লিয়েন্ডার পেজ। ফাইল চিত্র।
করোনা-আতঙ্ক কাটিয়ে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরতে চাইছে ক্রীড়াবিশ্ব। বিভিন্ন দেশে ফুটবল লিগ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দিয়ে ক্রিকেটও শুরু হওয়ার পথে। কিন্তু যত দিন না করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার হচ্ছে, পুরোদমে খেলাধুলো শুরু করায় ঝুঁকি থেকে যাবে বলে মনে করছেন লিয়েন্ডার পেজ।
বুন্দেশলিগা, লা লিগা, ইপিএল চালু হওয়ার পরে পেশাদার ফুটবলারদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে মনে করেন লিয়েন্ডার। শনিবার ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের ইয়ং লিডার্স ফোরাম আয়োজিত এক ওয়েবিনারে লিয়েন্ডার বলছিলেন, ‘‘ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, লিয়োনেল মেসিরা মাঠে নেমে খেলছে। ভাবুন তো এক বার যদি রোনাল্ডো, মেসিরা করোনায় আক্রান্ত হয়, তা হলে কী হবে? ভাবুন তো ওঁদের মতো তারকাদের যদি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় করোনা থেকে জীবনরক্ষা করার জন্য, তা হলে কী প্রভাব পড়তে পারে? খেলার জগত বিরাট ধাক্কা খাবে।’’
বিশেষ করে কবাডি, কুস্তির মতো খেলা এখনই চালু করা সহজ হবে না বলে মত লিয়েন্ডারের। কারণ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এ সব খেলা সম্ভব নয়। সাইক্লিং, গল্ফের মতো খেলা প্রথমে শুরু হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ওপেন হওয়া নিয়েও ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা টেনিস তারকার উদ্বেগ রয়েছে। ‘‘শুনছিলাম গত ২৪ ঘণ্টায় প্রচুর মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নিউ ইয়র্কে। এ রকম একটা অবস্থার মধ্যে বিদেশ থেকে এত খেলোয়াড় সেখানে এসে কী ভাবে খেলবে?’’ প্রশ্ন তাঁর।
আগেই ঘোষণা করেছিলেন, চলতি মরসুমেই পেশাদার টেনিস থেকে বিদায় নিতে চান। কিন্তু করোনার জন্য সেই পরিকল্পনা পাল্টাতে পারে। ভারতীয় টেনিস ভক্তরা অবশ্য তা নিয়ে অভিযোগ করবেন না কারণ, লিয়েন্ডার পেজ মানে ভক্তদের কাছে সেই আবেগের ছবি। হার-না-মানা এক যোদ্ধা।
টানা সাত বার অলিম্পিক্সে নামার বিরল কৃতিত্ব গড়া লিয়েন্ডার চেয়েছিলেন অষ্টম বার অলিম্পিক্সে নেমে নতুন নজির গড়বেন। কিন্তু টোকিয়ো অলিম্পিক্স পিছিয়ে যাওয়ায় তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা এখনও জানেন না ১৮ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। গত বুধবারই ৪৭ বছরে পা দেওয়া লিয়েন্ডার বলছেন, ‘‘চলতি মরসুমে পেশাদার টেনিসে শেষ বার নামব ঘোষণা করেছিলাম। মাথায় ছিল টোকিয়ো অলিম্পিক্সের কথাও। কিন্ত এখন অলিম্পিক্স হবে ২০২১ সালে। ফের পিছিয়ে যেতে পারেও বলে শোনা যাচ্ছে।’’ আরও আশঙ্কা রয়েছে। ‘‘করোনার জন্য গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে যে রকম প্রভাব পড়েছে তাতে স্পনসরররা কী আগের মতো এগিয়ে আসতে পারবে? যদি ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলতে হয়, জাপান কি পারবে অলিম্পিক্স আয়োজন করতে? সেক্ষেত্রে লভ্যাংশটাই বা কোথা থেকে আসবে?’’ প্রশ্ন তাঁর।
শুধু আশঙ্কার দিকটাই লিয়েন্ডার অবশ্য দেখতে চান না। গত মরসুমে একটা সময় ভেবেছিলেন টেনিস থেকে অবসর নিয়ে নেবেন। উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন এতটাই। সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে লকডাউনে পরিবারের সঙ্গে, বাবার সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার নতুন ভাবে নিজেকে কোর্টে মেলে ধরতে তিনি প্রস্তুত। লকডাউনে নিজেকে ফিট রাখতে যোগব্যায়ামের সঙ্গে ঘণ্টা তিনেক নানা শারীরিক কসরত করছেন। কড়া নজর রেখেছেন খাদ্যাভ্যাসের দিকে। সঙ্গে রান্নাবান্না, বই পড়াও চলছে। যেন লিয়েন্ডার পেজের দ্বিতীয় সংস্করণ তৈরি হচ্ছে লকডাউনের পরে মুক্তি পাওয়ার জন্য। বলছিলেন, ‘‘একটা সময় মহেশ ভূপতি আর আমি বিশ্বাস করেছিলাম বিশ্বজয় করতে পারব আমরা। সেটা মাথায় রেখে পরিশ্রম করেই আমরা সফল হয়েছি। যখন লকডাউন উঠে যাবে, হয়তো কয়েক সপ্তাহ লাগবে পুরনো ছন্দে ফিরে আসতে। তখন নতুন, টগবগে লিয়েন্ডারকে ফিরে আসতে দেখা যাবে।’’
বাঙালি হিসেবে তাঁর গর্বের শেষ নেই। কী ভাবে ছোটবেলায় কলকাতায় ফুটবল, হকি খেলে বড় হয়েছেন এখনও তাঁর স্মৃতিতে তরতাজা। এই শহর থেকেই উঠে এসে তিন দশক বিশ্বটেনিসে একের পর এক সাফল্যের নেপথ্যে কলকাতার অবদান কী, কখনও ভুলে যাননি। মনে করেন, এই শহরই তাঁকে শিখিয়েছে কী ভাবে হারতে হারতেও উঠে দাঁড়াতে হয়। লিয়েন্ডার পেজ বলতে যে লড়াইয়ের মুখ ভেসে ওঠে, তা কলকাতাতেই তৈরি হয়েছে বলে তাঁর বিশ্বাস। পাশাপাশি, লিয়েন্ডার মনে করেন, করোনা যতই ক্ষতি করুক, মারণ ভাইরাস ঠিকই হার মানবে। এর আগেও যে ভাবে বহু অতিমারি হার মেনেছে। প্রথম সেটটা হয়তো করোনা পেয়েছে কিন্তু ম্যাচটা জিতবে মানবজাতিই, বিশ্বাস তাঁর। বরাবরের সেই লিয়েন্ডার পেজ। হার-না-মানা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy