকি নেন আইপিএল সিওও সুন্দর রামন। যে রামনের বিরুদ্ধে এখনও তদন্ত চলছে। নিজের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে নাকি রামন বলে দেন যে, দুই ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বাদ দিলে আইপিএল দাঁড়াবে ছয় টিমের। যা হলে প্রভূত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বোর্ড। রামন নাকি চার্ট করে লাভ-ক্ষতির খতিয়ান দেখিয়ে দেন। দশ টিমের আইপিএল নিয়েও প্রতিবাদ তোলেন। বলেন যে, সেটা হলে নতুন উইন্ডো বার করতে হবে বোর্ডকে। বর্তমান উইন্ডোতে দশ টিমের আইপিএল সামলানো সম্ভব নয়। সিএসকে-রাজস্থানকে ছাঁটাই না করা নিয়ে তাঁর পরোক্ষ সওয়াল জোর পেয়ে যায় বোর্ডের পরামর্শদাতাদের একজনের বক্তব্যে। যাঁর বক্তব্য ছিল, পূর্বতন প্রশাসকদের আমলে কোচি টাস্কার্সকে ছাঁটাই করতে গিয়ে সাতশো কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বোর্ডের। যার বোঝা আজও টানতে হচ্ছে। ছাঁটাই করলে সমাধানের চেয়ে সমস্যা আরও বাড়তে পারে! স্কাইপের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেওয়া শিরকে দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির ছাঁটাই-প্রস্তাব তুলেও তাই মোটামুটি একা হয়ে যান। বরং তাঁকে দেখতে হয়, বৈঠকের গরিষ্ঠ অংশ চাইছে সিএসকে-র ছাঁটাই নিয়ে তাড়াহুড়ো না করতে! বলছে, আইপিএলের এখনও ন’মাস বাকি। এখনই যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখানোর দরকার কী?
বিড দিয়ে নতুন দু’টো টিম নেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন কেউ কেউ। কিন্তু ইতিমধ্যে নির্বাসিত দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির ছাঁটাইয়ের সমর্থনে নাকি গরিষ্ঠ অংশের সায় নেই। কেউ কেউ এটাও বলেন, ক্রিকেটারদের সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডের স্বার্থও দেখা উচিত। শোনা গেল সিএবি যুগ্ম সচিব তথা গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বৈঠকে বলেন যে, সম্ভবপর হলে দু’টো নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়া হোক। তাতে সমস্ত কিছু স্বচ্ছ থাকবে। বৈঠকে উপস্থিত সিএবির অন্য যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় আবার প্রস্তাব দেন যে, এখনই তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। এবং টেলিকনফারেন্সে বৈঠকে যোগ দেওয়া রবি শাস্ত্রী শোনা গেল প্রস্তাব দেন যে, স্বার্থের সংঘাতের কারণে বোর্ডের পক্ষে যদি দু’টো ফ্র্যাঞ্চাইজি চালানো সম্ভব না হয়, তা হলে দু’টো আলাদা কমিটি করে দেওয়া যেতে পারে। যারা দু’টো টিম দেখবে। এবং দু’টো কমিটির শীর্ষমস্তিষ্কের একটায় মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, একটায় রাহুল দ্রাবিড়কে বসানো যেতে পারে!
সব মিলিয়ে কী দাঁড়াল?
এক বৈঠক। বিবিধ মত। হাস্যকর সিদ্ধান্ত প্রসব। সিএসকে-রাজস্থানকে রক্ষার চেষ্টা। মাত্র এক জনের প্রতিরোধ বাকিদের বিরোধিতায় ভেঙে যাওয়া। দেখার শুধু এখন একটা বিষয়।
শশাঙ্ক মনোহরের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের প্রভাব ডালমিয়ার উপর পড়ে কি না। শ্রীনির প্রভাব থেকে বেরিয়ে ভারতীয় বোর্ড ডালমিয়ার বোর্ডে শেষ পর্যন্ত রূপান্তরিত হয়ে নরমপন্থা ছেড়ে কঠোর অনুশাসনে বিশ্বাসী হতে পারে কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy