মগ্ন: ইডেনে ফের ঝলসে ওঠার সাধনায় বিরাট। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সল্টলেক ক্যাম্পাসের মাঠে বিরাট কোহলি অনুশীলন করবেন শুনে এক দিন আগেই পুরুলিয়া থেকে পুরনো হস্টেলে ফিরে এসেছিলেন দীপঙ্কর গড়াই। শুধু্মাত্র বিরাট-দর্শনেই থেমে থাকেনি তাঁর ভাগ্য। প্রাপ্তি তাঁর শটের সৌজন্যে কুড়িয়েপাওয়া একটি বলও!
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর শিবির থেকে সেই বলটি ফেরত চাওয়া হলেও বিরাট হাত দেখিয়ে নির্দেশ দেন, বলটি যেন সেই ছাত্রকে দেওয়া হয়। মুহূর্তে বন্ধুদের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন সেই ছাত্র। রবওঠে ‘‘বিরাট... বিরাট...!’’
জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করে দেওয়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সল্টলেক ক্যাম্পাসের মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না সাংবাদিকদের। মাঠের চারপাশ প্রায় ছ’ফুট উচ্চতার কাপড়ে মোড়া। উঁকি-ঝুঁকি দিয়েও দেখার সম্ভাবনা নেই। কোনও রকমে একটি বিল্ডিংয়ের পাঁচিলে উঠে শুরুর দিকের অনুশীলনে নজর রাখা গেল। কিছুক্ষণ পরে হস্টেলের ছাত্ররাই তাঁদের দ্বার খুলে দিয়ে আমন্ত্রণ জানালেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। বলয়ের বাইরে দাঁড়িয়েই বিরাট-দর্শন করছিলেন ছাত্র-অধ্যাপকরা। পাশের নেটে ব্যাট করা কে এল রাহুল, কুইন্টন ডি’ককদের নজর এড়িয়ে মূল লক্ষ্য ছিলবিরাটের উপরে।
প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক বাসের সামনের আসনে বসে এসেছেন মাঠে। তিনি নামার সময় এক পুলিশকর্মী সামনে চলে যান ছবি তুলতে। উত্তেজনায় হয়তো বলয়ের নিয়ম ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। অল্পের জন্য সেই নিয়ম ভঙ্গ হয়নি। বিরাট মাঠে গিয়ে অল্প স্ট্রেচিং করার পরে ব্যাট করতে চলে যান নেটে। আরসিবির ওপেনার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব প্রথম ছয় ওভারে যতটা সম্ভব রান বাড়িয়ে নেওয়া। কিন্তু লখনউ সুপার জায়ান্টস দলের দুই তারকা পেসারই বিরাটের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। শেষ সাক্ষাতে দুষ্মন্ত চামিরার প্রথম বলে আউট হয়ে ফিরেছিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক। কিন্তু তাঁর আরও বড় কাঁটা হয়ে উঠতে পারেন বাঁ-হাতি পেসার মহসিন খান। পিচের কোণ থেকে ডান-হাতি ব্যাটারের বাইরের দিকে বল নিয়ে যান মহসিন। সম্প্রতি বিরাট বাইরের বলে খোঁচা মেরে একাধিক বার আউট হয়েছেন। একই ভুল যাতে আবারও না হয়, তার জন্য কুলবন্ত খেজরোলিয়ার হাতে নতুন বল তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। নেট থেকেই দেখিয়ে দেন তাঁকে বাইরের দিকে বল করা হোক। সুইং সামলাতে স্টেপ-আউট করে বাঁ-হাতি পেসারকে খেলার চেষ্টা করেন বিরাট। যাতে বল সুইং করার আগেই শট নিতেপারেন তিনি।
স্পিনারদের বিরুদ্ধে তাঁর আগ্রাসন একেবারেই ভিন্ন। শেষ ম্যাচে যে ৭৩ রান করে এসেছেন, তা ফুটে উঠছিল তাঁর আচরণেই। দলের প্রত্যেককে আগেই বলে দিয়েছেন, সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে। এ দিন তাঁর মনোভাব দেখে বোঝা গেল, সেই নির্দেশ নিজেই সব চেয়ে আগে পালন করতে চলেছেন তিনি। ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গ, শাহবাজ় আহমেদের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী মেজাজে দেখা গেল তাঁকে। যে স্কুপ তাঁকে কখনও মারতে দেখা যায় না, এ দিন সেই শটের মহড়াও সেরে রাখলেন। একটার পর একটা বল মারছেন হস্টেল মাঠের উদ্দেশ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রেরাও অপেক্ষায় ছিলেন বল কুড়িয়ে নেওয়ার। কিছু বল আবার ফেরতও দিচ্ছিলেন। কিছু বল আবার স্মারক হিসেবে রেখে দিচ্ছিলেন নিজেদের কাছে। এমনিতে বিরাট-দর্শন বারবার সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে তাঁর শট নেওয়া বল পেয়ে গেলে তো কথাই নেই। ক্লাস শেষের বিকেলটা তাঁদের কাছে যেন আরও উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল।
বিরাটের পাশাপাশি কে এল রাহুলের ব্যাটিং দেখতেও মুখিয়ে ছিলেন অনেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ে তাঁকেই ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। নতুন অধিনায়কের ব্যাটিং দেখার জন্য তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকলেও রাহুলকে উদ্দেশ্য করে কেউ কেউ বলেই ফেললেন, ‘‘এখানেই ভাল খেলে নাও। কাল ইডেনের বাইশ গজ ছেড়ে দিও বিরাটকেই।’’
লখনউ শিবিরের মেন্টর গৌতম গম্ভীর। তাঁর নেতৃত্বেই দু’বার আইপিএল ট্রফি জিতেছে কেকেআর। সুতরাং ইডেনকে গম্ভীরের চেয়ে ভাল অনেকেই চেনেন না। উল্টো দিকে বিরাট ইডেনে বরাবরই সফল। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির সাক্ষী এই মাঠ। এখনও পর্যন্ত শেষ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি এবং আইপিএল সেঞ্চুরিও এখানেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে হাফসেঞ্চুরিও ছিল তাঁর। বুধবারের ইডেনে আরও এক বার বিরাট-রাজ দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাঁদের প্রত্যেকের প্রার্থনা, ‘‘হতাশ কোরো না বিরাট। ইডেনে ফের চলুক তোমার রাজত্ব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy