ফিরে আসা তিন। ইডেনের নেটে হরভজন, ইশান্ত ও ভুবনেশ্বর। রবিবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
প্রথম জন আধুনিক টিম ইন্ডিয়ার সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার। কিন্তু চোট-আঘাতের ‘রাহু’ তাঁর ক্রিকেট-গ্রহকে গ্রাস করেছে বারবার। সবচেয়ে সিনিয়র পেসার হয়েও হারাতে হয়েছে বিশ্বকাপ স্কোয়াডের জায়গা। কিন্তু তা-ও তিনি আশা ছেড়ে দেননি। এবং শেষমেশ ফিরে এসেছেন জাতীয় দলে, চোটমুক্ত হয়ে।
দ্বিতীয় জন অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝামাঝি চোট পাওয়ার পর থেকে যেন অন্য কেউ হয়ে গিয়েছিলেন। বিদেশে হতশ্রী পারফরম্যান্স যখন তাঁর কেরিয়ারের উপরই বড় প্রশ্নচিহ্ন বসাতে চলেছে, তখন আইপিএলে ফিরে এসেছেন দুর্দান্ত ভাবে। বারোটা ম্যাচে আঠারো উইকেট নিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি এখনও শেষ হয়ে যাননি।
তৃতীয় জন, উপরোক্ত দুইয়ের চেয়ে বয়সে বড়। অভিজ্ঞতায় তো বটেই। আর তাঁর ফিরে আসার গল্পটা অনেক বেশি রোম্যান্টিক, যা শুনলে রূপকথা বলে ভ্রম হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। প্রায় আড়াই বছর তাঁর অবস্থান ছিল জাতীয় দলের বৃত্তের কয়েকশো মাইল দূরে। তিনি কোনও দিন ইন্ডিয়া জার্সিতে আবার মাঠে নামবেন, এই তত্ত্বে বিশ্বাস করার মতো মানুষ ক্রমশ কমে যাচ্ছিল। সেই অবস্থা থেকে গোটা ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দিয়ে তাঁর স্বপ্নের ‘ঘরে ফেরা’।
ইশান্ত শর্মা। ভুবনেশ্বর কুমার। হরভজন সিংহ।
রবিবারের ইডেনে প্রত্যাবর্তনের তিন মুখ। যে তিন আসন্ন বাংলাদেশ সফরে আবির্ভূত হচ্ছেন তিনটে আলাদা চ্যালেঞ্জ নিয়ে।
ইশান্তের চ্যালেঞ্জ, তরুণ ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেওয়ার। ভুবনেশ্বরের চ্যালেঞ্জ, আইপিএলের ছন্দ টেস্ট আর ওয়ান ডে-তেও ধরে রাখার। হরভজনের চ্যালেঞ্জটা সবচেয়ে কঠিন, আবার সবচেয়ে আকর্ষণীও— প্রত্যাবর্তনের অধ্যায় একটা টেস্টেই শেষ না করে দেওয়া!
বাংলাদেশ টেস্টের বাহাত্তর ঘণ্টা আগে যদিও সে সব চিন্তায় সময় নষ্ট করতে চান না অভিজ্ঞ স্পিনার। বরং তাঁর ভাবনায় এখন শুধু ম্যাচ জেতা। বিশেষ করে তাঁর টিমের অধিনায়কের নাম যেখানে বিরাট কোহলি, যাঁর ক্রিকেট-দর্শনে ‘মিডল গ্রাউন্ড’ বলে কিছু নেই। হরভজনের কথায়, ‘‘বিরাট ম্যাচউইনার। ও প্রচণ্ড লড়াকু, জেতা ছাড়া কিছু নিয়ে ভাবেই না। সব সময় পজিটিভ থাকে, চ্যালেঞ্জ নিতে চায়, জিততে চায়। আমি ওর সঙ্গে আগেও খেলেছি তাই জানি বিরাট কী জিনিস। অস্ট্রেলিয়ায় ও যে ভাবে অধিনায়কত্ব করেছে, আমার তো দারুণ লেগেছে। ও সব সময় বলে, এই মানসিকতার জন্য যদি দু’একটা ম্যাচ হারতেও হয় তো ক্ষতি নেই। ক্রিকেটে বিরাট একটা অন্য রকম স্পিরিট নিয়ে এসেছে।’’
জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখতে হলে তাঁর প্রধান যুদ্ধটা হবে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে। কী ভাবছেন হরভজন তাঁর নতুন স্পিন-সঙ্গী নিয়ে? ‘‘আমরা টিম হিসেবে সফরটায় যাচ্ছি। তাই নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার প্রশ্নই ওঠে না। কুম্বলে বা পরে অমিত মিশ্রর সঙ্গে আমার যে রকম জুটি ছিল, অশ্বিনের সঙ্গেও তাই থাকবে,’’ বলে সংযোজন, ‘‘আগে টিমে আমার যা ভূমিকা ছিল, এখনও সেটাই থাকবে। জেতার জন্য ঝাঁপানো আর বাকিদের যতটা সম্ভব সাহায্য করা।’’
যে তরুণ বোলিং সতীর্থদের কথা বলছিলেন হরভজন, তাঁদের একজন তখন তাঁরই পাশে বসে বলছেন, ‘‘হরভজনের সঙ্গে বল করব ভাবলেই এক্সাইটেড লাগছে।’’ বক্তা, ভুবনেশ্বর কুমার। আইপিএলে দুর্দান্ত বোলিংয়ের আত্মবিশ্বাস যাঁর কথায় স্পষ্ট। এবং যিনি বলে দিলেন, বিদেশে ভারতীয় বোলিংকে মোটেও আর ছন্নছাড়া বলা যাবে না। নেতৃত্বহীন তো নয়ই।
বোলিং নেতা প্রসঙ্গে যাঁর নামটা প্রথমেই উঠবে, সেই ইশান্ত কিন্তু এ ব্যাপারে ভেবে চিন্তার ভিড় বাড়াতে চান না। বরং তাঁর ইচ্ছে, তরুণরা নিজেরাই নিজেদের কাজটা শিখতে শুরু করুক। দরকারে তিনি তো আছেনই। কিন্তু চামচে করে গিলিয়ে দেওয়া তাঁর ডিএনএ-য় নেই। ‘‘এখন সবার উচিত নিজে থেকেই এগিয়ে এসে দায়িত্ব নেওয়া। তা হলে আমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে না ওদের ভূমিকাটা কী। তার চেয়ে আমি তরুণদের বলব নিজেদের কাজ ঠিকঠাক করে যেতে। নিজেরাই নিজেদের শেখাতে। আমি এ ভাবেই শিখেছি।’’ বিশ্বকাপ না খেলার হতাশা এখনও তাড়া করে দিল্লির পেসারকে। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর গলায় অতীত ভুলে ভবিষ্যতের চিন্তা। ‘‘আমার স্ট্রাগল দেখলেই বুঝতে পারবেন, মানুষ হিসেবে আমি কতটা টাফ। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল একটা নির্দিষ্ট লক্ষ রেখে এগনো। আর বিশ্বাস করা যে, কোনও না কোনও দিন ঠিক সেই লক্ষ্যে পৌঁছব।’’
তিন বোলারের সঙ্গে ওপেন মিডিয়া সেশনে অবধারিত ভাবে উঠে আসে কোচ-প্রসঙ্গ। কোচ নিয়ে বিতর্ক টিমে কতটা প্রভাব ফেলছে, বা আদৌ কোনও প্রভাব ফেলছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও দেওয়া হল না মিডিয়া ম্যানেজারের নির্দেশে। তবে তার মধ্যেই ইশান্ত বলে দিলেন, ‘‘এটা বলা যাবে না যে আমাদের কোনও কোচ নেই। রবি ভাই কোচের কাজ করছেন। সব সিন্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তো ওঁরই। আর আমাদের তো এখন তিনটে বিভাগেই বিশেষ কোচ আছেন। এই অবস্থায় হেড কোচের সে রকম দরকারও নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy