একের পর এক হারে বিধ্বস্ত কলকাতা নাইট রাইডার্স। —ফাইল চিত্র
একের পর এক ম্যাচে হার। এ বারের আইপিএলে এখনও পর্যন্ত ন’টি ম্যাচ খেলেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তার মধ্যে ছ’টি ম্যাচে হেরে গিয়েছে। প্লে অফে ওঠার রাস্তা কঠিন হচ্ছে। এই হারের কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে উঠে আসছে এক গভীর ক্ষত। যা শুরু হয়ে গিয়েছিল আইপিএলের নিলামেই।
গত বছর ২৩ ডিসেম্বর আইপিএলের নিলামের আসর বসেছিল। সেই মিনি নিলামের আগে শার্দূল ঠাকুর এবং লকি ফার্গুসনকে দলে নিয়েছিল কলকাতা। এই দুই ক্রিকেটারকে নিতে গিয়েই বড় অর্থ খরচ করে ফেলেছিল। কেকেআর। নিলামে তারা গিয়েছিল মাত্র ৭ কোটি ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে। সব থেকে কম টাকা নিয়ে নিলামে বসেছিল কলকাতা। কিন্তু তাদের দলে তখনও ১১ জন ক্রিকেটার নেওয়ার জায়গা ছিল। অল্প টাকা হাতে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই কোনও বড় নামের পিছনে যাওয়া সম্ভব হয়নি কেকেআরের পক্ষে। তাই নাম করা কোনও ক্রিকেটারকে দেখা যাচ্ছে না কলকাতায়।
নিলামে কেকেআর কিনেছিল নারায়ণ জগদীশন, বৈভব আরোরা, মনদীপ সিংহ, কুলওয়ান্ত খেজরোলিয়া, সুযশ শর্মার মতো ভারতীয় ক্রিকেটারকে। বিদেশিদের মধ্যে কিনেছিল ডেভিড উইজা, শাকিব আল হাসান এবং লিটন দাসকে। নিলামের আগেই দলে এসেছিলেন রহমানুল্লা গুরবাজ। ধরে রাখা হয়েছিল সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল এবং টিম সাউদিকে।
খেলতে নেমে একে একে কেকেআরের ফাঁকগুলো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ২ কোটি টাকা খরচ করে শাকিব এবং লিটনকে নিয়েছিল কেকেআর। কিন্তু শাকিব এলেনই না খেলতে। লিটন খেললেন মাত্র একটি ম্যাচ। তাঁদের যে পুরো আইপিএলে পাওয়া যাবে না সেটা আগে থেকেই জানত কেকেআর। কারণ আন্তর্জাতিক ম্যাচের ঘোষণা আগেই হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার শাকিব। তাঁকে দলে পেলে কেকেআরের যে লাভ হত সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু শাকিব এলেও তাঁকে পুরো আইপিএলে পাওয়া যেত না। তিনি না আসায় বরং জেসন রয়ের মতো এক জন ব্যাটারকে নিয়ে ওপেনারের ফাঁক কিছুটা ঢাকতে পেরেছে কেকেআর।
ওপেনার হিসাবে কেকেআর নিয়েছিল আফগানিস্তানের গুরবাজকে। নিলামের আগেই গুজরাত টাইটান্সের থেকে তুলে নিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু তার পরেও নিলামে ৫০ লক্ষ খরচ করা হল লিটনের জন্য। দু’জনেই বিদেশি, উইকেটরক্ষক এবং ওপেনার। অর্থাৎ একই ধরনের দু’জন ক্রিকেটারকে নিয়ে রাখল কলকাতা। যদিও লিটনকে পাওয়া গেল একটি মাত্র ম্যাচে। তিনি দেশে ফিরে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই।
বিদেশি ওপেনার এত জন থাকলেও ভারতীয় ওপেনার কিন্তু একা জগদীশন। যিনি উইকেটরক্ষক এবং ওপেনার। জগদীশন ছাড়া আর কোনও ভারতীয় ওপেনার কেকেআর দলে নেই। মনদীপকে ওপেনার হিসাবে খেলানো হলেও তিনি আদতে মিডল অর্ডারে খেলেন। আইপিএলে যদিও মনদীপ এমন কিছু খেলেননি যে তাঁকে নিতে ঝাঁপানোর প্রয়োজন ছিল।
এ বারের নিলামে কলকাতার অবশ্যই উচিত ছিল রাসেল এবং নারাইনের বিকল্প খুঁজে রাখা। ৩৫ বছরের অলরাউন্ডার এবং ৩৪ বছরের ‘বিস্ময়’ স্পিনারের বয়স হয়েছে। তাঁরা আর বেশি দিন খেলবেন না। এমন অবস্থায় রাসেলের বিকল্প নিতে গিয়ে কলকাতা নিল উইজাকে। তাঁর বয়স ৩৭ বছর। এটাই তাঁর শেষ আইপিএল হলে অবাক হওয়ার থাকবে না। নারাইনের বিকল্প হয়তো ছিলেন শাকিব। তাঁকে পাওয়াই গেল না।
সকলের আরও অদ্ভুত লাগছে শার্দূলকে কেকেআর ব্যবহার করছে না দেখে। নিলামের আগে যে ক্রিকেটারকে আনতে ১০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলল কলকাতা, তাঁকে খেলানো হচ্ছে না সব ম্যাচে। খেলালেও শুধু ব্যাট করানো হচ্ছে। ভারতীয় দলের খেলোয়াড় বলতে এই দলে রয়েছেন একা শার্দূল। যিনি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দলে রয়েছেন। তেমন এক জন ক্রিকেটারের উপর ভরসাই নেই কেকেআরের।
২০ লক্ষ টাকা দিয়ে অনুকূল, কুলবন্ত, হর্ষিত এবং সুযশের মতো ক্রিকেটাররা কোনও কোনও ম্যাচে খেলে দেবেন। জিতিয়েও দেবেন। কিন্তু আইপিএল জিততে হলে প্রয়োজন ধারাবাহিকতা। অনভিজ্ঞ এমন ক্রিকেটারদের থেকে সেটা পাওয়া কঠিন ছিল। তাঁরা দলকে সেই ভরসা দিতে পারেনওনি।
নিলামেই আইপিএলটা প্রায় রেখে এসেছিল কলকাতা। যে ফাঁকগুলো এখন দেখা যাচ্ছে, তা তৈরি হয়ে গিয়েছিল আইপিএল শুরুর ৭০ দিন আগে হওয়া নিলামের টেবিলে। এখন শুধু প্রকাশ পাচ্ছে। বাকি পাঁচ ম্যাচ জিতে প্লে-অফে কলকাতা উঠতেই পারে, কিন্তু এই ফাঁকগুলো না ঢাকতে পারলে দল হিসাবে ধারাবাহিকতা দেখানো কঠিন হবে তাদের পক্ষে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy