প্রতিজ্ঞ: ক্যারিবিয়ানে ভাল করতে আত্মবিশ্বাসী কুলদীপ। ফাইল চিত্র
বিশ্বকাপে সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি তিনি। সব ক’টা ম্যাচেও সুযোগ পাননি। বাদ পড়ে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিলেন, তা হয়তো সফল হয়নি। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো মঞ্চ থেকে একেবারে শূন্য হাতেও ফেরেননি ভারতের চায়নাম্যান বোলার। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার নতুন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে চান কুলদীপ যাদব। যে কারণে দিনে ছয় থেকে আট ঘণ্টা করে নিয়মিত অনুশীলন করে চলেছেন তাঁর ব্যক্তিগত কোচ কপিল পাণ্ডের কাছে।
বুধবার দুপুরে যখন কানপুরে কুলদীপকে ফোনে পাওয়া গেল, বৃষ্টির জন্য প্র্যাক্টিস সাময়িক বন্ধ ছিল। বিশ্বকাপ থেকে ফিরে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ বন্ধই রেখেছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই স্পিনার। এ দিন আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্তে কথা বলার সময় কুলদীপের গলায় কখনও ধরা পড়ছিল যন্ত্রণা, কখনও ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্কল্প। বিশ্বকাপের কথা উঠতেই বলে উঠলেন, ‘‘এ রকম বড় মঞ্চে খেলার চাপটা অন্য রকম হয়। সেটা এ বার বুঝতে পেরেছি। সে ভাবে সফল হয়তো হইনি, কিন্তু কিছু কিছু জিনিস শেখার চেষ্টা করছি। বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে দেবে বলেই মনে হয়।’’
কী শিখলেন জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলে? কুলদীপের জবাব, ‘‘ব্যাটসম্যানের মানসিকতাটা আরও ভাল করে বুঝতে হবে। ব্যাটসম্যান কী ভাবছে, কী শট খেলতে পারে, সেটা অনুমান করে নিতে হবে। বিশ্বকাপে অনেক ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে বল করেছি। চেষ্টা করেছি, ওদের মনঃস্তত্ত্বটা বুঝে নিতে। যাতে ভবিষ্যতে আবার মুখোমুখি হলে আমি তৈরি থাকতে পারি।’’
আশাবাদী: কানপুরে চলছে প্রস্তুতি। শিষ্যের দক্ষতায় আস্থা কোচ কপিল পাণ্ডের। নিজস্ব চিত্র
এর পরে কুলদীপ যা বললেন, তাতে একটা আক্ষেপ ফুটে উঠছিল। ‘‘মনে হয়েছে, বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে আরও ভালভাবে পরিকল্পনা করা উচিত ছিল আমার। সব কিছু নিয়ে আগাম ছক তৈরি থাকলে যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়। ক্রিকেটে সব কিছুই পরিকল্পনা নির্ভর। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের জন্য আলাদা, আলাদা পরিকল্পনা থাকা দরকার।’’ বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা আরও একটা জিনিস শিখিয়েছে কুলদীপকে। ‘‘উইকেট পেতে গেলে আগে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতে হবে। এখন থেকে সেটাই আমার লক্ষ্য হবে,’’ বলছিলেন তিনি।
সামনের লক্ষ্যটাও পরিষ্কার কুলদীপের। আসন্ন ক্যারিবিয়ান সফরে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া। যে জন্য বিশ্বকাপ থেকে ফিরেই কোচ কপিল পাণ্ডের অ্যাকাডেমিতে নিয়মিত দু’বেলা প্র্যাক্টিস চালাচ্ছেন। বলছিলেন, ‘‘স্যরের কাছে নিয়মিত ট্রেনিং চলছে। বোলিং করছি, ফিজিক্যাল ট্রেনিংও চলছে। প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের জন্য আলাদা, আলাদা করে পরিকল্পনা করছি। তিন তারিখ পর্যন্ত এখানে আছি।’’
বিশ্বকাপের থেকে ক্যারিবিয়ান সফরের চ্যালেঞ্জটা কিছু কম হতে যাচ্ছে না কুলদীপের কাছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই স্পিনার খেলছেন না। আছেন ওয়ান ডে এবং টেস্ট দলে। ওয়ান ডে-তে উল্টো দিকে থাকবেন ক্রিস গেল, আন্দ্রে রাসেল, নিকোলাস পুরানের মতো পাওয়ারহিটাররা। এঁদের জন্য কী ভাবে তৈরি হচ্ছেন? কুলদীপ বলছেন, ‘‘আমি জানি, ওদের দলে কত ভয়ঙ্কর সব ব্যাটসম্যান আছে। আইপিএলেই তো দেখেছি। তবে ক্রিস গেল, রাসেলদের জন্য আমার আলাদা পরিকল্পনা করা আছে। সেই মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’
কী সেই বিশেষ পরিকল্পনা? কুলদীপের জবাব, ‘‘আমি ক্রিজটাকে বিশেষ ভাবে কাজে লাগাতে চাই। চেষ্টা করছি, যাতে নানা কোণ থেকে বল ডেলিভারি করা যায়। মানে কখনও উইকেটের কাছে এসে, কখনও বা একটু দূরে সরে গিয়ে বলটা ছাড়া। এতে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করা যাবে বলে মনে হয়। স্ট্রোক খেলার জায়গাটাও ওদের দিতে চাই না।’’
কোচ কপিল পাণ্ডে আর একটু বিষদ ভাবে বলছিলেন কুলদীপের প্রস্তুতি-পর্ব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের কথা মাথায় রেখে কুলদীপের জন্য নেটে দু’ধরনের ব্যাটসম্যানেরই ব্যবস্থা করা হয়েছে। কপিল বলছিলেন, ‘‘বাঁ-হাতি, ডান হাতি— দু’ধরনের ব্যাটসম্যানকেই নেটে ডাকা হয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে কুলদীপ নেটে বল করছে। যাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ক্রিস গেল, পুরানদের বিরুদ্ধে সমস্যা না হয়।’’
আরও একটা বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন কপিল। কুলদীপকে তাঁর কোচ বলেছেন, মাঝে, মাঝে কব্জির চেয়ে কাঁধটা বেশি ব্যবহার করো। ফোনে কপিল বলছিলেন, ‘‘কাঁধটা ব্যবহার করলে বলের গতিটা বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে জোরের উপরে বল স্পিন করে। ব্যাটসম্যানদের খেলতে সমস্যা হয়। বিশ্বকাপের আগেও এই কথাটা আমি কুলদীপকে বলেছিলাম। বাবর আজ়মের বলটার কথা মনে আছে? ওটা কিন্তু কাঁধ ব্যবহার করার জন্য জোরের উপরে স্পিন করে ঢুকে আসে। ঠিক এই ধরনের বল আরও করতে বলেছি ওয়েস্ট ইন্ডিজে। প্র্যাক্টিসেও আমরা সেটা করছি।’’
আইপিএলে ব্যাটসম্যানদের হাতে প্রচণ্ড মার খাওয়ার পরে একটা সময় ফ্লাইট দিতে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন কুলদীপ। যে সমস্যার কথা তিনি কোচকেও বলেন। কপিলের পরামর্শ ছিল, সীমিত ওভারের ফর্ম্যাটে একটু টেনে বল করলে সমস্যার কিছু নেই। কিন্তু ফ্লাইটটাও করিয়ে যেতে হবে। কপিল বলছিলেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে যে দারুণ সব পাওয়ারহিটার আছে, তা আমরা জানি। তা হলেও আমি কুলদীপকে বলেছি, ফ্লাইট করাতে ভয় পাবি না। সঙ্গে অবশ্যই জোরের উপরে বল মিশিয়ে দিতে হবে। ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতে বোলিংয়ে বৈচিত্র থাকাটা খুব জরুরি।’’
নিজের সামনে কী লক্ষ্য রেখে এগোচ্ছেন? কুলদীপ বলে উঠলেন, ‘‘বিশ্বকাপ শেষ। নতুন সিরিজ, নতুন লক্ষ্য। তবে এত উইকেট পেতে হবে বা এই ব্যাটসম্যানকেই আউট করতে হবে, এ রকম কোনও লক্ষ্য সামনে রাখিনি। যে পরিকল্পনা করে যাচ্ছি, সেগুলো ক্যারিবিয়ানে কাজে লাগাতে চাই। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে চাই।’’
বিশ্বকাপে যদি কিছু মধুর স্মৃতি হয়ে থাকে কুলদীপের, তবে সেটা পাকিস্তানের বাবর আজ়মের বিরুদ্ধে সেই বিস্ময় বল। যা চায়নাম্যান স্পিনারের হাত থেকে বেরিয়ে জোরের উপরে স্পিন করে বাবরের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে স্টাম্প ছিটকে দেয়। জানেন কি ওই বলটাকে শেন ওয়ার্নের শতাব্দীর সেরা বলের সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে? শুনে কুলদীপ একটু হাসলেন। তার পরে বললেন, ‘‘বিশ্বকাপে আমার কাছে ওই বলটা একটা স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে। ওই বলটা আমাকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে। অবশ্যই আমার চেষ্টা থাকবে, ম্যাচে আরও ও রকম ডেলিভারি করার। সে জন্য প্র্যাক্টিসে কম পরিশ্রম করছি না। দেখা যাক, কী হয়।’’
কুলদীপ কিন্তু বিশ্বকাপ স্মৃতি পিছনে ফেলে নতুন লড়াই শুরু করতে তৈরি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy