লড়াই: আইপিএলে পাঁচ ম্যাচে ১৫৪ রান ঋদ্ধিমানের। ফাইল চিত্র
আইপিএল শুরু হওয়ার আগেই ঝড় বয়ে গিয়েছিল ঋদ্ধিমান সাহার জীবনে। ভারতীয় টেস্ট দল থেকে কোনও কারণ না দেখিয়েই ছেঁটে ফেলা হয় তাঁকে। কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলে দিয়েছিলেন, ‘‘তোমাকে আর প্রয়োজন নেই।’’ ঠিক তার পরেই এক টক-শো সঞ্চালক তাঁকে হুমকি দেন সাক্ষাৎকার না দেওয়ার জন্য। গণমাধ্যমে যা তুলে ধরেন ঋদ্ধি। যার ফলে ভারতীয় বোর্ড থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। অক্রিকেটীয় সমস্ত মানসিক চিন্তার মধ্যেও আইপিএলের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি ছিল না বাংলার লড়াকু উইকেটকিপার-ব্যাটারের। যার ফল পাচ্ছে এ বারের আইপিএলে গুজরাত টাইটান্স দল।
চলতি আইপিএলে পাঁচ ম্যাচে ১৫৪ রান রয়েছে ঋদ্ধির ঝুলিতে। স্ট্রাইক রেট ১২৮.৩৩। সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ৩৮ বলে তাঁর ৬৮ রানের ইনিংস যেন উত্তর দিয়েছিল সমালোচকদের। যাঁরা বলছিলেন, ভারতীয় ক্রিকেটকে আর কিছুই দেওয়ার নেই ঋদ্ধির। তাঁরাও নিশ্চয়ই নড়েচড়ে বসেছেন এই ইনিংসের পরে। ঋদ্ধিমান নিজে অবশ্য নির্বিকার। দ্বিধাহীন ভাবেই বলে দিলেন, ‘‘আমার নতুন ভাবে কিছু প্রমাণ করার নেই। কিছু প্রমাণ করার কথা ভেবে কখনওই খেলি না। উত্তর দেওয়ার কথাও ভাবি না। মাঠে নামি জেতার উদ্দেশ্যে। দল কী ভাবে উপকৃত হবে, সেই চিন্তায় ঘোরে মাথায়। গুজরাতের জয়ের নেপথ্যে আমার অবদান কতটা রয়েছে, সেটাই আসল।’’
কথা বলার সময় ঋদ্ধির চোখ-মুখের ভঙ্গিই বলে দিতে পারে, বর্তমানে তিনি কতটা স্বস্তিতে রয়েছেন। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ৬৮ রানের ইনিংসের পরে গণমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘ফুরিয়ে যাইনি।’’ সে রকম আগ্রাসন যদিও দেখা যায়নি বুধবারের সাংবাদিক বৈঠকে। বরাবরের মতোই শান্ত, নম্র, ভদ্র ঋদ্ধিমান বুঝিয়ে দিলেন, জবাবটা মুখে নয়, ব্যাটেই দেওয়া উচিত।
গুজরাত টাইটান্স দল তাঁর জীবনকে নতুন পখ দেখিয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বরাবরই ওপেন করতে পছন্দ করতেন ঋদ্ধি। শেষ পাঁচ ম্যাচে ঋদ্ধির কাঁধেই ওপেনিংয়ের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন হার্দিক পাণ্ড্য ও গ্যারি কার্স্টেন। যা খুবই উপভোগ করছেন তারকা উইকেটকিপার। বলছিলেন, ‘‘এত দিন ধারাবাহিক ভাবে কোনও দলে ওপেন করিনি। মাঝের সারিতেও ব্যাট করেছি, নীচের দিকেও খেলেছি। তবে পাওয়ার প্লে-তে ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে সমস্যা হয় না। আমার খেলার ধরনের সঙ্গে মিলে যায়। ওপেনিংয়ে আমি এই ভাবেই ব্যাট করি। বরাবর এই জায়গাতেই ব্যাট করতে চাই। এ ভাবেই দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার
চেষ্টা করব।’’
গুজরাত অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্য থেকে কোচ গ্যারি কার্স্টেন দলের মধ্যে ফুরফুরে পরিবেশ তৈরি করেছেন। প্রত্যেককে বলা আছে, কার কী দায়িত্ব। সেই অনুযায়ী নিজেদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন প্রত্যেকে। কঠিন পরিস্থিতিতেও জিততে সমস্যা হচ্ছে না। ঋদ্ধিও বলছিলেন, ‘‘এতগুলো দলে শেষ ১৫ বছর ধরে আইপিএলে খেলেছি। কোথাও এ রকম ফুরফুরে ও চাপমু্ক্ত পরিবেশ দেখিনি। চেন্নাই সুপার কিংসে থাকার সময় অনেকটা এ রকম মেজাজের ড্রেসিংরুম দেখেছিলাম। তার পরে গুজরাতে সবচেয়ে ভাল পরিবেশ পেলাম। প্রত্যেকে জানে, নিজেদের দায়িত্ব কী। হার্দিক প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে বুঝিয়ে দিয়েছে, কী চাওয়া হচ্ছে তার থেকে। অসুবিধে হওয়ার কোনও জায়গাই নেই।’’
ঋদ্ধিকে নিয়ে অনেক সময়ই বলা হয়, টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটের আদর্শ নন। কিন্তু তিনি কোনও ভাবেই সেই ব্যাখ্যা মানতে চান না। মনে করেন, একজন ব্যাটারকে ঠিক জায়গায় নামানো হলে তার থেকে সেরা ইনিংসটাই পাওয়া যায়। বলছিলেন, ‘‘মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, ক্রিস গেল অথবা আন্দ্রে রাসেলের মতো বড় চেহারা আমার নেই। ওদের মতো শট খেলতে পারব, তা ভাবাও ভুল। তবে আমার যতটা দক্ষতা আছে, তার মধ্যেই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। পাওয়ার প্লেতে আমার স্ট্রাইক রেট গেল ও গিলক্রিস্টের চেয়ে বেশি জানতে পারলাম। সেটা হয়েছে আমার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্যেই।’’
এত বড় একটি প্রতিযোগিতায় খেলতে আসার আগে ঋদ্ধির জীবনে যে কঠিন সময় এসেছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে আসা কতটা কঠিন ছিল? উত্তরে গুজরাত টাইটান্সের তারকা বলে দিলেন, ‘‘যতটা সম্ভব মাথা খালি রাখার চেষ্টা করি। আগে কী হয়েছে সেটা ছেড়েই দিলাম। বর্তমানে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি। ম্যাচের আগে কোনও বোলারকে নিয়ে বাড়তি চিন্তা করি না। এটাই সাফল্যের চাবিকাঠি।’’
ঋদ্ধিমানকে হারানো সহজ নয়। যত বারই তাঁকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, জবাব দিয়েছে তাঁর ব্যাট। আগামী দিনেও সেই অস্ত্র আবারও ঝলসে উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy