এই মরসুমে কেকেআরের অধিনায়ক নীতীশ রানা। ফাইল চিত্র।
বরাবর বলা হয়েছে, এটা সেই বীর-জ়ারা ম্যাচ। পর্দার মন জেতা জুটি, ক্রিকেট মাঠে টানটান লড়াইয়ে অবতীর্ণ। তিনি শাহরুখ খান— কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক। যাঁকে সবচেয়ে বড় চিয়ারলিডার মনে করে এসেছে নাইট ক্রিকেটারেরা। অন্য দিকে তিনি— প্রীতি জ়িন্টা টোল পড়া গালে পঞ্জাব দলের সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ।
শাহরুখের দলের অন্দরে অবশ্য এই মুহূর্তে বিনোদনের হাওয়া খেলে বেড়ানোর মতো পরিস্থিতি নেই। তাদের বরং শিরে সংক্রান্তি যে, অধিনায়ক এবং ব্যাটিংয়ে প্রধান স্তম্ভ শ্রেয়স আয়ার পুরো আইপিএল থেকে ছিটকে গিয়েছেন। এটা কত বড় ধাক্কা? বিশ্বকাপের আগে ভারতের বিরাট কোহলিকে হারানোর মতো। শ্রেয়সকে কেকেআর এনেছে গৌতম গম্ভীর নকশা অনুসরণ করে। প্রথমে দেখে মনে হবে, এ আবার কাকে আনল? কিন্তু নিঃশব্দে ট্রফি জিতিয়ে বেরিয়ে যাবে। শ্রেয়সের অনুপস্থিতি মানে দু’জন ক্রিকেটার এক ধাক্কায় ছিটকে যাওয়া। এক জন ব্যাটসম্যান শ্রেয়স। অন্য জন অধিনায়ক শ্রেয়স।
সঙ্কট এতটাই গভীর হয়ে উঠেছিল যে, কেকেআর অধিনায়ক নির্বাচনই করে উঠতে পারছিল না। শেষে নীতীশ রানাকে বাছতে হয়। রানা ঘরোয়া ক্রিকেটে দিল্লিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু আয়নার মুখোমুখি হয়ে কি বলা যাবে, ঘরোয়া ক্রিকেট আর আইপিএল এক? মরসুম শুরুর অনেক আগেই আবার কেকেআর হারিয়েছে কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে। ইংল্যান্ডের কোচ হিসেবে পাকাপাকি চাকরি নিয়ে চলে গিয়েছেন ম্যাকালাম।
ম্যাকালাম নেই, শ্রেয়স নেই। নতুন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত আর নতুন অধিনায়ক নীতীশ রানার অধীনে নাইটদের যাত্রা শুরু মোহালিতে। প্রতিপক্ষ পঞ্জাবও নতুন চেহারার। রানা নাইটদের অধিনায়ক হওয়ায় যদি কেউ ভ্রু কোঁচকান, তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে সরিয়ে শিখর ধাওয়ানকে অধিনায়ক করেছে পঞ্জাব। তিনিও কোনও মাইক ব্রিয়ারলি নন। অনিল কুম্বলেকে সরিয়ে কোচ হয়েছেন ট্রেভর বেলিস, যাঁর ক্রিকেটীয় রেকর্ড সম্পর্কে কোনও কুইজ় কনটেস্টে জিজ্ঞেস করা হলে কেউ বলতেই পারবেন না! নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে ৫৮টি ম্যাচ খেলেছেন। কুম্বলের ৬১৯ টেস্ট উইকেট, ৩৩৭ ওয়ান ডে উইকেটের পাশে কোথায়!
মোহালিতে শুক্রবার বৃষ্টি হয়েছে, শনিবারও আবহাওয়া ভোগাতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। আগে হলে দলগুলি আগের রাত থেকে ভাবতে বসে যেত, বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়ায় দলে কী কী পরিবর্তন করা দরকার। এখন আর সে সবের দরকার নেই। টস হয়ে যাওয়ার পরে অধিনায়কেরা প্রথম একাদশ জানাতে পারছেন। দু’দলের অধিনায়কই তাই দু’টো প্রথম একাদশ নিয়ে টস করতে যাবেন। আগে ব্যাট করলে এক রকম দল, পরে ব্যাট করলে আর এক রকম। টসের বিধানের পরে যা সিদ্ধান্ত হবে, সেই অনুযায়ী তালিকা তুলে দেওয়া হবে।
দু’দলেরই চিন্তা, কয়েক জন প্রধান ক্রিকেটারের অনুপস্থিতি। পঞ্জাবের নেই লিয়াম লিভিংস্টোন এবং কাগিসো রাবাডা। দু’জনই ম্যাচ জেতানোর মতো ক্রিকেটার। এক জন ব্যাট হাতে, অন্য জন বল হাতে। কেকেআর তেমনই শ্রেয়স ছাড়াও পাচ্ছে না বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটার শাকিব-আল-হাসান এবং লিটন দাসকে।
নাইটদের প্রধান সমস্যা ওপেনিং। শেষ আইপিএলে ঘন-ঘন দল পাল্টানো বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। ছটি আলাদা ওপেনিং জুটি দেখা গিয়েছিল। এ বারে শুরু থেকে স্থায়িত্বের খোঁজ করা দরকার। বেঙ্কটেশ আয়ারকে ওপেনার হিসেবেই দেখা উচিত, কিন্তু তাঁর সঙ্গী কে হবেন? লিটন দাস থাকলে তাঁকে খেলানোর কথা নিশ্চয়ই ভাবা হত। তিনি নেই বলে আফগানিস্তানের রহমতুল্লা গুরবাজ়কে দেখা যেতে পারে বেঙ্কটেশের সঙ্গী হিসেবে। অথবা, নতুন উদয় ঘটা ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’-এর কথা ভাবা যেতে পারে? নিয়মে আবার বলা আছে, চার জন বিদেশিই খেলিয়ে দিলে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসেবে ভারতীয়কে নামাতে হবে। কিন্তু কোনও দল তিন জন বিদেশিকে খেলালে, বিদেশিকেও এই ভূমিকায় নামানো যেতে পারে। কেকেআর-সহ অনেক দলই এই পথ অনুসরণ করতে পারে। প্রথম একাদশে তিন জন বিদেশি রেখে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসেবে বিদেশি ব্যাটসম্যান বা বোলার নামিয়ে ফায়দা তুলতে পারে। যাদের ভাঁড়ারে দেশি ক্রিকেটার তেমন নেই, তারা তিন বিদেশির এইচাল দিতে পারে।
নাইটদের দলের দুই সেরা অস্ত্র সেই আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারাইন। পঞ্জাব রেকর্ড অর্থে ইংল্যান্ডের স্যাম কারেনকে কিনেছে। শনিবার দুপুরের ম্যাচে তাই সেরা আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে রাসেল বনাম কারেন দ্বৈরথ। অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের টক্কর। নাইটদের মাঝের দিকের ব্যাটিং সামলাতে হবে ভারতীয়দের। নীতীশ রানা, রিঙ্কু সিংহ, মনদীপ সিংহের মতো তরুণদের, যাঁরা আন্তর্তাজিক ক্রিকেট থেকে দূরে। আবার তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে অলরাউন্ড দক্ষতা। রাসেলের সঙ্গে এ বারে রয়েছেন শার্দূল ঠাকুর। সঙ্গে আছেন বেঙ্কটশ আয়ার এবং নারাইনও।
তেমনই স্পিন বিভাগে মাস্টার নারাইনের সঙ্গে ছাত্র বরুণ চক্রবর্তী কতটা কার্যকরী হয়ে উঠতে পারবেন, সেটাও দেখার। বরুণ লেগস্পিন, অফস্পিন-সহ সব রকম বলই করতে পারতেন। মজাদার জীবন তাঁর। সিনেমায় নেমেছেন, ডিরেক্টর হওয়ার চেষ্টা করেছেন, স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। আবার সব ছেড়ে দিয়ে ছুটলেন ক্রিকেট খেলতে। এখন ফের অগ্নিপরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে তাঁর ক্রিকেট জীবন। গত বার আইপিএলে দল থেকে বাদ পড়ে যান, জাতীয় নির্বাচকেরা তাঁরসম্পর্কে আগ্রহ হারিয়েছেন।
শাহরুখ খানের সেই সংলাপটা বরং আউরাতে পারেন বরুণ। ‘জো নহী হো সকতা ওহি তো করনা হ্যায়’। ফিল্মের নাম? কেন, চক দে ইন্ডিয়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy