বিরাট কোহলী। ফাইল ছবি
আইপিএলে তিনি একেবারেই ছন্দ নেই। ব্যাটে রানও আসছে না। এ অবস্থায় অনেকেই তাঁকে বিরতি নিতে বলছেন। বিরাট কোহলী নিজেও বিরতি নিতে রাজি। পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট ভাবে জানালেন, ব্যাটে রান না থাকলেও তিনি নিজের জীবনের সবচেয়ে ভাল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরে এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা যে তাঁর প্রধান লক্ষ্য, সেটাও জানিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।
গুজরাত ম্যাচের আগে পর্যন্ত চলতি আইপিএলে ১৩ ম্যাচে ২৩৬ রান করেছেন কোহলী। মাত্র একটি অর্ধশতরান রয়েছে। গড় মাত্র ১৯.৬৭। শুধু তাই নয়, তিনটি ম্যাচে প্রথম বলে আউট হয়েছেন তিনি। অনেক সমালোচনাও ভেসে এসেছে তাঁর দিকে।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ওয়েব সাইটে কোহলী বলেছেন, “অনেকেই আমাকে বিরতি নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু যিনি সবচেয়ে জোর দিয়ে সেই কথা বলেছেন, তিনি রবি শাস্ত্রী। কারণ, আমি কখন কী পরিস্থিতিতে থাকি সেটা উনি ছ’সাত বছর ধরে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। যে পরিমাণে ক্রিকেট আমি খেলেছি, যে উত্থান-পতন আমার জীবনে এসেছে, আইপিএল-সহ তিন ফরম্যাটে ১০-১১ বছর একটানা খেলার যে চাপ সেটা উনি বুঝতে পারেন।”
কোহলী স্বীকার করে নিয়েছেন, বিরতি নিলে মানসিক ভাবে অনেক তরতাজা হয়ে নামতে পারবেন তিনি, যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার ক্ষেত্রে দরকার। বলেছেন, “সবাইকেই কোনও না কোনও সময় বিশ্রামের ব্যাপারে ভাবতে হয়। নিজের ১০০ শতাংশ দিতে না পারলে কোনও কাজ করা উচিত নয়। আমি সারা জীবন এটাই বিশ্বাস করে এসেছি। ঠিক কখন বিরতি নেওয়া দরকার সেটা আমাকেই ঠিক করতে হবে। নিজেকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে পুনরুজ্জীবিত করতে গেলে একটা বিরতি দরকার। শারীরিক ভাবে ততটাও নয়, কারণ খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকলে এমনিতেই সে দিকে খেয়াল রাখি। কিন্তু মানসিক ভাবে উজ্জীবিত হওয়াটা খুব দরকার। যে কাজই করি না কেন, তার জন্য উৎসাহিত হওয়া উচিত। জোর করে করতে হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি যেন না আসে।”
কেন বিরতি নেওয়া দরকার সেটা ব্যাখ্যা করে কোহলী বলেছেন, “বিশ্রাম নেওয়ার মধ্যে কোনও ভুল নেই। যে পরিমাণ ক্রিকেট আমরা খেলি এবং যে পরিমাণ ক্রিকেট আমরা খেলে এসেছি, তাতে এটা দরকার। ক্রিকেট এবং বিশ্রাম, এই দুটোর মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখা উচিত। রাহুল (দ্রাবিড়) ভাই এবং দল পরিচালন সমিতির সঙ্গে অবশ্যই এটা নিয়ে আলোচনা করব।”
আইপিএলে নিজের খারাপ ছন্দকে ২০১৪ সালের ইংল্যান্ড সফরের ব্যর্থতার সঙ্গে তুলনা করেছেন কোহলী। বলেছেন, “এই সময়টাকে যে তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে চাইছি এমনটা কিন্তু নয়। ইংল্যান্ড সফরের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েছি এবং সেটা পেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। এখন কোনও নির্দিষ্ট জিনিস বেছে নিয়ে বলতে পারব না যে আমার এখানে সমস্যা রয়েছে। কারণ, অনেক সময় ভাল ব্যাটিং করলে মনে হয় ছন্দ ফিরে পেয়েছি। ইংল্যান্ডে কিন্তু সেটা হয়নি। বুঝতে পারছিলাম যে আমি ভাল ব্যাটিং করতে পারছি না। তাই তখন আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। এখন আমি জানি যে কোন জায়গায় রয়েছি। কী ভাবে পরিস্থিতি বা বিভিন্ন বোলারের মোকাবিলা করতে হয় সেটা বুঝতে না পারলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত দিন খেলতে পারতাম না।”
কোহলীর সংযোজন, “এখনকার পরিস্থিতি আমি সহজেই বুঝতে পারছি এবং এখান থেকে শিক্ষা নিচ্ছি। আমার কাছে গোটা ব্যাপারটাই একটা প্রক্রিয়া। যতক্ষণ জানি যে ঠিক কাজ করছি, ততক্ষণ সেটাই করে যাব। জানি আমার জীবনে এখন উত্থান-পতনের সময় চলছে। এই সময়টা পেরিয়ে গেলে বুঝতে পারব যে কতটা ধারাবাহিক হতে পারি। আমি জানি যে দলের হয়ে অবদান রাখার ক্ষমতা এখনও আমার মধ্যে রয়েছে। এই ইচ্ছেশক্তিটাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।”
কোহলী জানিয়েছেন, জীবনের এই পর্যায়ে এসে কারওর কাছে কিছু প্রমাণ করার দায় নেই তাঁর। যতটুকু খেলবেন, ক্রিকেট এবং মানুষ হিসেবে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করবেন। সব ধরনের অভিজ্ঞতাই তিনি পেতে চান। বলেছেন, “অনেক আশীর্বাদ পেয়েছি গত কয়েক বছরে। মানুষের ভালবাসা, অভিনন্দন পেয়েছি। আগে কখনও এই দিকটা ভেবে দেখিনি। কারণ তখন নিজের খেলা নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলাম।”
চলতি বছরে নিজের লক্ষ্যও স্থির করে নিয়েছেন কোহলী। বলেছেন, “এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে চাই। এটাই আমার অনুপ্রেরণা। তার জন্য ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্রাম নিতে হবে। নিজেকে তরতাজা রাখতে হবে। এক বার মানসিক ভাবে ঠিকঠাক জায়গায় চলে গেলে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy