দলকে শেষ চারে তুলে ভারতীয় কোচ হিসেবে ইতিহাস গড়লেন খালিদ জামিল। ছবি - টুইটার
তিনি কম কথার মানুষ। নিঃশব্দে কাজ করে যান। পারলে দিনের ২৪ ঘণ্টা ফুটবল নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন। তবে নিজের সাফল্যকে রং চড়িয়ে দেখানোর তাগিদ তাঁর মধ্যে নেই। দল সাফল্য পেলে ফুটবলারদের কৃতিত্ব দেন। কিন্তু ফল উল্টো হলেই তাঁর নামের পাশে জুড়ে দেওয়া হয় ‘তুকতাক কোচ’!
ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালীন এমনই ‘উপাধি’ তাঁর নামের পাশে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ সেই খালিদ জামিলের হাত ধরেই শেষ চারে চলে গেল নর্থইস্ট ইউনাইটেড। আইএসএলের মঞ্চে বরাবরই বিদেশি কোচেদের দাপট। সেখানে খালিদ ভারতীয় হিসেবে তৈরি করলেন অনন্য উদাহরণ। যদিও এমন সাফল্যের পরেও তিনি বরাবরের মত নির্লিপ্ত।
প্রথম ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়ে চলতি আইএসএল অভিযান দারুণ শুরু করেছিল নর্থইস্ট। কিন্তু কয়েকটা ম্যাচ যেতে না যেতেই স্প্যানিশ কোচ জেরার নুসের সঙ্গে ফুটবলারদের মনোমালিন্য চরম আকার নিল। প্রভাব পড়ল দলের খেলায়। বিদেশি কোচের মোহ ত্যাগ করে দলের কর্তারা সহকারি খালিদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিলেন।
নর্থইস্টের ভাগ্যের চাকা ঘোরা শুরু এর পর থেকেই। গত ১৭ জানুয়ারি প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ৯টি ম্যাচ খেলেছে পাহাড়ের দল। এর মধ্যে ৬টি জয় ও ৩টি ড্র। লিগের শেষ ম্যাচেও কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ২-০ জয়। ২০ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম ভারতীয় কোচের হাত ধরে শেষ চারে চলে গেল নর্থইস্ট। ইতিহাস গড়লেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার।
শনিবারের দুপুরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন। মুম্বই থেকে স্ত্রী রাজবীর কৌল জামিল দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার মাঝে আনন্দবাজার ডিজিটালকে সময় দিলেন খালিদ। বললেন, “শুক্রবার রাতে কেরলকে হারানোর পর থেকেই উত্তেজনা টের পাচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই সাফল্য ফুটবলারদের। কারণ ওরাই তো মাঠে নেমে খেলে। ওরা মাঠে নেমে ১০০ শতাংশ উজাড় করে দিয়েছে বলেই তো দল শেষ চারে এল। মনে রাখবেন, একজন কোচ তখনই ভাল, যখন তার দল ভাল খেলে।”
লিগ পর্ব শেষ। এবার নকআউটের কঠিন লড়াই। যদিও খালিদ বাড়তি চাপ নিচ্ছেন না। বরং বলছেন, “ছেলেরা নিজের দায়িত্ব জানে। ওরাই তো দলকে এত দূর নিয়ে এসেছে। ওরা তো চাপের মধ্যেই এতগুলো ম্যাচ খেলেছে। তাই বাকি ম্যাচগুলো ওরাই দায়িত্ব নিয়ে খেলবে।”
আইজল এফসি-কে আই লিগ দিয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে কলকাতায় পা রেখেছিলেন। তবে লাল-হলুদে কাটানো একটা মরসুম তাঁর কাছে যেন দগদগে ঘায়ের মতো। তবু প্রায় আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করিয়েই দিয়েছিলেন। এরপর সুপার কাপে সুভাষ ভৌমিকের সঙ্গে ঝামেলা। গোটা মরশুম জুড়ে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলাররা তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দেগেই চলেছিলেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল ‘তুকতাক’ কোচের তকমা।
তবে শুধু লাল-হলুদ নয়। পাশের ক্লাব চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানও তাঁকে যোগ্য মর্যাদা দেয়নি। ২০১৮-১৯ মরসুমের মাঝপথে শঙ্করলাল চক্রবর্তী সরে দাঁড়ানোয় দায়িত্ব দেওয়া হয় খালিদকে। কিন্তু মরসুম শেষ হতেই তাঁকে ভুলে যান সবুজ-মেরুন কর্তারা।
সেই অপমানের বদলা এবার নিয়েছেন খালিদ। চলতি মরসুমে তিনি এক বার এটিকে মোহনবাগানকে হারিয়েছিলেন। পুরনো দল লাল-হলুদকে হারিয়েছেন দু’বার। যদিও খালিদ দুই প্রধানকে হারানো নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে রাজি নন। বলছেন, “ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানে কী ঘটেছিল সেটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাই না। অতীত নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। মুম্বই এফসি-তে ছয় বছর কাটানোর পরেও মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে আমার চাকরি চলে গিয়েছিল। তাই সাফল্য নিয়ে যেমন বাড়তি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি না, তেমনই ব্যর্থ হলেও ভেঙে পড়ি না। বরং বর্তমান নিয়েই থাকতে ভালবাসি।”
গত কয়েক বছর ধরে ভিপি সুহের, আশুতোষ মেহতা, গুরজিন্দর কুমার, প্রভাত লাকরা, ব্রিটোদের নাম ভারতীয় ফুটবলে শোনা যায়। ওঁদের স্বীকৃতি দিয়েছেন এই মুম্বইকরই। স্রেফ ফুটবল প্রেম ও পরিশ্রমের উপর ভর করে। ‘তুকতাক’ করে কখনওই নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy