রোহিত শর্মা। — ফাইল চিত্র।
রোহিত শর্মা নিজের হাতে গড়ে তুলেছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে। পাঁচ বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করেছেন। যে দলকে নিজের বাড়ি মনে করতেন, সেখানেই এখন কার্যত ব্রাত্য ভারতীয় দলের অধিনায়ক। আইপিএলের মাঝেই জানিয়ে দিয়েছেন, মুম্বইয়ের জার্সি গায়ে শেষ বছর এটাই। পরের বার হয়তো অন্য কোনও জার্সিতে দেখা যাবে রোহিতকে। প্রিয় ইডেন গার্ডেন্সেকেই হয়তো ভবিষ্যৎ হিসাবে বেছে নিতে চান। দেখে নেওয়া যাক সাতটি ঘটনা।
এক, আইপিএলের আগেই নেতৃত্ব থেকে রোহিতকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স কর্তৃপক্ষ। নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল গুজরাত টাইটান্স থেকে নিয়ে আসা হার্দিক পাণ্ড্যকে।
দুই, আইপিএলে মুম্বইয়ের প্রথম ম্যাচেই রোহিতকে ফিল্ডিং করতে পাঠানো হয়েছিল অনভ্যস্ত বাউন্ডারিতে। হার্দিকের নির্দেশ বিস্মিত করেছিল রোহিতকে। হতবাক করেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের।
তিন, আইপিএলের একটি ম্যাচের শেষে মুম্বইয়ের কর্ণধার নীতা অম্বানীর সঙ্গে বাদানুবাদ হয় রোহিতের। যে ঘটনার নীরব দর্শক ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর।
চার, আইপিএলে প্রিয় দলের টানা বিপর্যয় দেখে সাজঘরে বসে চোখের জল মুছতে দেখা গিয়েছে রোহিতকে। নিজের হাতে তৈরি দলের দুরবস্থা তাঁর মনকে ক্ষতবিক্ষত করেছে।
পাঁচ, গত কয়েকটি ম্যাচে মুম্বইয়ের প্রথম একাদশে আর জায়গা হচ্ছে না রোহিতের। তাঁকে শুধু ব্যাটিংয়ের সময় ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নামানো হচ্ছে। অভিজ্ঞ অধিনায়কের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করছেন না হার্দিক।
ছয়, কেকেআরের সহকারী কোচ অভিষেক নায়ারকে অভিমানী রোহিত বলেছেন, ‘‘সব বদলে যাচ্ছে। সে সব ওদের ব্যাপার। যতই হোক, দলটা আমার হাতে তৈরি। আমার বাড়ি এটা। এই মন্দির আমি বানিয়েছি। আমার কিছু যায়-আসে না, এটা আমার শেষ বছর।” এই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যম থেকে মুছে দিয়েছেন কেকেআর কর্তৃপক্ষ। তবে কি মাঠের খেলা শুরুর আগেই বাইরের খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে?
সাত, শনিবার বৃষ্টিতে নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর শুরু হয় কলকাতা-মুম্বই ম্যাচ। দু’দলের ক্রিকেটারেরা সাজঘরে অপেক্ষা করছিলেন। ব্যতিক্রম ছিলেন রোহিত। মুম্বইয়ের সাজঘর ছেড়ে কেকেআর শিবিরে এসে গল্প করেন তিনি। খেলা শুরুর আগে বেশ কিছু ক্ষণ সময় কাটান শ্রেয়সদের সঙ্গে। ইডেনে রোহিতের এই ছবি ভাইরাল হয়েছে।
ঘটনাক্রম থেকে পরিষ্কার মুম্বইয়ের সঙ্গে রোহিতের দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। কার্যত মানসিক বিচ্ছেদ ঘটে গিয়েছে। মুম্বই শিবিরে এখন প্রবীণ, অপ্রয়োজনীয় হয়েছেন রোহিত। সেই মুম্বই, যে শহর তাঁর শৈশব থেকে যৌবনের বন্ধু। নাগপুরে জন্ম হলেও রোহিতের সব কিছুই মুম্বইকে জড়িয়ে। তবু ওয়াংখেড়ে তাঁর প্রিয় মাঠ নয়।
আপনার প্রিয় ক্রিকেট মাঠ কী? এই প্রশ্নে রোহিতের উত্তর কখনও বদলায়নি। ইডেন গার্ডেন্স। ইডেন ক্রিকেটার রোহিতকে বারে বারে সমৃদ্ধ করেছে। রোহিতও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেননি কখনও। আগামী বছর আইপিএলে নিজের তৈরি ‘মন্দির’-এ ঠাঁই হবে না, বুঝে গিয়েছেন রোহিত। আগামী বছর আইপিএলের বড় নিলাম। ভারতীয় দলের অধিনায়ককে কি তবে নিলামে তোলা হবে? অপ্রয়োজনী প্রাক্তন অধিনায়কের নাম সঞ্চালক ঘোষণা করলে কি এক বারও আগ্রহ দেখাবেন অম্বানীরা? এই দোলাচল মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করে দিতে পারে ৩৭ বছরের ক্রিকেটারকে।
রোহিতেরা হারতে শেখেননি। একের পর এক বড় প্রতিযোগিতায় হেরেও দেশকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন করার স্বপ্ন দেখছেন। আইপিএল খেলতে গিয়ে যখন যেখানে জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, প্রয়োজনী কথা সেরে নিচ্ছেন। আলাদা করে ডেকে নিয়ে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ। যশস্বী জয়সওয়াল, রিঙ্কু সিংহ বা ঋষভ পন্থ— রিজার্ভে থাকা ক্রিকেটারেরাও তাঁর নজরে রয়েছেন। আবার শ্রেয়স আয়ারের মতো কোথাও জায়গা না পাওয়া ব্যাটারের পাশে থাকতেও ভুলছেন না।
কিন্তু বিশ্বকাপের পরেও তো ক্রিকেট থাকবে। রোহিতের ব্যাটে রান থাকবে। দায়িত্বশীল ভারত অধিনায়কের মস্তিষ্কে সে ভাবনাও বসত গড়েছে। মুম্বই অধ্যায় শেষ করে আইপিএলে নতুন ইনিংস শুরু করতে চাইছেন। জানেন, দল পেতে সমস্যা হবে না। সম্মান পাবেন কি? অন্তত মানসিক স্বস্তি? পেশাদার অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বোধহয় এ বার অন্য রকম ভাবছেন। ক্রিকেটজীবনের শেষ কয়েকটা বছর সম্মান, স্বস্তির বেশি আর কী চাওয়ার থাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ১৯ হাজার রানের মালিকের?
কেকেআর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্ভবত যোগাযোগ বৃদ্ধি করছেন রোহিত। মনের কথা বলছেন সহকারী কোচকে। শ্রেয়সদের সাজঘরে ঢুকে পড়ছেন ম্যাচের আগে। কেকেআরের অন্দরের ওম নিচ্ছেন। বুঝে নিচ্ছেন বলিউড বাদশার দলের আবহ। পারবেন তো মানিয়ে নিতে। নেতা হওয়ার ইচ্ছা হয়তো নেই। সম্মান আর স্বস্তি পেলে প্রিয় ইডেনেই ঘর বাঁধবেন ক্রিকেটজীবনের শেষ কয়েকটা বছর। আগামীর জন্য তৈরি করে দিতে পারবেন শ্রেয়সকেও। তিনিই নাকি আবার রোহিত-কোহলি পরবর্তী সময়ে ভারতীয় দলের পূর্ণ সময়ের অধিনায়ক হওয়ার অন্যতম দাবিদার।
হয়তো অপেক্ষায় আছেন রোহিত। মিচেল স্টার্কের মতো রোহিতকে পেতে কি ঝাঁপাবেন না শাহরুখ খান? জানতে চায় কলকাতা।
বলিউড বাদশাই সংলাপে বলেছিলেন, ‘‘রিশ্তে সির্ফ খুন সে নেহি হোতে... মহব্বত সে ভি বনতে হ্যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy