Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cristiano Ronaldo

নেমার, সুয়ারেসদের ছেড়ে দেওয়ায় সেই দলটাই নেই

এই বার্সেলোনাকে দেখে আমার আর্সেন ওয়েঙ্গারের জমানার আর্সেনালের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।

দ্বৈরথ: মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারকার লড়াইয়ে এ ভাবেই রোনাল্ডো হারিয়ে দিলেন মেসিকে। গেটি ইমেজেস

দ্বৈরথ: মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারকার লড়াইয়ে এ ভাবেই রোনাল্ডো হারিয়ে দিলেন মেসিকে। গেটি ইমেজেস

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৩৮
Share: Save:

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

বার্সেলোনা ০ • জুভেন্টাস ৩

প্রায় দু’বছর সাত মাস পরে লিয়োনেল মেসি বনাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দ্বৈরথ দেখার আশায় মঙ্গলবার গভীর রাতে টেলিভিশনের সামনে বসেছিলাম। কিন্তু আমার মতো কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীও নিশ্চয়ই হতাশ।

এ কোন বার্সেলোনা? যে দলে এক সময় দিয়েগো মারাদোনা, ব্রাজিলের রোনাল্ডো, লুইস ফিগো, রিভাল্ডো, রোনাল্ডিনহো, জাভি হার্নান্দেস, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা থেকে সাম্প্রতিক কালে নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র), লুইস সুয়ারেসের মতো তারকারা খেলেছে। সেই বার্সেলোনায় এখন শুধুই অতি সাধারণ মানের ফুটবলারদের ভিড়। ভাগ্য ভাল তাই জুভেন্টাসের কাছে ০-৩ হেরেছে বার্সেলোনা। ব্যবধান আরও বাড়লেও আশ্চর্য হতাম না।

আরও পড়ুন: এটিকে-মোহনবাগান হার ভুলে হায়দরাবাদের জন্য তৈরি হচ্ছে

এই বার্সেলোনাকে দেখে আমার আর্সেন ওয়েঙ্গারের জমানার আর্সেনালের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। কিংবদন্তি ফরাসি কোচ একের পর এক প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার উপহার দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু আর্সেনালের ট্রফির ভাঁড়ার শূন্যই থেকে গিয়েছে। নতুন ফুটবলার তুলে আনা অবশ্যই জরুরি। তার মানে এই নয় যে, ক্লাব ট্রফি জিতবে না। আর্সেনালের সঙ্গে সমার্থক হয়ে যাওয়া ওয়েঙ্গারকেও শেষ পর্যন্ত সরাতে বাধ্য হয়েছিলেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ।


আরও পড়ুন: গোল করতে পারলেই অন্য ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যাবে, বললেন ফাওলার

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম পর্বে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে খেলতে পারেনি রোনাল্ডো। ২-০ জিতেছিল মেসিরা। পেনাল্টি থেকে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক করেছিল একটি গোল। মেসির পাস থেকেই আর একটি গোল করেছিল ওসুমানে দেম্বেলে। বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে মঙ্গলবারের দ্বৈরথের তাই বাড়তি আকর্ষণ ছিল। কিন্তু ম্যাচটা শুরু হওয়ার পরেই মনে হচ্ছিল, এ বার লড়াইটা অনেক বেশি কঠিন বার্সেলোনার কাছে।

রোনাল্ডো ফিরেছে। তার উপরে প্রথম পর্বে হারের বদলা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকা জুভেন্টাসের ফুটবলারদের প্রধান লক্ষ্য হবে মেসিকে খেলতে না দেওয়া। এই পরিস্থিতিতে জেরার পিকের মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারও ছিল না বার্সেলোনায়। আমার আশঙ্কাই সত্যি হল। ম্যাচের শুরু থেকেই দেখলাম, মেসি বল ধরলেই জুভেন্টাসের ফুটবলারেরা ঘিরে ধরেছে। ও একা কী করবে? অবিশ্বাস্য ভাবে একাধিক গোল নষ্ট করল আঁতোয়া গ্রিজ়ম্যান। ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে ঠিকই। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দশ স্ট্রাইকারের তালিকাতেও গ্রিজ়ম্যান থাকবে না। নেমার, সুয়ারেসের মতো স্ট্রাইকারকে কেন ছেড়েছিলেন বার্সেলোনা কর্তারা, তা আমার কাছে রহস্য। এখন সব ম্যাচেই চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।

অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে বার্সেলোনার খেলার ধরনও বদলে গিয়েছে। হারুক-জিতুক ওদের খেলা দেখে মন ভরে যেত। নিজেদের মধ্যে অসংখ্য নিখুঁত পাস খেলে আক্রমণে উঠত মেসিরা। মঙ্গলবার রাতে দেখলাম, প্রথম দু’টো পাস হয়তো ঠিক হচ্ছে। তার পরেই মিস পাস করছে পেদ্রি, ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাও, ক্লেমঁ লংলে-রা। এখান থেকেই প্রতিআক্রমণে উঠছিল জুভেন্টাস।

ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই এ ভাবে খেলছিল রোনাল্ডোরা। মনে হচ্ছিল, জুভেন্টাসের আক্রমণ বনাম বার্সেলোনার রক্ষণের লড়াই চলছে। নিজে ডিফেন্ডার ছিলাম বলে জানি, পাল্টা আক্রমণ না করলে বেশি ক্ষণ এই চাপ সামলাতে পারবে না বার্সেলোনার রক্ষণ। কিন্তু আক্রমণে উঠবে কী করে? মেসি ছাড়া তো আর কেউ নেই। এই পরিস্থিতিতে ১৩ মিনিটেই এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। পেনাল্টি থেকে প্রথম গোল করে রোনাল্ডো। আমি মুগ্ধ সি আর সেভেনের পেনাল্টি আদায় করার কৌশল দেখেও। বল নিয়ে ও বার্সেলোনার পেনাল্টি বক্সে ঢুকেই দেখল, সামনে তিন ডিফেন্ডার দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে বুঝে গেল কোনও অবস্থাতেই শট মারলে বল গোলে ঢুকবে না। তাই বল ধরে এগোনোর চেষ্টা করল। রোনাল্ডো জানত, বার্সেলোনার ডিফেন্ডারেরা ওকে আটকানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেই। ঠিক সেটাই হল। ২১ বছর বয়সি রোনাল্ড আরাউখো ফাউল করে। পেনাল্টি থেকে গোল করে রোনাল্ডো। সাত মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় ধাক্কা। খুয়ান কুয়াদ্রাওয়ের ক্রস শরীর শূন্য ভাসিয়ে সাইড ভলিতে জালে জড়িয়ে দেয় ওয়েস্টন।

প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বার্সেলোনা যত বার আক্রমণে উঠেছে, নেপথ্যে সেই মেসি। কখনও জুভেন্টাসের ডিফেন্ডারেরা, কখনও আবার অভিজ্ঞ গোলরক্ষক জানলুইজি বুফনের হাত বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর সামনে। আলভারো মোরাতা, দানিলো, অ্যারন র‌্যামসে, ওয়েস্টন ম্যাকেনলির মতো সতীর্থরা থাকায় রোনাল্ডো অনেক খোলামনে খেলছে। দলকে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়েছে। মেসির তো সেই সুযোগ নেই।

৫২ মিনিটে রোনাল্ডো দ্বিতীয় গোলও করল পেনাল্টি থেকে। ৪৯ মিনিটে বক্সের মধ্যে লংলের হাতে বল লাগে। ভার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেয় রেফারি। এ বারও গোল করতে ভুল করেনি রোনাল্ডো। সেই সঙ্গে দু’টি নতুন কীর্তিও গড়ল। এক) ক্লাব ফুটবলে ৬৫০তম গোল। দুই) ক্যাম্প ন্যু-তে ১৪তম গোল। ক্লাব ফুটবলে অন্য কোনও প্রতিপক্ষের মাঠে এত গোল করেনি সি আর সেভেন। রোনাল্ডো অনবদ্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy