কলকাতার বিরুদ্ধে নামার আগে বাংলার ছেলেরা। সুব্রত পাল, দীপক মণ্ডলকে নিয়ে মারাদোনার বিরুদ্ধে খেলা বিশ্বকাপার কোচ পিটার রিড।
রাগবি বল।
টেনিস বল।
ফুটবল।
এ বার সুইস বল।
আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচের আগের সকালে যুবভারতীতে গিয়ে দেখা গেল, আটলেটিকো দে কলকাতা অনুশীলনের নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঠে। আর সেখানে চমক সুইস বল!
সেটা কী?
লাল বা নীল রংয়ের এক-একটা বল। দূর থেকে দেখলে বড় বেলুনের মতো লাগে। বেশির ভাগ সময় এই ধরনের বল দেখা যায় জিমে। শরীর-চর্চার জন্য।
শনিবার অবশ্য আটলেটিকো কোচ আন্তোনিও হাবাসের অনুশীলনে সুইস বল আমদানি করা হল শরীর-চর্চার জন্য নয়। মজার খেলা ও হাসি-ঠাট্টার উদ্দেশ্যে। আনেলকার মুম্বই সিটির বিরুদ্ধে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে লুই গার্সিয়াদের মেরেকেটে যে চল্লিশ মিনিটের ট্রেনিং করালেন হাবাস, তাতে প্রথম কুড়ি মিনিটই ফুটবলাররা মজে থাকলেন সুইস বলে। প্র্যাকটিসের পরে আটলেটিকো কোচ বললেন, “আইএসএল শুরুর আগে আমার ছেলেদের চাপমুক্ত রাখতে চাইছি। তাই প্র্যাকটিসে অন্য রকম কিছু চেষ্টা করলাম।”
কিন্তু এত বড় টুর্নামেন্ট শুরুর আগে শুধুই কী সুইস বল টেনশনমুক্ত করতে পারবে কলকাতার আটলেটিকোকে? উত্তরটা ‘না’ খুঁজেই বোধহয় সকাল থেকে নতুনত্বের সন্ধানে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন আটলেটিকো কর্তারা। আর তাঁদের ঝুলি থেকে যা বেরোল, সেটাও যে কোচ হাবাসের চিন্তার মতোই অভিনব! সকালটা সুইস বল নিয়ে কাটে যদি, তা হলে সন্ধ্যার আয়োজনে ছিল ‘হেয়ার স্টাইল সেশন’। যেখানে ফুটবলাররা যেমন খুশি চুল কাটলেন। ইচ্ছা মতো চুলের স্টাইলও করলেন। আটলেটিকো দে কলকাতা টিমের ম্যানেজার রজত ঘোষদস্তিদারের এই উদ্যোগে অংশ নিলেন বিদেশি-স্বদেশি মিলিয়ে জনা দশেক ফুটবলার।
ফুটবলারদের চাপ কাটাতে হাবাস এবং টিম ম্যানেজার তো বটেই, ‘মেসি-নেইমার’ও আসরে ঢুকে পড়ছেন! সরাসরি কলকাতা থেকে না হোক, বেজিংয়ে। বিকেলের সূচিতে ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ম্যাচ দারুণ ভাবে উপভোগ করলেন গার্সিয়ারা। এমনকী ওই দেড় ঘণ্টা কোনও ফুটবলারকেই টিম হোটেলে নিজের ঘরের বাইরে বেরোতে দেখা যায়নি। সুপার ক্লাসিকোর আগে অবশ্য যুবভারতীতে দাঁড়িয়ে বোরহা বলছিলেন, “ব্রাজিল এখন আহত বাঘ। আজকের ম্যাচে ওরা বেশি বিপজ্জনক থাকবে।” ম্যাচে বোরহার কথাই মিলে গেল।
গার্সিয়া ও সুইস বল। ফুটবল ধামাকা শুরুর আগের দিন।
হাবাসের নির্দেশে শনিবারের দিনটা একেবারে ফ্রি রাখা হয়েছিল ফুটবলারদের জন্য। কোনও ইভেন্ট নেই। কোনও বাড়তি চাপ নেই। শুধু বিকেলে বোরহা ফার্নান্দেজকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন কোচ। যেখানে হাবাস বললেন, “জেতার জন্য পুরো টিম তৈরি। বিপক্ষ টিমে কে খেলতে পারছে, কে পারছে না, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই আমার।” আটলেটিকো কোচের কথা শুনে মনে হল, মুম্বই সিটি-র মার্কি ফুটবলার আনেলকা আচমকা উদ্বোধনী ম্যাচ খেলার অনুমতি পেয়ে যাওয়ায় বিরক্তই তিনি। হবে না-ই বা কেন, এত দিন তাঁকে নিয়ে যে আলাদা কোনও স্ট্র্যাটেজি তৈরি-ই করেননি তিনি! স্বভাবতই যার দরকারও পড়েনি তো এত দিন!
পেটের সমস্যায় প্রথম ম্যাচে নেই রাকেশ মাসি। নইলে এ দিন সকালে হাবাসের অনুশীলন দেখে মনে হল, রবিবার আটলেটিকোর প্রথম একাদশে যে পাঁচ জন স্বদেশি ফুটবলার থাকতে পারেন তাঁরা হলেন, অর্ণব মণ্ডল, বিশ্বজিত্ সাহা, ডেঞ্জিল ফ্রাঙ্কো, সঞ্জু প্রধান ও মহম্মদ রফিক। হাবাসের ৪-১-৩-২ ছকে ডিফেন্সে বোরহার পাশে অর্ণব খেলবেন। দুই সাইড ব্যাক ডেঞ্জিল ও বিশ্বজিত্। ব্লকার হোফ্রে ম্যাতিউ। মাঝমাঠে পোদানির দু’পাশে রফিক-সঞ্জু। অ্যাটাকিং থার্ডে গার্সিয়ার সঙ্গে ফিকরু থাকলেও, গার্সিয়া খেলবেন একটু নীচে থেকে। উইথড্রন ফরোয়ার্ডে। গোলে আপোলা বেটে। তবে টিম কম্বিনেশন যা-ই হোক না কেন, কলকাতার দল যে সেট পিস থেকে গোল পেতে চাইছে, সেটা এ দিনও স্পষ্ট করে দিলেন হাবাস। শেষ বেলায় আলাদা করে জোর দিলেন ফ্রি-কিক ও পেনাল্টি শু্যট আউটে। হাবাস বলছিলেন, “আমার অজুহাত দেওয়ার জায়গা নেই। পিচ, আবহাওয়া, বিপক্ষ সমস্যা যত বড়-ই হোক না কেন, আমাকে জিততেই হবে।”
হাবাস-ব্রিগেড তৈরি। তাঁর দল আটলেটিকোকে দু’হাত খুলে বরণ করতে সেজে উঠেছে কলকাতাও। যুবভারতীর আশেপাশে যেখানেই চোখ পড়ছে ‘ফাটাফাটি ফুটবল’-এর পোস্টার। স্টেডিয়ামের ভিতরেও চোখ ধাঁধানো আলোর মধ্যে জ্বলজ্বল করছে গার্সিয়া-বোরহাদের বড় বড় কাটআউট। জয়ধ্বনি থেকে শুরু করে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস কোনও কিছুরই কমতি নেই। শহরবাসীর এই বিপুল সমর্থনের মর্যাদা আটলেটিকো দে কলকাতা দিতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার!
ছবি: উত্পল সরকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy