টেনিস থেকে অবসর নিলেন লিয়েন্ডার।
পেশাদার টেনিস জীবনে জুটি বাঁধতে তাঁর জুড়ি নেই। পরিসংখ্যান বলছে, ডাবলসে এখনও পর্যন্ত ১৩১ জনের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন তিনি। মিক্সড ডাবলস ধরলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১৫৭-য়। শুক্রবার আরও একটি জুটি বাঁধলেন লিয়েন্ডার পেজ। তবে এ বার টেনিস কোর্টে নয়, রাজনীতির মঞ্চে। গোয়ায় গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন তিনি। কিছুটা আকস্মিকই এই সিদ্ধান্ত। কারণ ভারতের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড় যে রাজনীতিতে আসতে চলেছেন, সে সম্পর্কে কারওরই ধারণা ছিল না। লিয়েন্ডার নিজের মুখে কখনও রাজনৈতিক সংস্রবের কথা বলেননি। কিন্তু শুক্রবার গোয়ায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিতে দেখে অবাক গোটা দেশই। টেনিস থেকে অবসরের সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিলেন একইদিনে। আগে কখনও সরকারি ভাবে অবসরের কথা জানাননি তিনি। দেশের মাটিতে শেষ প্রতিযোগিতা খেলেছেন ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে, বেঙ্গালুরু ওপেনে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে খেলার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেখানেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
লিয়েন্ডারকে ভারতের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড় বললে হয়তো একটুও অত্যুক্তি করা হবে না। সিঙ্গলসে হয়তো সে ভাবে ছাপ ফেলতে পারেননি। কিন্তু ডাবলসে তাঁর রেকর্ড রীতিমতো ঈর্ষণীয়। ভারতের প্রাক্তন হকি খেলোয়াড় ভেস পেজের ছেলে লিয়েন্ডারের জন্ম খাস কলকাতায়। বেকবাগানের ছেলে তিনি। বাবা এবং মা জেনিফার দু’জনেই খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ভেস পেজ ১৯৭২ মিউনিখ অলিম্পিক্স হকি দলের সদস্য ছিলেন। মা ছিলেন ভারতীয় বাস্কেটবল দলের অধিনায়ক। মায়ের সূত্রেই প্রয়াত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে লিয়েন্ডারের। কলকাতার লা মার্টিনিয়ার স্কুল এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশুনো করেছেন তিনি।
বাবা হকি খেলোয়াড় হলেও সে দিকে কোনও ঝোঁক ছিল না লিয়েন্ডারের। বরং তাঁর আগ্রহ ছিল টেনিসে। অমৃতরাজ টেনিস অ্যাকাডেমিতে টেনিসে হাতেখড়ি। লিয়েন্ডারের বেড়ে ওঠায় বড় ভূমিকা নিয়েছিল সেই অ্যাকাডেমি। পাঁচ বছরের মধ্যেই বড় সড় সাফল্য পান লিয়েন্ডার। ১৯৯০ সালে উইম্বলডন জুনিয়র খেতাব জেতেন এবং জুনিয়র বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর স্থান অধিকার করেন। এরপর জুনিয়র ইউএস ওপেনও জেতেন তিনি। ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিক্সে রমেশ কৃষ্ণণের সঙ্গে জুটি বেঁধে ডাবলসের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন তিনি।
তবে লিয়েন্ডারের জীবনের সব থেকে বড় সাফল্য ১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিক্স। ফার্নান্দো মেলিজেনিকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন তিনি। তার আগের ম্যাচেই আমেরিকার আন্দ্রে আগাসির কাছে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। হারলেও লিয়েন্ডারের আগ্রাসী মানসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন আগাসী। এর মধ্যেই সিঙ্গলসে বেশ কয়েক বার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি তিনি। ফলে পুরোপুরি নজর দেন ডাবলসেই। জুটি বাঁধেন ভারতেরই মহেশ ভূপতির সঙ্গে। ভারতের এই দুই টেনিস খেলোয়াড় এর পরেই বিশ্বমঞ্চ দাপাতে থাকেন। ১৯৯৮ সালে তাঁরা তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনালে ওঠেন। পরের বছর চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামেরই ফাইনালে ওঠেন তাঁরা। এর মধ্যে উইম্বলডন এবং ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে নেন তাঁরা। এর আগে ভারতের কোনও জুটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ডাবলস জেতেনি। লিয়েন্ডার এবং মহেশ ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান।
সাফল্য পেলেও জুটি ধরে রাখেননি লিয়েন্ডার। পরের বছরই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সেবাস্তিয়েন লারেউ এবং ফ্রেঞ্চ ওপেনে জ্যান সিমেরিঙ্কের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। দু’বারই প্রথম রাউন্ডে হেরে যান লিয়েন্ডার। ইউএস ওপেনে ফের ভূপতির সঙ্গে খেলেন লিয়েন্ডার। কিন্তু সেখানেও প্রথম রাউন্ডে হারতে হয়। ভূপতির সঙ্গে মোট তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে জিতেছেন তিনি। এ ছাড়া চেক প্রজাতন্ত্রের দুই খেলোয়াড় লুকাস লুহি এবং রাদেক স্তেপানেকের সঙ্গেও সাফল্য পেয়েছেন। কেরিয়ারে মোট ১৬ বার ডাবলসে গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছেন। জিতেছেন আটটি। মিক্সড ডাবলসে রেকর্ড তুলনায় আরও ভাল। মোট ১০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। মিক্সড ডাবলসে লিয়েন্ডারের সাফল্যের সঙ্গে জড়িত দুই মার্টিনা — নাভ্রাতিলোভা এবং হিঙ্গিস। জিম্বাবোয়ের কারা ব্ল্যাক এবং লিসা রেমন্ডের সঙ্গেও সাফল্য রয়েছে তাঁর।
দেশের হয়েও তাঁর সাফল্য প্রশ্নাতীত। ভারতের হয়ে ডেভিস কাপ ডাবলসে মোট ৪৪টি ম্যাচ জিতেছেন তিনি, যা বিশ্বরেকর্ড। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর ভাঙেন ইটালির নিকোলা পিয়েত্রাঞ্জেলির রেকর্ড।
পেশাদার টেনিস জীবনে লিয়েন্ডার বরাবরই চর্চিত। সেই চর্চার পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে ভূপতির সঙ্গে তাঁর জুটি। এক সময় এই জুটিকে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ নামে ডাকা হত। বিভিন্ন কারণে সেই জুটি ভেঙে যায় এবং তার পর বারে বারে দু’জনের সম্পর্কের তিক্ততা সামনে আসে। রোহন বোপান্নার সঙ্গেও এক সময় জুটি বেঁধেছেন লিয়েন্ডার। তাঁর সঙ্গেও এখন মুখ দেখাদেখি বন্ধ। ১৯৯৬-এ দেশের হয়ে অলিম্পিক্সে পদক জেতার পরেই খেলরত্ন সম্মানে ভূষিত হন। পেয়েছেন অর্জুন পুরস্কারও।
বার বার জুটি বদলানো লিয়েন্ডার এ বার সম্পূর্ণ এক নতুন মঞ্চে। এই মঞ্চ তাঁর কাছে সম্পূর্ণ অজানা। তবে তাঁর সমর্থকরা মনে করছেন, তৃণমূলের সঙ্গে এই জুটি এত পলকা হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy