Advertisement
E-Paper

শতরান করে ছলছল চোখে বাবাকে ফোন, মায়ের দিনে তিন ঘণ্টা ঘুমানোর কথা মনে পড়ছে বৈভবের

আইপিএলে রেকর্ড গড়েছে বৈভব সূর্যবংশী। সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসাবে টি-টোয়েন্টিতে শতরান করেছে সে। এই সাফল্যের পরে প্রথমেই বাবা-মায়ের স্বার্থত্যাগের কথা মনে পড়ছে তার।

cricket

বৈভব সূর্যবংশী। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৫৯
Share
Save

বয়স মাত্র ১৪ বছর। যে বয়সে ক্রিকেটারেরা বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা খেলে নিজের জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করে সেই বয়সে দুনিয়া কাঁপাচ্ছে বৈভব সূর্যবংশী। ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের জায়গা তৈরি করে ফেলেছে সে। আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে মাত্র ৩৫ বলে শতরান করেছে বৈভব। সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসাবে টি-টোয়েন্টিতে শতরান করেছে সে। এই সাফল্যের পরে প্রথমেই বাবা-মায়ের স্বার্থত্যাগের কথা মনে পড়ছে তার। বাবা-মা যে পরিশ্রম করেছেন সেই কাহিনি শুনিয়েছে বৈভব।

গুজরাতের বিরুদ্ধে শতরান করে মাঠে দাঁড়িয়েই প্রথমে বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশীকে ফোন করে বৈভব। তার সঙ্গে ছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের ম্যানেজার রোমি ভিন্ডের। তিনি বৈভবের হাতে ফোন দিয়ে বলেন, “যাকে ইচ্ছা ফোন করো।” বৈভব বলে, “প্রথমেই বাবাকে ফোন করব।” সে যখন এই কথা বলছে তখন তার মুখে হাসি থাকলেও চোখ ছলছল করছে। ফোন করে প্রথমেই বাবাকে প্রণাম করে বৈভব। তার পরে রোমির সঙ্গে কথা হয় তার বাবার। রোমি বলেন, “ছেলের এই ইনিংসের পর কেমন লাগছে?” জবাবে সঞ্জীব বলেন, “আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। বিশ্বাস করতে পারছি না। আপনারা যে বৈভবের উপর ভরসা রেখেছেন তার জন্য অনেক ধন্যবাদ।” তাতে রোমি বলেন, “এই তো সবে শুরু। এখনও অনেক পথচলা বাকি। বৈভবের মা কী বলছে?” সঞ্জীব বলেন, “আমরা সকলেই অভিভূত। ফোন বেজেই চলেছে।” তা শুনে রোমি বলেন, “এখন তো গোটা সমস্তিপুর ফোন করবে।” বৈভব পুরো সময় পাশে দাঁড়িয়েছিল। শেষে সে বাবাকে জানায়, হোটেলে ফিরে আবার ফোন করবে।

ম্যাচ শেষে বাবা-মায়ের পরিশ্রমের কাহিনি শুনিয়েছে বৈভব। সে বলে, “আমি আজ যা হয়েছি তা আমার বাবা-মায়ের জন্য। আমি অনুশীলনে যাওয়ার আগে আমার মা ঘুম থেকে উঠে খাবার বানাত। মাকে অনেক ভোরে উঠতে হত। সারা দিনে মা মাত্র তিন ঘণ্টা ঘুমাত। বাবাও আমার জন্য নিজের কাজ ছেড়ে দিয়েছিল। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। কিন্তু বাবা কখনওই আমাকে ক্রিকেট ছাড়তে বলেনি। আমার পাশে থেকেছে। তার ফল আজ দেখতে পাচ্ছি। আমি যেটুকু সাফল্য পেয়েছি, তা আমার বাবা-মায়ের জন্য।”

বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা বৈভব চার বছর বয়সে বাবা সঞ্জীবের কাছে ক্রিকেট শেখা শুরু করে। সঞ্জীব পেশায় কৃষক হলেও ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা রয়েছে তাঁর। ছেলের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ দেখে তাকে ক্রিকেটার হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বাড়ির পিছনে ছোট একটু জায়গা পরিষ্কার করে ছেলেকে ক্রিকেট শেখাতে শুরু করেছিলেন। বাবার কাছে প্রাথমিক ক্রিকেট পাঠের পর ন’বছর বয়সে সমস্তিপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয় বৈভব। সেখানে আড়াই বছর শেখার পর বিজয় মার্চেন্ট ট্রফির জন্য ট্রায়ালে যায় বৈভব। ভাল পারফর্ম করলেও কম বয়সের কথা ভেবে তাকে স্ট্যান্ড বাই রেখেছিলেন বিহারের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের নির্বাচকেরা। সেখানেই চোখে পড়ে যান প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার মণীশ ওঝার। তার পর থেকে তিনিই বৈভবের কোচ।

১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিডল অর্ডার ব্যাটার বৈভবের। ২১১ দিনের জন্য রেকর্ড হয়নি তার। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সব থেকে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার নজির রয়েছে রাজপুতানার প্রাক্তন ক্রিকেটার আলিমুদ্দিনের। অজমেরের ক্রিকেটারের রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়েছিল ১৯৪২-’৪৩ মরসুমে বরোদার বিরুদ্ধে। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১২ বছর ৭৩ দিন। এর আগে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ ‘বি’ দলের হয়ে ভাল পারফরম্যান্স করেছিল বৈভব। ভাল খেলেছিল বিনু মাঁকড় ট্রফিতেও। সেই প্রতিযোগিতায় পাঁচ ম্যাচে ৪০০-র বেশি রান করে সে। গত ১ অক্টোবর বেসরকারি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিরুদ্ধে ৫৮ বলে শতরান করে আলোচনায় উঠে আসে ১৩ বছরের বৈভব। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে এটাই দ্রুততম শতরান। ইনিংসে ছিল ১৪টি চার ও চারটি ছয়। স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৭৪।

এ বারের আইপিএল নিলামের আগেই আলোচনায় উঠে এসেছিল বিহারের কিশোর ব্যাটারের নাম। নিলামের তালিকায় কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে ছিল বৈভবই। তার ন্যূনতম দাম ছিল ৩০ লাখ টাকা। নিলামের সঞ্চালিকা মল্লিকা সাগর বৈভবের নাম ঘোষণা করতেই আগ্রহ দেখান দিল্লি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের সঙ্গে টাকার যুদ্ধে নামেন রাজস্থান রয়্যালস কর্তৃপক্ষ। রাজস্থানকে নিলামে নেতৃত্ব দেন কোচ দ্রাবিড় নিজে। দিল্লির হাতে সে সময় ছিল ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ১৮ জন ক্রিকেটারকে নেওয়া ছিল তাদের। অন্য দিকে, রাজস্থানের হাতে ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাদের কেনা হয়েছিল ১৬ জন ক্রিকেটার। তুলনায় বেশি টাকা হাতে থাকায় সম্ভবত ভবিষ্যতের লগ্নি হিসাবে এগিয়ে যান রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দাম দিতে লড়াই থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় দিল্লি। বৈভবকে কেনে রাজস্থান।

আইপিএল অভিষেকে প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছিল বৈভব। নিজের আবির্ভাব বার্তা দিয়েছিল সে। প্রথম ইনিংসেই অর্ধশতরান করতে পারত বৈভব। সেই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পরে ডাগ আউটে ফেরার সময় কেঁদে ফেলেছিল বৈভব। সেটাই বুঝিয়েছিল, বড় রান করার খিদে তার মধ্যে কতটা। সেই খিদেই দেখা গেল গুজরাতের বিরুদ্ধে। রেকর্ড করে সেই বাবা-মায়ের কথাই ফিরে এল বৈভবের মুখে।

সংক্ষেপে
  • ১৮ বছরের খরা কাটিয়ে ট্রফি জিতেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। প্রথম বার আইপিএল জেতার স্বাদ পেয়েছেন বিরাট কোহলি। ফাইনালে পঞ্জাব কিংসকে ছ’রানে হারিয়েছে বেঙ্গালুরু।
  • ট্রফি জেতার পরের দিনই বেঙ্গালুরুতে ফেরেন বিরাট কোহলিরা। প্রিয় দলকে দেখার জন্য প্রচুর সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে। সেখানে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১ জনের। আহত ৫০-এরও বেশি। ঘটনাকে ঘিরে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে।
Vaibhav Suryavanshi Rajasthan Royals

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।