ঋষভ পন্থ এবং অভীক চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
১৪ বছর আগের দুর্ঘটনা খেলোয়াড় জীবন কেড়ে নিয়েছিল অভীক চৌধুরীর। এখন তিনি কোচ হিসাবে ক্রিকেটে ফিরেছেন। ১৫ মাস আগে ঋষভ পন্থের দুর্ঘটনার পর আনন্দবাজার অনলাইনকে বলছিলেন, “পন্থের গাড়িটা দেখে আমার নিজের গাড়িটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।” সেই পন্থ শনিবার মাঠে ফিরলেন। একেবারে আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের নেতা হয়ে। অভীক এখনও হুইলচেয়ারে। তবে তিনি খুশি। কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন পন্থের মনের মধ্যে কী চলছে। বললেন, “এই অনুভূতিটাই আলাদা।”
শনিবার বিকেল-সন্ধ্যার ঘণ্টা চারেক পন্থের প্রত্যাবর্তনের দিকে তাকিয়ে গোটা ভারত। তাকিয়ে অভীকও। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “পন্থ একমাত্র বুঝতে পারছে মাঠে ফেরার আবেগটা। ১৪ মাস পর আবার ম্যাচ খেলতে নামছে। এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে।” কোথাও কি আফসোস রয়েছে অভীকের মনে? পন্থের মতো চিকিৎসা পেলে কি তিনিও ফিরতে পারতেন? অভীকের জবাব, “আমার কোনও আফসোস নেই। ২০০৯ সালে আমার যখন দুর্ঘটনা হয়, তখন বাংলার ক্রিকেট সংস্থা, রাজ্য সরকার এবং আমার অফিস সব রকম সাহায্য করেছিল। আমি সেই সময় দাঁড়িয়ে সেরা চিকিৎসাটাই পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার এমন জায়গায় (শিরদাঁড়া) লেগেছিল যে, কোনও ভাবেই আর হাঁটা সম্ভব ছিল না। পন্থ ভাগ্যবান যে, ওর চোট আমার মতো নয়। তাই সুস্থ হয়ে ফিরতে পেরেছে। আর ও ভারতীয় দলের হয়ে খেলছিল। বোর্ড তো সাহায্য করবেই। সেটা ওর প্রাপ্য। তবে আমার কোনও আফসোস নেই।”
শনিবার পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে দিল্লি ক্যাপিটালস। সেই দলের অধিনায়ক পন্থ। প্রথম ম্যাচ থেকেই খেলবেন। দুর্ঘটনার আগে পন্থের আগ্রাসী ব্যাটিং তাঁর পরিচয় তৈরি করেছিল। অভীকের মতে প্রত্যাবর্তনের পর পন্থ আরও আগ্রাসী হয়ে যাবে। অভীক বললেন, “পন্থের মনোবল এখন আরও বেড়ে যাবে। এমন একটা দুর্ঘটনার পর ফিরতে হলে মনের জোর দরকার। পন্থ আরও আগ্রাসী হয়ে যাবে। রানের খিদে এখন আরও বেড়ে যাবে।”
১৮ অক্টোবর, ২০০৯। প্রাক্তন বান্ধবী এবং তাঁর বোনেদের নিয়ে বাইপাসের উপর গাড়ি চালাচ্ছিলেন অভীক। সকালেই ইডেনে বাংলার অনুশীলন ম্যাচ খেলেছিলেন। পরের দিন বাংলার হয়ে খেলতে ধানবাদ যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব বদলে দিল একটা দুর্ঘটনা। রুবি মোড়ের কাছে সেই দিন দুপুরে ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন অভীক। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেছিলেন, “পন্থের ভাগ্য ভাল ও বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। দুর্ঘটনার পর আমারও জ্ঞান ছিল, কিন্তু বেরোনোর মতো অবস্থা ছিল না। পরে হাসপাতালে জ্ঞান হারাই।”
৩০ ডিসেম্বর, ২০২২। ভোরে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন পন্থ। সেই সময় ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন তিনি। গাড়িতে আগুন লেগে যায়। পন্থ উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলেন। অভীক বললেন, “গাড়িটার ছবি দেখেই আমার নিজের গাড়িটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। একই রকম ভাবে তুবড়ে গিয়েছিল। পন্থের গাড়িতে যদিও আগুন লেগে যায়। আমারটায় আগুন ধরেনি, কিন্তু তুবড়ে গিয়েছিল ওই রকম ভাবে।” দুর্ঘটনার পর কাছের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অভীকদের। তিনি বললেন, “সঙ্গে সঙ্গে কাছের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই আমার শিরদাঁড়ার অস্ত্রোপচার হয়।” ২০ দিন সেই হাসপাতালে ছিলেন। পরে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে।
প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন অভীক। কিন্তু শেষ হয়ে গিয়েছে ক্রিকেট খেলা। বাংলার হয়ে তত দিনে রঞ্জি অভিষেক হয়ে গিয়েছিল তাঁর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলে ফেলেছিলেন সাতটি ম্যাচ। ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে খেলেছিলেন ১৩টি ম্যাচ। অলরাউন্ডার অভীককে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল বাংলা। কিন্তু সব শেষ করে দিয়েছিল ওই দুর্ঘটনা। কোচ হিসাবে ক্রিকেটে ফেরেন অভীক। এ বারের রঞ্জিতে বাংলা দলকে উদ্বুদ্ধ করতে ইডেনে গিয়েছিলেন তিনি। বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল অভীককে নিয়ে গিয়েছিলেন দলের সঙ্গে কথা বলাতে।
অভীক ক্রিকেটার হিসাবে ফিরতে না পারলেও পন্থ পেরেছেন। শনিবার পঞ্জাবের বিরুদ্ধে খেলতে নামলেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক। ওই দুর্ঘটনায় পন্থের মাথায়, পিঠে, হাঁটুতে চোট লেগেছিল। চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়েছিল, পন্থের মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডে আঘাত লাগেনি। যা স্বস্তি দিয়েছিল সকলকে। তবে পন্থের মুখের চোট, শরীরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ক্ষত এবং ছড়ে যাওয়ার জায়গায় প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়। অস্ত্রোপচার করা হয় হাঁটুতেও। প্রথম প্রথম ক্রাচ নিয়ে হাঁটতেন পন্থ। পরে দেখা যায় ক্রাচ ছেড়ে দিতে। এর পর হাঁটা, সেখান থেকে দৌড় এবং দৌড়তে দৌড়তে আইপিএলের আগে সুস্থ হয়ে ওঠা। বোর্ড জানিয়ে দেয় পন্থ আইপিএল খেলার জন্য সুস্থ। দিল্লিও ঘোষণা করে দেয় অধিনায়ক পন্থেই আস্থা রাখছে তারা। পন্থের এই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা দেখে অবাক হয়ে যান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। দিল্লি ক্যাপিটালসের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট বলেন, “পন্থের উন্নতি দেখে আমি বিস্মিত। আশা করছি সামনের মরসুমটা ওর জন্য ভাল হবে। ওই রকম আঘাত পাওয়ার পর ফিরে আসা সহজ নয়। ওকে ফিরে আসতে দেখে খুব ভাল লাগছে। শুধু দিল্লি ক্যাপিটালস নয়, দিল্লির রঞ্জি দল এবং ভারতীয় দলও উপকৃত হবে পন্থ ক্রিকেটে ফেরায়।”
আর এত দিন পর মাঠে ফেরা প্রসঙ্গে পন্থ বলেছেন, ‘‘আমি কিছুটা চিন্তিত, কিছুটা উত্তেজিত এবং কিছুটা চাপেও রয়েছি। আবার পেশাদার ক্রিকেটে ফিরতে পেরে আমি খুশি। শনিবার প্রথম ম্যাচ খেলার অপেক্ষায় রয়েছি। মাঠে নামার জন্য অপেক্ষা করতে পারছি না।’’
সব অপেক্ষার শেষ। দিল্লির হয়ে টস করতে নামলেন পন্থ। পার হলেন প্রত্যাবর্তনের প্রথম ধাপ। এ বার বিশ্বকাপের মঞ্চে পন্থকে ভারতীয় জার্সিতে দেখতে পাওয়ার অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy