বিরাট কোহলি। —ফাইল চিত্র।
ভারতের জার্সিতে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যারিস রউফকে মেলবোর্নে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা সোজা ছক্কাটা মেরেছিলেন। বোলারের মাথার উপর দিয়ে বল উড়ে গিয়েছিল। এতটা সোজা শট মারার ক্ষমতা আর কোনও ব্যাটারের রয়েছে কি? কিন্তু এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সেই বিরাটের স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আইপিএলে ১০ ম্যাচে ৫০০ রান করার পরেও প্রশ্ন উঠছে। কমলা টুপির মালিক হওয়ার পরেও প্রশ্ন উঠছে। বোধ হয় ব্যাটারের নাম বিরাট কোহলি বলেই প্রশ্নগুলি উঠছে।
এ বারের আইপিএলে একটি শতরান করেছেন বিরাট। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ৬৭ বলে সেই শতরান এসেছিল। শেষ পর্যন্ত সেই ইনিংসে ৭২ বলে ১১৩ রান করেছিলেন বিরাট। ২০ ওভারে তাঁর দল তুলেছিল ১৮৩ রান। রাজস্থান ১১ রান অতিরিক্ত দিয়েছিল। অর্থাৎ বিরাট বাদে বাকি ব্যাটারেরা মিলে ৪৮ বলে ৫৯ রান করেছিলেন। সমালোচনা যদিও বিরাটকে নিয়েই হয়েছিল। পাকিস্তানের হয়ে ন’টি টি-টোয়েন্টিতে মাত্র আটটি উইকেট নেওয়া পেসার জুনেইদ খান বিরাটের সমালোচনা করেছিলেন। কটাক্ষ করে বলেছিলেন, “শুভেচ্ছা বিরাট। আইপিএলের ইতিহাসে মন্থরতম শতরান করার জন্য।”
শুধু পাকিস্তান কেন, ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও তো বাদ যাচ্ছেন না। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে বিরাট শুরুতে ১৮ বলে ৩৫ রান করেছিলেন। এর পর দল উইকেট হারাতেই একটু গুটিয়ে যান তিনি। পরের ২৫ বলে ১৯ রান করেন বিরাট। সেই সময় সিঙ্গলস নিয়ে খেলছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় গাওস্কর বলেন, “সিঙ্গলস, সিঙ্গলস এবং শুধুই সিঙ্গলস নিচ্ছে বিরাট। নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে ও। বড় শট খেলতে পারছে না। সম্ভবও নয়। সিঙ্গলস নিতে নিতে হঠাৎ করে বড় শট খেলা যায় না। কিন্তু বিরাটকে বড় শট খেলতেই হবে। খেলার চেষ্টা করতে হবে অন্তত।”
বিরাটের সঙ্গে রজত পাটীদারের তুলনা করেন গাওস্কর। তিনি বলেন, “দীনেশ কার্তিক এবং মহীপাল লোমরোর এখনও ব্যাট করতে নামেনি। বিরাটের উচিত ঝুঁকি নেওয়া। পাটীদারকে দেখো। এক ওভারে তিনটি ছক্কা মেরেছে। ও তো চাইলে একটা ছক্কা মারার পর সিঙ্গল নিতে পারত। বা বলটা ছেড়ে দিতে পারত। কিন্তু ও ঝুঁকি নিয়েছে। এটাই হওয়া উচিত।” উল্লেখ্য, পাটীদার যদিও আইপিএলে সব থেকে বেশি করার তালিকায় প্রথম ২০ জনের মধ্যে নেই।
এ বারের আইপিএলে বিরাট ১০ ম্যাচে ৫০০ রান করেছেন। বিরাটের স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা উঠছে। এ বারের আইপিএলে বিরাটের স্ট্রাইক রেট ১৪৭.৪৯। গড় ৭১.৪৩। তিনটি ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন বিরাট। সমালোচনা যে তাঁর কানে গিয়েছে সেটা রবিবার বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। ৪৪ বলে ৭০ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে বিরাট বলেন, “আমার সম্পর্কে অনেকে অনেক কথাই বলে। কেউ বলে আমি দ্রুত রান করতে পারি না। কেউ বলে স্পিনের বিরুদ্ধে খেলতে পারি না। ১৫ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি। আমি এখন এই সব কথায় আর কান দিই না। নিজের কাজটা করে যাই। নিজের সম্মান আছে। সেটা বজায় রেখে খেলতে চাই। সমর্থকদের জন্য খেলতে চাই।”
এ বারের আইপিএলে বেঙ্গালুরুর অবস্থা শোচনীয়। লিগে সকলের নীচে তারা। সেই দলের হয়ে খেলতে নেমে সব থেকে বেশি রান বিরাটের। দলের বাকিরা যখন রান করতে পারছেন না, তিনি করছেন। আইপিএলে সব থেকে বেশি রান করার তালিকায় প্রথম দশে বিরাট ছাড়া বেঙ্গালুরুর আর কোনও ব্যাটার নেই। তার পরেও বিরাটের স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অবাক হয়ে যাচ্ছেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক বললেন, “আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি বিরাটের স্ট্রাইক রেট নিয়ে গাওস্কর প্রশ্ন তুলছেন দেখে। আমি ওঁর সঙ্গে এক মত নই। বিরাটের স্ট্রাইক রেট ১৫০-র কাছে। সেটাকে খারাপ বলা যায় না। বিরাট চেষ্টা করছে পুরো ২০ ওভার খেলতে। কখনও খারাপ শট খেলতে যায় না ও। ক্রিকেটীয় শট খেলেই কিন্তু পাওয়ার প্লে-তে দ্রুত রান করে বিরাট। এমন এক জন ব্যাটারের সমালোচনা করা যায় না।”
এ বারের আইপিএলে স্ট্রাইক রেট সব থেকে বেশি অভিষেক শর্মার। ৯ ম্যাচে ৩০৩ রান করা ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট ২১৪.৮৯। দ্বিতীয় স্থানে ট্রেভিস হেড। তাঁর স্ট্রাইক রেট ২১১.২৫। রয়েছেন দীনেশ কার্তিক। তিনি ১০ ম্যাচে করেছেন ২৬২ রান। কিন্তু স্ট্রাইক রেট ১৯৫.৫২। গাওস্করের প্রশংসা পাওয়া পাটীদার স্ট্রাইক রেটের তালিকায় আছেন ন’নম্বরে। ১০ ম্যাচে ২১১ রান করা পাটীদারের স্ট্রাইক রেট ১৭৫.৮৩।
বিরাট স্ট্রাইক রেটের তালিকায় প্রথম ২০ জনের মধ্যে নেই। প্রশ্ন তো উঠতেই পারে। কিন্তু স্ট্রাইক রেটের তালিকায় প্রথম ২০ জনের মধ্যে থাকা কোনও ব্যাটারই যে বিরাট কোহলি নন। তাই তাঁরা কয়েকটি ম্যাচে রান না করলে সমালোচিত হন না। বিরাটকে হতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy