যুগলবন্দি: অতীতের সেই বিখ্যাত জুটি। এখন ভূপতি নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন, লিয়েন্ডার খেলে চলেছেন। ফের দু’জনকে এক সঙ্গে দেখা যাবে? ফাইল চিত্র
ডেভিস কাপে ভারতীয় দলে তাঁর জায়গা ধরে রাখার ব্যাপারে লিয়েন্ডার পেজ প্রথম হার্ডলটি পেরিয়ে গেলেন সোমবার। এ বার দ্বিতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে তাঁকে। সেখানে প্রধান বিচারকের ভূমিকায় থাকবেন এক সময়কার পরম বন্ধু, পরে চরম শত্রুতে পরিণত হওয়া মহেশ ভূপতি।
এমনিতে ভূপতির উপস্থিতি লিয়েন্ডারের জন্য আশীর্বাদ হবে না আতঙ্কের, তা নিয়ে জল্পনা ছিলই। কারও কারও মনে হচ্ছিল, মহেশ নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই লিয়েন্ডারকে ছেঁটে ফেলার অপ্রিয় ‘শট’ নিতে চাইবেন না। তাই লি এ যাত্রা রক্ষা পেয়ে যেতে পারেন।
এ রকম তীব্র জল্পনার মধ্যেই হালফিলে ভারতীয় টেনিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী বৈঠক হল সোমবার দিল্লিতে। সেখানে প্রমাণ হয়ে গেল জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী থেকে শুরু করে সর্বভারতীয় টেনিস সংস্থার অন্দরে এখনও সমর্থন হারাননি লিয়েন্ডার। ছয় সদস্যের দল গড়ে ফেলল নির্বাচক কমিটি। তাতে চার জন সিঙ্গলস ও দু’জন ডাবলস খেলোয়াড় রাখা হয়েছে। দু’জন ডাবলস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজ ও রোহন বোপান্না। এ বার উজবেকিস্তান টাইয়ের দশ দিন আগে ভূপতি নির্বাচক কমিটির প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে চার সদস্যের চূড়ান্ত দল বেছে নেবেন। অর্থাৎ ‘ফাইনাল শট’ তাঁকেই খেলতে হবে।
লিয়েন্ডার কি সেই চূড়ান্ত দলে থাকবেন? সোমবার রাতেই সংবাদসংস্থাকে মহেশ বলেছেন, তিনি নাকি তিন জন সিঙ্গলস ও এক জন ডাবলস খেলোয়াড় নিয়ে নামতে চান। তার কথার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, একমাত্র ডাবলস খেলোয়াড়ের জায়গা নেওয়ার জন্য লড়াই লিয়েন্ডার ও বোপান্নার মধ্যে। অর্থাৎ, আগের সেই সঙ্কট থেকেই গিয়েছে। লিয়েন্ডারের অভিজ্ঞতা দেখা হবে নাকি বোপান্নার সাম্প্রতিক ফর্ম ও র্যাঙ্কিং?
বোপান্না এই মুহূর্তে ভারতের এক নম্বর ডাবলস খেলোয়াড়। লি সেই জায়গা হারিয়েছেন অনেক দিন। তিনি এখন র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম পঞ্চাশ জনের মধ্যেও নেই। পেশাদার সার্কিটে নিয়মিত ভাবে পার্টনারও পাচ্ছেন না। অনেক দিন হয়ে গিয়েছে কোনও খেতাব জেতেননি। উজবেকিস্তানের সঙ্গে পরের টাইয়ে এর পরেও লিয়েন্ডারকে দেখা গেলে অবাক হওয়ার নেই। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এখন নতুন নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন যা-ই বলুন না কেন, এপ্রিলে উজবেক টাইয়ের আগে গিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এত আগে চূড়ান্ত দল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্নই নেই।
উজবেকিস্তান মানে ডেনিস ইস্তোমিন। যিনি নোভাক জকোভিচকে হারিয়েছেন। ভারতীয় শিবির ধরেই রাখছে ইস্তোমিনের দু’টো সিঙ্গলস তারা জিতবে না। বাকি রইল আরও দু’টি সিঙ্গলস এবং একটি ডাবলস। এই তিনটি ম্যাচ জিততেই হবে টাই জিততে গেলে। ভারতীয় টেনিস মহলে একটা মত হচ্ছে, সিঙ্গলসে চোট-আঘাত পেয়ে গেলে যাতে বিপদে না পড়তে হয়, তাই তিন জন সিঙ্গলস ও এক জন ডাবলস খেলোয়াড় রেখে দল গড়া উচিত। মহেশ সেই নীতি ধরেই এগোলে লিয়েন্ডারের চাপ বাড়বে।
তবে অনেকে আবার এমন আশঙ্কাও করছেন যে, লিয়েন্ডার না খেললে ভারতীয় টেনিস তার জৌলুস হারাবে। এখনও বোপান্না বা ইউকি ভামব্রি-দের দেখার জন্য ভিড় হয় না। দর্শক সমাগম যা হয় লিয়েন্ডারের জন্যই হয়। স্পনসর-রাও মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে। সেই মত লিয়েন্ডারের পক্ষে যেতে পারে।
নির্বাচক কমিটির সভায় উপস্থিত থাকা এআইটিএ সচিব হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘আমরা ছ’জনের সেরা স্কোয়াড বেছে দিয়েছি। এর পর নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে, কোন চার জন খেলবে।’’ ডাবলসে লিয়েন্ডার এবং বোপান্না দু’জনকেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সচিব যোগ করলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ফর্ম ও র্যাঙ্কিংয়ের দিক থেকে দেখলে ওরা দু’জনেই দেশের সেরা। তাই লিয়েন্ডার, বোপান্নাকে রাখা হয়েছে।’’
উজবেকিস্তান টাইয়ের দশ দিন আগে এই ছ’জনের স্কোয়াড থেকে চূড়ান্ত চার জনকে বেছে নিতে হবে। তখনই আসল প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে মহেশকে যে, চূড়ান্ত দলে লিয়েন্ডারকে রাখব কি রাখব না? যদি তিনি সত্যিই একটি ডাবলস খেলোয়াড় নিয়ে নামার কথা ভাবেন, তা হলে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা বোপান্নাকে উপেক্ষা করা কঠিন হবে। তখন লিয়েন্ডারকে বাদ দেওয়ার অপ্রিয় ‘শট’ নিতেই হবে।
তবে রাজধানী থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত এমন বিস্ফোরক ইঙ্গিত নেই বললেই চলে। বরং জনপ্রিয় মত হচ্ছে, ছ’জনের স্কোয়াডে আছেন মানে লিয়েন্ডার মূল দলেও ঢুকছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy